প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ ফেব্রুয়ারি : অপরের দয়ায় মাথা গোঁজার একফালি আশ্রয় টুকু কোন রকমে মিলেছে ।তবে দু’মুঠো ভাত খেয়ে পেট ভরানোর মতো চাল টুকুর সংস্থান নেই।ভিক্ষা করে যে টুকু চাল ও আলু যোগাড় হয় সেটাই ভরসা।এমন দৈনদশার কারণে একপ্রকার অর্ধাহার অনাহারেই নাবালক নাতি ও নাতনি কে নিয়ে দিন কাটছে পূর্ব বর্ধমানের গলসির পারাজ গ্রামে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীন বৃদ্ধা আনোয়ারা বিবির । কেউ তাঁদের দিকে মুখ ফিরিয়েও তাকান না ।তাই ভাগ্যের এই পরিহাসকে মেনে নিয়েই বৃদ্ধা তাঁর নাতনি আমিনা খাতুন ও নাতি প্রেম মণ্ডলকে সঙ্গে দিন গুজরান করে চলেছেন।কবে সুদিন ফিরবে তা তাঁদের সকলেই কাছেই অজানা ।
বৃদ্ধা আনোয়ার বিবি জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামীর বাড়ি গলসিতে। কিন্তু সেখানে বসবাস করার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি।তার মধ্যে নাতনী জামাই সুকুর মণ্ডল ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । জামাই মারা যাবার পর কিছুদিন যেতে না যেতে নাতনী লিমি বেগমও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাদের পুত্র সন্তান প্রেম তখন মাত্র ৬ মাসের বাচ্চা। আনোয়ারা বিবি বলেন ,এই পরিস্থিতিতে দুই নাবালক নাতি নাতনি প্রেম ও আমিনাকে নিয়ে তিনি বর্ধমানের দুবরাজের ডাঙাপাড়ার বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন । কিন্তু ভাড়া মেটাতে না পারায় তাঁদের ভাড়া বাড়ি ছাড়তে হয়।মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে এরপর গত চার মাস আগে ফিরে আসেন গলসির পারাজ গ্রামের কুমোর পুকুর পাড়াতে থাকা স্বামীর ভিটায়। কিন্তু সেখানেও ঠাঁই মেলে না।বিতাড়িত হতে হয় । তাই এলাকার এক সহৃদয় ব্যক্তির আশ্রয়ে খুব কষ্টে তাঁদের এখন দিন যাপন করতে হচ্ছে। মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই মিললেও কোন উপার্জন তাঁদের নেই । রেশন কার্ড , আধার কার্ডও নেই । চোখের জল মুছতে মুছতে বৃদ্ধা বলেন,’দু’মুঠো খাবারের সংস্থানের জন্য ভিক্ষাই তাঁর একমাত্র ভরসা । বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত শরীরে সব দিন ভিক্ষা করতে বেরুতেও পারেন না ।তাই এক প্রকার অর্ধাহারে অনাহারেই নাবালক নাতি ও নাতনিকে নিয়ে তাঁকে দিন কাটাতে হচ্ছে । অপরের অশ্রয়ও যে কোন দিন ছাড়তে হতে পারে। তখন কি করবেন,কোথায় যাবেন !’ তারও কোন কুল কিনারা করতে পাচ্ছেন না বলে বৃদ্ধা আনোয়ারা বিবি এদিন জানান ।
বৃদ্ধা আনোয়ারা বিবির এমন করুণ জীবন কাহিনী শুনে যারপরনাই ব্যাথিত হন গলসি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস । তিনি বলেন,’বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানকে বলে দিয়েছি ।’ আগামী সোমবার বৃদ্ধার কাছে তিনি নিজেও যাবেন বলে জানান ।।