প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জুলাই : ওঝা ঝাড়ফুঁক করে দিলেই শারীরিক অসুস্থতা থেকে নাবালিকা মেয়ে মুক্তি পেয়ে যাবে ! এমন অন্ধবিশ্বাসে ভর করেই নাবালিকাকে সঙ্গে নিয়ে ওঝার দ্বারস্থ হয়েছিল মা । কিন্তু অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া তো দূরের কথা,উল্টে ওঝার যৌন লালসার শিকার হয়ে চোখের জল মুছতে মুছতেই বাড়ি ফিরতে হল নাবালিকে । এমনই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার উলোরা গ্রামে । এমন কুকীর্তর নায়ক গুনধর ওঝা সুদেব মালিক অবশ্য পার পায়নি ।ঝাড়ফুকের নাম অসুস্থ নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে মেমারি থানার পুলিশ ওঝা সুদেব মালিককে গ্রেপ্তার করেছে । অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করেছে নাবালিকার পরিজন এ এলাকাবাসী ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে , বছর ১৩ বয়সী নাবালিকার বাড়ি মেমারি থানার গেঁড়াঘাট গ্রামে । বেশ কিছুদিন যাবৎ সে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে।নাবালিকার পরিবার এখনও কুসংস্কার মুক্ত হতে পারেনি । তাই ওঝা ঝাড়ফুঁক করেদিলেই মেয়ের শারীরিক অসুস্থতা সেরে যাবে এমনটা মনে করে নেন নাবালিকার মা । সেই মতো শুক্রবার বিকালে অসুস্থ নাবালিকা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা উলরা গ্রামের সায়েরপাড় নিবাসী ওঝা সুদেব মালিকের কাছে যান।ওঝা সুদেব নাবালিকাকে দেখে তাঁকে সুস্থ কেরে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঝাড়ফুঁক করার জন্যে ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করেদেন। আধঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ওঝা ওই ঘরের দরজা না খোলায় নাবালিকার মায়ের দুঃশ্চিন্তা বাড়ে । তিনি ওঝার ঘরের দরজা ধাক্কা দেওয়া শুরূ করেন। ওঝা ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর ঘরের ভিতরে ঢুকে নাবালিকাকে কাঁদতে দেখেন মা । বিদ্ধস্ত অবস্থায় ওঝা সুদেবের ঘরথেকে বেরিয়ে নাবালিকা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর মাকে জানায় ঝাড়ফুঁকের নামে ওঝা তাঁকে ঘরে ঢুকিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করেছে ।
মেয়ের মুখ থেকে এই ঘটনা শোনার পরেই নাবালিকাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁর মা পরিবারের লোকজনকে ওঝার কুকীর্তির কথা
জানান । মেয়ের চিকিৎসা করিয়ে ওইদিনই ঘটনা সবিস্তার জানিয়ে নাবালিকার মা মেমারি থানায় ওঝার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ।অভিযোগের ভিত্তিতে ’পকসো‘ অ্যাক্টের ৪ ধারার ‘মামলা রুজু করে পুলিশ রাতেই ওঝা সুদেব মালিক কে গ্রেপ্তার করে । পাশাপাশি পুলিশ নাবালিকা ও ধৃতর পরণের পোষাকও বাজেয়াপ্ত করে ।মেডিকেল পরীক্ষার জন্যে পুলিশ এরপর ওঝাকে মেমারি হাসপাতালে নিয়ে যায় । সেখানকার চিকিৎসক ধৃত ওঝাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক স্টেট মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
ধৃত ওঝাকে শনিবার পুলিশ পেশ করে বর্ধমান আদালতে ।তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে ৫ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চাওয়ার পাশাপাশি নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানোর জন্যে আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ধৃতকে বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠিয়ে আগামী সোমবার তাঁকে বর্ধমানে ’পকসো’ আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন ।।