প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ আগষ্ট : পুলিশও নয় ,সিআইডিও নয়।বিচারককে হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনায় আশ্চর্যজনক ভাবে সিবিআই তদন্তেই আস্থা জ্ঞাপন করলেন গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অনুব্রত মণ্ডল।যা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও কার্যত অবাক করে দিয়েছে । বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রতর এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে অনেকটা যেন গোলকধাঁধায় পড়ে গিয়েছেন বিরোধীরা ।
অনুব্রত মণ্ডলের চার দিনের সিবিআই হেপাজতের মেয়াদ বুধবার শেষ হয়।তাই সিবিআই অফিসাররা এদিন সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া প্রহরায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে কলকাতা থেকে আসানসোলের উদ্দেশ্যে রওনা হন।পথে বেলা
আনুমানিক ১০টা নাগাদ পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার আমড়া এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে থামে অনুব্রতকে নিয়ে চলা গাড়ি । সিআরপিএফের একেবারে ঘেরাটোপে অনুব্রত মণ্ডল ওই দোকানের ভিতরে ঢোকেন। ওই সময়ে অনুব্রতর গাড়ি সহ জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ওই দোকান সহ গোটা এলাকাটি সিআরপিএফ জওয়ানরা ঘিরে রাখে। গাড়ি থেকে নেমে অনুব্রত সটান ঢুকে যান ওই খাবারের দোকানের কেবিনে। তবে অনুব্রত বাবু সেখানে ল্যাংচা বা কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার খান নি।দু’টি ডালপুরি ও লিকার চা খেয়ে তিনি প্রাতঃরাশ সারেন।দোকানের কর্মীরা অনুব্রত মণ্ডলকে সেরামিকের কাপ ডিসে লিকার চা দেন। তিনি ওখানে আধঘন্টা ছিলেন।ততক্ষণ জওয়ানরা ওই খাবারের দোকানের ভিতরে কার্যত মাছি পর্যন্ত গলতে দেয়নি ।
ল্যাংচার দোকানে ঢুকেও কেষ্ট বাবুর ল্যাংচা না
খাওয়া ও লিকার চা খাওয়ার কারণ অনুব্রত মণ্ডলই সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করে দেন । তিনি বলেন ,চিকিৎসকের নির্দেশে মেনে তিনি বরাবরই দুধ চা বা কফি এড়িয়ে চলেন।সুগার থাকায় ল্যাংচা খাননি বলে তিনি জানান। দলীয় সূত্রে খবর অনুষ্ঠানে, বাড়িতে বা পার্টি অফিসে সব সময়েই লিকার চা খান অনুব্রত বাবু।তবে বিকালে বোলপুরের দলীয় কার্যালয়ে থাকলে তিনি নাকি লিকার চায়ের সঙ্গে গরম সিঙারা খেতে পছন্দ করতেন।
এদিকে এদিন শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানে
অনুব্রত কে সিবিআই অফিসারদের ঢোকার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বহু মানুষ ওই দোকানের সামনে উপস্থিত হন।পথচলতি মানুষজন ও গাড়িও থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ।প্রাতঃরাশ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর জওয়ানরা যখন অনুব্রত মণ্ডল কে নিয়ে খাবারের দোকান থেকে বাইরে বের হন তখন সেখানে শাসক দলের কর্মীরা জয় বাংলা শ্লোগান দেয়হওয়া শুরু করেন । অনুব্রত তাদের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে গাড়িতে গিয়ে বসেন।এই সময়েই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত মণ্ডল বলেন,’আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারককে হুমকি চিঠি দেওয়ার ঘটনা তিনি সিবিআই তদন্ত চান ।এদিন বিচারককে সেই কথাই তিনি জানাবেন বলে জানান।এরপর সিবিআইয়ের গাড়ি শক্তিগড় থেকে সোজা রওনা দেয় আসানসোলের সিবিআই আদালতের উদ্দেশ্যে।
বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ সভাপতি
সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,“এই রাজ্যের বিরোধী দলের কেউ পুলিশ বা সিআইডি কে ভরসা করে না। বিশ্বাসও করেনা । কিন্তু হঠাৎ করে তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার সভপতি অনুব্রত মণ্ডলের কি করে সিবিআই এর প্রতি আস্থা তৈরি হল সেটাই আশ্চর্য্যের । বিষয়টা গোলকধাঁধার মতন লাগছে বলে বিজেপি নেতা সৌম্যরাজ বাবু মন্তব্য করেন।।
পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,’যাঁরা চক্রান্ত করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিবিআই ও ইডি কে কাজে লাগিয়েছে তাঁদের চক্রান্ত ধিরে ধিরে সামনে আসছে। তাই অনুব্রত যখনই বিচারককে হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করে বসেছেন ওমনি গোলকধাঁধায় পড়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা ।’।