শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২৪ মে : বৃহস্পতিবার জামাইষষ্ঠী । এই দিনটায় জামাই আদরে কোনো কার্পণ্য করেন না শ্বশুর শাশুড়িরা । পুরনো হোক বা নতুন,জামাইকে রকমারি ফল,মিষ্টি, মাছ ও মাংস খাইয়ে খুশি হন তাঁরা । বিশেষ করে আম, কাঁঠাল আর লিচুর চাহিদা তুঙ্গে থাকে জামাইষষ্ঠীর দিন । এদিকে এই দিনটার জন্য মুখিয়ে থাকেন ফল ব্যবসায়ীরা । কারন এই দিনেই ফল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন তারা । কিন্তু রকমারি আমের জন্য বিখ্যাত পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীতে এবারের আমের বাজারে ভাটা পড়েছে । আজ বুধবার গাছ পাকা টাটকা আম পাইকারি হল মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি দরে । বাকি আম মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি করলেন চাষিরা । ফলে লাভের আশায় থাকা আম চাষিদের কার্যত কপালে হাত পড়ে গেছে ।
পূর্বস্থলীর আম চাষি মুর্তজা শেখ বলেন,’এবারে আমের বাজার খুবই খারাপ । ঝড়ে পড়া হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১২ টাকা করে । গাছ পাকা আম ১৪-১৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ।
জামাইষষ্ঠীতেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো হবে না বলে মনে হচ্ছে । তার উপর প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টির কারনে প্রচুর আম নষ্ট হচ্ছে । এতে আমাদের খুবই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ।’
পূর্বস্থলীর জাহান্নগরের আম চাষী উত্তম বিশ্বাস বলেন,’জামাইষষ্ঠীর বাজার ধরতে আমরা আম বিক্রি করতে এসে দেখছি বাজার খুবই খারাপ । গাছ পাকা আম ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দাম পাচ্ছি । ঝড়ে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে । আমার ১০-১২ টা বাগান চুক্তি নেওয়া আছে । কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এবারে আর লাভের মুখ দেখতে পাবো না ।’
পূর্বস্থলীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শুনুন 👇
জানা গেছে,বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত ব্যবধানে কালবৈশাখীর ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে । মঙ্গলবার ও তার দিন সাতেক আগে মারাত্মক ঝড় হয় পূর্বস্থলী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় । ঝড়ে প্রচুর কাঁচা পাকা আম গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে । ঝড়ে পড়া আম নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন চাষিরা । পূর্বস্থলীর পারুলিয়ার আড়তদার তপন চক্রবর্তী ওরফে টিসি বলেন,’ঝড়ের কারনে এমনিতে বাজারে প্রচুর পাকা আমের জোগান রয়েছে । সেই তুলনায় চাহিদা নেই । সেই কারনে আমের দামও কম ।’ তিনি জানান, এদিন এক নম্বর আম ১৫-১৬ টাকা কেজি দরে পাইকারি হয়েছে । যেখানে অনান্য আম পাইকারি হয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে ।
সুস্বাদু আমের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর । এলাকায় রয়েছে প্রচুর আম গাছের বাগান । হিমসাগর,ল্যাঙড়া,ফজলি, পিয়ারাফুলি,হলদেমণি থেকে শুরু করে বহু প্রজাতির আম গাছ রয়েছে ওই সমস্ত বাগানগুলিতে । রাজ্য সরকারের আম উৎসবে পূর্বস্থলীর হিমসাগর আম সেরা নির্বাচিত হয়েছে । বীরভূমের সরকারি আম উৎসবেও পূর্বস্থলীর হিমসাগর,ল্যাংড়া, আম্রপলী আম সেরার পুরস্কার পেয়েছে । পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও রাজ্যের অনান্য জেলাগুলির পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও পূর্বস্থলীর আমের কদর রয়েছে । এলাকায় আম উৎসবও হয় । পূর্বস্থলীর প্রচুর মানুষের জীবন জীবিকা চলে ওই সমস্ত আম বাগানগুলির উপর । বাৎসরিক চুক্তিতে আমের বাগানের ঠিকা নেন আম চাষিরা । মুকুল ধরা থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যন্ত পরিচর্যার যাবতীয় খরচখরচা বহন করতে হয় চাষিদের । ফলে চুক্তি ভিত্তিক আম বাগান নিতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করতে হয় তাঁদের । এবারে পাকা আমের বাজারে ভাটা পড়ায় সারা বছর কিভাবে সংসার খরচ চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন আম চাষিরা ।।