জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর,২৯ সেপ্টেম্বর : “আয় রে ছুটে আয়,পুজোর গন্ধ এসেছে/ ঢ্যাম্ কুড়কুড়, ঢ্যাম্ কুড়াকুড় বাদ্যি বেজেছে/গাছে শিউলি ফুটেছে কালো ভোমরা জুটেছে”- মনে পড়ে ছোটবেলা থেকে সকলেই এই গানটি শুনে বড় হয়েছেন। এই গানটি শুনলে ও গানের মধ্যে দিয়েই পুজো পুজো গন্ধ এসে যায়। ঠিক তেমনি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো যার জন্য দীর্ঘ এক বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন আপামর বাঙালি। পুজো মানে ভোরবেলা শিউলি ফুলের সুগন্ধ, পুজো মানে শিশিরের জমা বিন্দু, পূজো মানেই সাদা কাশফুলের বনে কাশ গাছের মাথা দুলানি, পুজো মানে আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ, পুজো মানেই বাঙালির মনে আবেগের শিহরণ, পুজো মানেই মহালয়ার সকালে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে দেবীর চণ্ডীপাঠ, পুজো মানেই মহালয়ার সকালে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে নদীতে তর্পণ, যা থেকে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে শুরু হয় মাতৃপক্ষের সূচনা এবং এই মহালয়ার পুণ্য তিথিতেই দেবী দুর্গার চক্ষুদান হয় মৃৎশিল্পীদের হাতে। এই সব কিছু মিলিয়ে আপামর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা শুরু হয়ে গেছে । আজ বৃহস্পতিবার মহাচতুর্থী, সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন জায়গাতেও দুর্গাপুজোর শেষ প্রস্তুতি চলছে চরম ব্যস্ততার সাথে।
মূলত, হাতেগোনা আর আর দুই দিন রয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের। তার আগেই সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন কুমোরটুলি থেকে শুরু করে বারোয়ারি ক্লাবের পুজো, বনেদি বাড়ীর দুর্গা প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা চলছে জোর কদমে। ইতিমধ্যেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গো উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে ।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন কুমোরটুলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাবের পুজো মণ্ডপ ও বনেদি বাড়ি এমনকি সার্বজনীন পুজো মন্দিরগুলিতে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে তুঙ্গে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মহালয়ার দিন ভার্চুয়ালি সারা রাজ্যের ২৫৩ টি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেছেন । এর সাথে সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মোট দশটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আর তা থেকে দুর্গাপূজার শুভ সূচনা হয়ে গেছে জেলা জুড়ে।
জেলার সদর শহর বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর, কুশমন্ডি, হরিরামপুর, হিলি তপন, কুমারগঞ্জ সহ আরো অন্যান্য জায়গায় আজ চতুর্থীর দিনে চলছে দেবী দুর্গা প্রতিমা তৈরি সহ মন্ডপ সাজসজ্জার শেষ প্রস্তুতি। দিনরাত এক করে শিল্পী ও কারিগররা বিভিন্ন ক্লাবের, মন্দিরের, বারোয়ারি ও বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে । ফুরসৎ নেই মৃৎশিল্পিদের । দম ফেলার সময় নেই পূজো উদ্যোক্তাদের ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। এই জেলায় রয়েছে আন্তর্জাতিক হিলি সীমান্ত। জেলার সদর শহর বালুরঘাট এবং দ্বিতীয় ব্যবসার প্রতিষ্ঠিত শহর গঙ্গারামপুর । এই গঙ্গারামপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়িক উপকরণের কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে বারংবার, যা দেশ ও বিদেশের বাজারেও সুনাম রয়েছে। সর্বশেষে বলাই বাহুল্য, সারা রাজ্যের আপামর বাঙালির পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষেরা দূর্গাপুজোর আজ চতুর্থীর দিনে আনন্দে মেতে উঠছে । এর সাথে সাথে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন পুজো মন্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৃৎশিল্পী ও কারিগরদের দক্ষ ও নিপুন হাতে দুর্গা প্রতিমা তৈরির শেষ প্রস্তুতি ও মন্ডপ সাজসজ্জার শেষ প্রস্তুতি চলছে তুঙ্গে ।।