এইদিন ওয়েবডেস্ক,পিয়ংইয়ং,০৪ মার্চ : মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে উত্তর কোরিয়া । খাদ্যাভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি । বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য সরবরাহ ‘মানুষের চাহিদার অনেক কম’। দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য ঘাটতির কারণে অনাহারে ব্যাপক মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । বর্তমানে দেশটি ১৯৯০-এর দুর্ভিক্ষের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে । যা “অর্ডুয়াস মার্চ” নামে পরিচিত । সেই সময় তীব্র অনাহারে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন চলে গিয়েছিল । যা মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ৩ থেকে ৫ শতাংশ । পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স-এর গবেষণা বিশ্লেষক লুকাস রেঙ্গিফো-কেলারের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন রিপোর্ট করেছে,’বিভিন্ন বাণিজ্য তথ্য, স্যাটেলাইট ইমেজ, এবং জাতিসংঘ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের মূল্যায়ন অনুসারে, দেশের খাদ্য সরবরাহ ন্যূনতম মানবিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের নিচে নেমে গেছে ।
অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিশেষজ্ঞরা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং পিয়ংইয়ংকেই দায়ী করেছেন । জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বে করোনা মহমারি শুরুর আগেই উত্তর কোরিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছিল । মহামারি শুরুর পর দীর্ঘ তিন বছর সীমান্ত বন্ধ রাখা এবং বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে । এছাড়া নিজেদের দেশের অর্থ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও সামরিক খাতে খরচ করার কারণেও দেশটি খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
মানবাধিকার সংস্থার বরিষ্ঠ গবেষক লিনা উন বলেছেন,’করোনার ভয়ে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে সীমান্তে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি করেছিলেন কিম জং উন । যাতায়াত এবং বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যার মধ্যে বৈধ পথে আসা পণ্যও রয়েছে ।’
প্রসঙ্গত,উত্তর কোরিয়ায় ২০২২ সালে ৫ কোটি ৬০ লাখ কেজি গম এবং ৫৩ হাজার ৫৩ হাজার ২৮০ কেজি খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছিল প্রতিবেশি দেশ চীন। চীন থেকে উত্তর কোরিয়ায় বৈধভাবে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য আসে, তার চেয়ে অবৈধভাবে আরও বেশি আসে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকার এর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে দেয় । এছাড়া চীনের সঙ্গে থাকা সীমান্তে নতুন করে বেড়া দেওয়া হয় । তার পরেও সীমান্তরক্ষীদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে খাদ্য আনা হচ্ছিল । কিন্তু মাত্রারিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করা হলে পুরো দেশের ওপর এর প্রভাব পড়ে ।
লিনা উন বলেছেন,’উত্তর কোরিয়া যদি খাদ্য সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে চায়,তাহলে তাদের সীমান্ত খুলে দিতে হবে । ফের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে হবে । কিন্তু এর বদলে উত্তর কোরিয়া নিজেদের আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে । নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করছে। যে কারণে ভুগতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষকে ৷’
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করেছে, দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে অনাহারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । তবে উত্তর কোরিয়া যেহেতু বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, তাই এ তথ্যের সত্যতা যাঁচাই করাটাও কঠিন। কেউ কেউ অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার এ দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ।।