পরনে ভারতীয় হিন্দু নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক লাল পাড়ের শাড়ি । কপালে লাল টিপ । সিঁথি থেকে কপাল অব্দি নেমে এসেছে স্বর্ণের টিকলি । দু’হাতে বালা ও লাল তাগা । দুপাশের টেবিলে জ্বলছে ১০৮ টি করে মোমবাতি । দুহাতে ধরা পূজার পিতলের রেকাবিতে জ্বলছে প্রদীপ । দেবী কালীর উদ্দেশ্যে আরতির করতে করতে নিজের গাওয়া “ওঁ জয় জগদীশ হরে” গান ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজিয়ে বিশ্বের সনাতনীদের শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা জানালেন মার্কিন গায়িকা মেরি মিলবেন (Mary Millben)।
দীবাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মেরি মিলবেন লিখেছেন, “১ যোহন ১:৫, ‘ঈশ্বর আলো, এবং তাঁর মধ্যে কোন অন্ধকার নেই।’ দীপাবলি অন্ধকারের উপরে আলোকে কেন্দ্রীভূত করে। যদি আমরা ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা দাবি করি, তাহলে আমাদের এমন জীবনযাপন করতে হবে যা তাঁর আলোকে প্রতিফলিত করে — সত্য, প্রেম এবং ধার্মিকতার জীবন। এই দীপাবলিতে, আসুন আমরা ঈশ্বরের প্রকৃতি এবং তাঁর আলো গ্রহণ করি!” আগামী সোমবার, ২০ অক্টোবর পুনরায় সম্প্রচারিত হতে যাওয়া মেরির পূর্ণাঙ্গ পরিবেশনা ‘ওম জয় জগদীশ হরে’ উপভোগ করুন !”
কে মেরি মিলবেন ?
মেরি জোরি মিলবেন একজন আফ্রিকান- আমেরিকান গায়িকা,অভিনেত্রী এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। ৪৩ বর্ষীয়া মিলবেনের জন্ম ওকলাহোমা সিটিতে। পড়াশোনা পুটনাম সিটি হাই স্কুল ও ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে । তিনি রেভারেন্ড মাইকেল মিলবেনের কন্যা। তার মা, আলথিয়া মিলবেন একজন ধ্রুপদী প্রশিক্ষিত সোপ্রানো এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত পেন্টেকস্টাল সঙ্গীত যাজক। মিলবেন পাঁচ বছর বয়সে ওকলাহোমা সিটির ওয়াইল্ডউড খ্রিস্টান চার্চে শিশুদের গায়কদলের সাথে গান গাওয়া শুরু করেন। তার বাবা-মায়ের ১৯৮৭ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় এবং মিলবেন তার মায়ের কাছে বড় হন। মিলবেন ২০০৪ সালে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলা ছাত্র সংগঠনের সভাপতি এবং ২০০৩ সালে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলা ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০০৫ সালে, মিলবেন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের গ্রীষ্মকালীন হোয়াইট হাউস ইন্টার্ন হিসেবে এবং ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি বুশের জন্য হোয়াইট হাউসের রাষ্ট্রপতির নিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছিলেন। ২০০৮ সালের হোয়াইট হাউস হলিডে সিজনের জন্য প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি লরা বুশ মিলবেনকে অতিথি একক শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, যা তার পেশাগত কর্মজীবনের সূচনা করেছিল।
২০২৩ সালের জুন মাসে, রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময়, মিলবেন রোনাল্ড রিগ্যান ভবনে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ২০২৩ সালের মণিপুর সহিংসতার পর , মিলবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমর্থনে টুইট করেন এবং মোদীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ভারতীয় বিরোধী দলের সমালোচনা করেন। মিলিবেন ভারতীয় সংসদে পাস হওয়া নাগরিক সংশোধনী বিলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং এটিকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি তার শ্রদ্ধার জন্য পরিচিত আফ্রিকান-আমেরিকান গায়িকা এবং অভিনেত্রী মোদীর প্রশংসা করে, তাকে “সেরা নেতা” বলে অভিহিত করেন। তবে একজন খ্রিস্টান বংশভূত হয়েও ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতির প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা তার গানের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় । প্রায় প্রতিটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে তাকে নিজস্ব ভঙ্গিতে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাতে দেখা যায় ।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর চলা হিন্দু নরসংহারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন মেরি মিলবেন৷ তিনি বাংলাদেশী হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে টুইট করেছিলেন,’ওঠো,সংগঠিত হও,নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নাও ।’ মেরি মিলবেন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘বাংলাদেশে নিরীহ মানুষের হত্যাযজ্ঞ আমাদের সকলের নিন্দা জানাতে হবে। হিন্দু, খ্রিস্টান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় স্থাপনার বিরুদ্ধে হিংসা ও গণহত্যা অমানবিক। আমেরিকা, আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমরা বিশ্বের কাছে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতীক। এইভাবে, আমাদের অবশ্যই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের রক্ষা করতে হবে। আমার হিন্দু, খ্রিস্টান, এবং সংখ্যালঘু ভাই ও বোনদের কাছে, আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করছি। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করার জন্য আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। বাংলাদেশ, উগ্র চরমপন্থীদের সহিংস হামলাকে ভয় পায় না। উঠে দাঁড়াও। ওঠো, সংগঠিত করো এবং নিজের সম্প্রদায়ের অধিকার ফিরিয়ে নাও। তোমার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নাও!’