এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০২ নভেম্বর : চাকরির বিনিময়ে তরুনীকে সহবাসের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠল দাঁইহাট পুরসভার তৃণমুল কাউন্সিলার শিশির মণ্ডলের বিরুদ্ধে । তরুনীর সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । তাতে একজন মেয়ের বয়সী তরুনীকে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে চেয়ারম্যানকে । এদিকে ভাইরাল অডিও ভিডিওকে কেন্দ্র করে তুমুল আলোড়ন পরে গেছে এলাকায় । অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শিশির মণ্ডল এটিকে চক্রান্ত বলে দাবি করলেও ঘরে ও বাইরে এনিয়ে তাঁকে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে । বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় । বিজেপি এটাকে ‘তৃণমূলের সংস্কৃতি’ বলে কটাক্ষ করেছে ।
তবে দাঁইহাট পুরসভার চেয়ারম্যানেট সঙ্গে তরুনীর কথোপকথনের অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এইদিন’। ভাইরাল অডিওতে কথোপকথনের একাংশ তুলে ধরা হল :-
তরুনী : কাকু ফোন করেছিলেন আপনি ? আপনাকে মেসেজ করেছিলাম আমি,যদি কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেন ।
শিশির মণ্ডল : কোন জায়গায় বাড়ি তোর ?
তরুনী ঠিকানা বলার পর চেয়ারম্যান : তুই কি করছিস এখন ?
তরুনী : আমি ২০২০ সালে স্নাতক করেছি । এই মুহুর্তে কিছু করছি না ।
শিশির মণ্ডল : কোন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিস ?
তরুনী : আমি ২০১৭ তে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি।
শিশির মণ্ডল : তোর দেশের বাড়ি কোথায়?
তরুনী ঠিকানা বললে শিশির মণ্ডল : বাবার নাম কি ? তরুনী বাবার নাম বলার পর চেয়ারম্যান ফের জিজ্ঞাসা করেন,’তোর ভাই না দাদা আছে একটা?’
তরুনী : না না আমি একা ।
শিশির মণ্ডল : অ,বাবা কি করেন ?
তরুনী : বাবা চাষবাস করেন ।
শিশির মণ্ডল : অ আচ্ছা । যেটা বললাম ওটা ২-৩ টে পাঠাতো ।
তরুনী : ছবি ?
শিশির মণ্ডল : বুঝতে পারছিস না ?
তরুনী : আচ্ছা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি৷ আর কিছু লাগবে কি? মানে কিছু ডকুমেন্টস ?
শিশির মণ্ডল : না না ডকুমেন্টস এই মুহুর্তে লাগবে না । ছবি পাঠা তারপরে আমি দেখছি ।
দ্বিতীয় কল :-
তরুনী : কাকু আপনি ফোন করতে বলেছিলেন ।
শিশির মণ্ডল : অ, একটা সিভি দিয়ে যাস কালকে ।
তরুনী : বেশ ঠিক আছে ।
তৃতীয় কল :-
তরুনী : হ্যালো
শিশির মণ্ডল : কোথায় আছিস? ( জড়ানো গলায়)
তরুনী : আমি মাসির বাড়িতে আছি৷
শিশির মণ্ডল : একা আছিস তো?
তরুনী : হ্যাঁ, আমি একা আছি ।
শিশির মণ্ডল : আমার বউয়ের নামও নূপুর,জানিস তো?
তরুনী : হ্যা । জানতাম না ।
শিশির মণ্ডল : বউকে যেমন চু##(ছাপার অযোগ্য ভাষা) তোকেও তেমনি চু## ইচ্ছে করছে ।
তরুনী না শুনতে পাওয়ার কথা বললে চেয়ারম্যান বলেন : কালকে যখন একদম একা থাকবি তখন আমায় ফোন করবি ।
তরুনী : বুঝতে পারলাম না । একটু ভালো করে বললে ভালো হয় ।
চেয়ারম্যান : ফোন করিস ।
তরুনী : কোন সময় ফোন করব।
চেয়ারম্যান : যখন তুই একা হবি একদম ।
তরুনী : মানে আমি একা থাকলে তখন ফোন করব?
চেয়ারম্যান : একদম,আশেপাশে যেন কেউ না থাকে
চতুর্থ কল :-
চেয়ারম্যান : কোথায় তুই ?
তরুনী : আমি তো রুমে আছি।
চেয়ারম্যান : বলছি,স্টেশনের পাশে একটা ঐশ্বর্য লজ আছে ।
তরুনী : আছে ।
এরপর চেয়ারম্যানের কথামত অল্প সময় ভিডিও কল হয় দু’জনের মধ্যে । পরের অডিও কলে :
চেয়ারম্যান : কি পড়ে আছিস?
তরুনী : কেন কাকু ?
চেয়ারম্যান : প্যান্টি পড়েছিস?
