প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ ফেব্রুয়ারী : গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া লেখা নীল বাতি যুক্ত দামি চারচাকা গাড়িতে চড়ে ঘুরছিল রেলের ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলি চক্রের লোকজন। তাঁদের সঙ্গে আবার ছিল আরপিএফের পোশাক পরা এক আগ্নেআস্ত্র ধারি।তবে এত ভেক ধরেও শেষ রক্ষা হয় নি।পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ নীল বাতি যুক্ত ওই চারচাকা গাড়িতে সওয়ার থাকা চার যুবকেই গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের দাবি ধৃতদের কাছ থেকে রেলের “নকল“ ভিজিটিং কার্ড,প্যাড,পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং দু’রাউণ্ড কার্তুজ সহ একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি সহ নীলবাতি যুক্ত গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া লেখা গাড়িটিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। এই চক্রের জাল কতদূর ছড়ানো রয়েছে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম সন্দীপ বিশ্বাস ওরফে রাজা, শুভম রায়, কবিরুল আলি ও আকাশ ধর। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থানার বাদুবাজার এলাকায় শুভমের বাড়ি। বাকিদের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনারই মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ রবিবার চার ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান সিজেএম আদালতে । চাকরি বিলি চক্রের বাকিদের হদিশ পেতে তদন্তকারী অফিসার এদিন ধৃতদের ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় । ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ধৃতদের ১০দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে পালসিট টোলপ্লাজায় গন্ডগোলের খবর পেয়ে নেমারি থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছয় । সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখে, একটি স্করপিও গাড়িতে চালক সহ চারজন বসে রয়েছে। গাড়িটির সামনের কাচে ইংরেজিতে গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া লেখা। পিছনে আবার হিন্দিতে ’ভারত সরকারের সেবায়’ লেখা রয়েছে।পুলিশকে দেখে আরপিএফের পোশাক পরে একজন গাড়ি থেকে নেমে আসে। সে নিজেকে রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের নিরাপত্তারক্ষী বলে পুলিশের কাছে পরিচয় দেয় । একই সঙ্গে ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানায় গাড়িতে ’রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোের্ডর আধিকারিক ও দুই গ্রুপ ডি স্টাফ“ রয়েছে।
এরপরেই গাড়ি থেকে সন্দীপ বিশ্বাস নেমে আসে। সে নিজেকে রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক ও রিক্রুটমেন্ট বোর্ডর সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে । তখন পুলিশ তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চায়। তারা তা দেখায়। তাদের কথাবার্তা এবং পরিচয়পত্র দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ গাড়িতে তল্লাশি চালায়। তখনই গাড়ি থেকে সন্দীপের নাম লেখা থাকা অশোকস্তম্ভের ছাপ দেওয়া রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডর কয়েকটি ফাঁকা প্যাড উদ্ধার হয়। এছাড়াও দু’টি ভিজিটিং কার্ডও মেলে সন্দীপের কাছ থেকে। এসব দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও গাড় হয়। তাদের থানায় নিয়ে গিয়ে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই চারজন যে রেলের ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলির সঙ্গে জড়িত তা একপ্রকার ধরেই নেয় পুলিশ ।এরপরে জাল নথিপত্র তৈরি করে প্রতারণার মামলা রুজু করে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।পুলিশের দাবি , চক্রটি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেলের ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলি করে বহু বেকার ছেলে–মেয়েকে ঠকিয়েছে ।।