শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),০৭ অক্টোবর : তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থ সমবায় সমিতিতে জমা রেখেছিলেন এলাকার প্রায় দুই শতাধিক নিন্মবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষ । কিন্তু এখন নিজেদের সঞ্চিত সেই টাকাই ফেরত পেতে তাঁদের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে । অভিযোগ,নিজের অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা তুলতে গেলে সমবায় থেকে ২০০-৫০০ টাকা করে ধরিয়ে দিচ্ছে । এদিকে দুর্গোৎসবের মুখেই টাকা না পেয়ে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছেন ওই সমস্ত লোকজন । বৃহস্পতিবার তাঁরা সমবায় অফিসে এসে তুমুল বিক্ষোভ দেখান । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-১ ব্লকের গন্তার অঞ্চলের অন্তর্গত গোপে-গন্তার সমবায় সমিতিতে (Gope-Gantar U.C.C.S Ltd) । বিক্ষোভকারীরা সমবায়ের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন । পাশাপাশি দুর্গোৎসবের মধ্যেই জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানান ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,মেমারি-১ ব্লকের গন্তার,শঙ্করপুর, দেবপুরসহ ৮-১০ টি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ ‘গোপ গন্তার ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার সোসাইটি’তে টাকা জমা রেখেছিলেন । কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে জমানো টাকা তাঁরা তুলতে পারছেন না । টাকা তুলতে গেলেই ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফের আসার জন্য বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ । সমবায়ের তরফ থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট দিনে গেলে ফের অল্পসল্প টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । এদিন প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহক গোপে-গন্তার সমবায় সমিতিতে এসে তুমুল বিক্ষোভ দেখান । যদিও সমবায়ের তরফ থেকে গ্রাহকদের কোনও আশ্বাস দেওয়া হয়নি । ফলে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় বিক্ষোভকারীদের ।
সমবায়ের গ্রাহক মান্তা ক্ষেত্রপাল নামে এক মহিলা বলেন, ‘সমবায়ে আমি ৭৫ হাজার টাকা জমা রেখেছি । টাকা তুলতে এসে ঘুরে যাচ্ছি । সমবায় থেকে কখনও ২০০ টাকা,কখনও ৫০০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে । বিগত ৩-৪ বছর ধরে সমবায়ে টাকা তুলতে এসে ঘুরে যাচ্ছি ।’ তিনি বলেন, ‘আমার বউমা অসুস্থ । হাসপাতালে ভর্তি আছে । অনেক টাকার দরকার । সমবায় থেকে আজ আসার জন্য বলা হয়েছিল । কিন্তু আজও ঘুরে যেতে হচ্ছে ।’
সাজিনা গ্রামের বাসিন্দা জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের দূর্গাপূজো কমিটির তরফ থেকে গন্তার সমবায়ে ৯৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে । কিন্তু আমাদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না । এদিকে পূজো চলে এলো । কিভাবে পূজো করবো ?’
শম্ভুনাথ কর্মকার নামে অপর এক গ্রাহকের অভিযোগ, ‘আমার ৩০ হাজার টাকা সমবায়ে জমা ছিল । টাকা তুলতে এলে ৫০০ টাকা করে ধরিয়ে দিত । এখনও আমি ৫-৬ হাজার টাকা পাবো । পূজোর মুখে টাকা না পাওয়ায় খুব বিপাকে পড়েছি ।’
কিন্তু সমবায়ের কেন এই হাল ? এই বিষয়ে ‘গোপ গন্তার ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার সোসাইটির কর্মী লালমোহন ঘোষের কথায়, ‘সমবায় থেকে অনেককে ঋণ দেওয়া হয়েছে । সেই টাকা সুদ আসল বাবদ যা সংগ্রহ হচ্ছে সেটাই গ্রাহকদের ২০০-৫০০ টাকা করে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে ।’
যদিও সমবায়ের গ্রাহকদের অভিযোগ,সমবায় থেকে অনেক মানুষকেই বিনা কোনও ডকুমেন্টেসেই ঋণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে । বর্তমানে ঋণের পরিমান প্রায় ৫ কোটি টাকার মত । ঋণ গ্রহীতারা আসল তো দূর, ঠিক মত সুদের টাকাই পরিশোধ করছে না । যার জেরে এখন আমানতকারীরা ভুগছেন । জমা টাকা না পেয়ে টাকা তছরুপসহ সমবায়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন সমবায় সমিতির জেলার এআরসিএস (রেঞ্জ ১) সত্যজিৎ মণ্ডল ।।