তরুনী : কাকু কি বলছেন আপনি আমি বুঝতে পারছি না কিছু ।
চেয়ারম্যান : বলছি প্যান্টি পড়েছিস? কিছুই বুঝতে পারিসনা বা #(অশ্রাব্য ভাষা) । ৩০ বছর বয়স হল, বা#(অশ্রাব্য ভাষা) বুঝিস?
তরুনী : কাকু,আমি আপনার মেয়ের বয়সী , এইসব কথা বলছেন আমাকে ?
পরের কল :-
তরুনী : হ্যাঁ, কাকু বলুন ।
চেয়ারম্যান : চলছি চো&#* (ছাপার অযোগ্য ভাষা) কেমন লাগে তোর?
চেয়ারম্যানের গলা শুনে মদ্যপ অবস্থায় বলে মনে হয় । তার এই নোংরা কথা শুনে তরুনী নির্বাক হয়ে যান । তখন চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩০ বছর বয়স হল চো&#* (ছাপার অযোগ্য ভাষা) করেছিস না করিস নি ? হ্যাঁ বা না? তারপরে কথা বলবো ।
তরুনী : না,কাকু । বলছি, আমার কথাটা একটু শুনবেন কাকু?
তরুনীর এই কথায় কান না দিয়ে চেয়ারম্যান ফের জিজ্ঞাসা করেন, বলছি, ৩০ বছর বয়স হল চো&#*(ছাপার অযোগ্য ভাষা) করেছ না করো নি ? এটা বলো আগে তারপর কথা বলব ।
তরুনী এই নোংরা কথা শোনার পর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, না কাকু ।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতে শোনা যায় চেয়ারম্যানকে । তরুনী বেশ কয়েকবার হ্যালো বলার পর ফের একই নোংরা প্রশ্ন করেন চেয়ারম্যান । উত্তরে তরুনী না বললে চেয়ারম্যান তরুনীকে আর্থিক প্রলোভন দেখান । তখন তরুনী তাঁকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার ফের অনুরোধ জানান ।
এর উত্তর না দিয়ে চেয়ারম্যান তরুনীকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি সেক্স করেছেন কিনা । উত্তরে তরুনী ‘না কাকু’ বলেন । তখন চেয়ারম্যান সহবাস করার জন্য তরুনীকে ‘সোমবার’ সময় দেন । এজন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে । অত্যন্ত নোংরা ভাষায় মেয়ের বয়সী তরুনীকে এই প্রস্তাব দিতে শোনা যায় চেয়ারম্যানকে ।
মেয়েটি তখন বলেন, ‘কাকু,আপনি তো দাঁইহাটের চেয়ারম্যান , অনেক ক্ষমতা আপনার । আমার চাকরিটা একটু করেদিন কাকু । টাকা পয়সা আমার লাগবে না ।
চেয়ারম্যান : আমায় আগে খুশি করে দে, সব দেবো তোকে । চাকরি করে ক’টাকা মাইনে পাবি? সোমবার যাবো ?
এরপরেও তরুনীর সঙ্গে চেয়ারম্যান শিশির মণ্ডলের দীর্ঘক্ষণ কথা হয় । তরুনীকে তিনি সহবাসের জন্য বারবার প্রস্তাব দেন । চাকরির তাগিদে দরিদ্র পরিবারের ওই মেয়েটি শিশির মণ্ডলের নোংরা কথাবার্তার প্রতিবাদ না করে চুপচাপ সহ্য করে যান । চেয়ারম্যানের এই নোংরা আচরণের তীব্র নিন্দা করেছেন বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলার ইনচার্জ কৃষ্ণ ঘোষ বলেন,’চাকরি প্রত্যাশী একজন মেয়ের বয়সী তরুনীর সঙ্গে এই আচরণ কখনই মেনে নেওয়া যায় না । তবে তৃণমূলের কাছে এটা নতুন কিছু নয় । এটা ওদের সংস্কৃতি । মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তো ধর্ষিতাদের বয়স হিসাবে একটা রেট বেঁধে দিয়েছিলেন । তাঁর দলের একজন পৌরপিতা যদি এই কাজ করে থাকেন তাহলে অবাক হওয়ার কি আছে ? যারা রক্ষক তারই আজ ভক্ষক । দাঁইহাটবাসীর ভাবা উচিত কাকে তাঁরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন ।’
কাটোয়া-২ ব্লকের বিজেপির ৪৩ নম্বর জেডপির সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষের কথায়,’দোষটা ওনার(
চেয়ারম্যান শিশির মণ্ডল) নয় । তৃণমূলের ওপর থেকে নিচে পর্যন্ত গোটা তৃণমূল দলটা এই সমস্যায় জর্জরিত । প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্বপনবাবু,মদনবাবু,সৌগতবাবু সবাই এই কঠিন রোগে আক্রান্ত ।’।