এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৩ জুন : বাংলাদেশের লালমনিরহাট (Lalmonirhat) জেলার ঘোষালা বাজারের (Ghosala Bazar) পেশায় নরসুন্দর ৭০ বছরের বৃদ্ধ পরেশ শীলকে ইসলামের নবিকে নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগে রবিবার নির্মমভাবে মারধর করেছে মুসলিম জনতা । বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে ধর্মোন্মাদদের হাতে ব্যাপক মার খেতে হয়েছে বৃদ্ধের ৩৩ বছর বয়স্ক ছেলে বিষ্ণু শীলকেও । কার্যত বিনা অপরাধে এখন কারাগারে আছেন বৃদ্ধ পরেশ শীল । এদিকে এই ঘটনার পর লালমনিরহাট সদর থানার ওসি নুরনবী মিঁয়া দেশের হিন্দুদের হুমকি দিয়ে বলেছেন,’ইসলামিক দেশে দাঁড়ি নিয়ে মন্তব্য করলে সাধারণ জনতা উত্তেজিত হবেই। এই দেশের ৯০% মুসলমান,এটা মাথায় রেখে বিধর্মীদের চলতে হবে। এই দেশটা মুসলমানদের, কোনো হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের না। এই দেশে ইসলাম পরিপন্থী কোনো মন্তব্য বরদাস্ত করা যাবে না।’
ঠিক কি ঘটেছিল গত রবিবার ?
জানা গেছে যে শুক্রবার সকালে শহরের হানিফ পাগলার মোড় এলাকায় পরেশ শীলদের সেলুনে চুলদাড়ি কাটতে গিয়েছিল স্থানীয় নামাটারি আল-হেরা জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ । সে বৃদ্ধ পরেশ শীলকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিল। বিনম্রভাবে পরেশবাবু তাকে উত্তর দিয়েছিলেন,’এগুলো বলবেন না হুজুর। আমরা বাপ দাদার ধর্ম পালন করে এসেছি। এই তো আর কয়দিন পর মারা যাব। বয়স হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা সবারই একজন ।’ তারপরেও নাছোড় আব্দুল আজিজ বৃদ্ধকে ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে । বৃদ্ধ পরেশ চন্দ্র রায় আব্দুল আজিজের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন নিজের মত করে । যখন দেখলেন এই বৃদ্ধকে ইসলামে আনা সম্ভব নয়, তখন নামাটারি আল-হেরা মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ এলাকায় প্রচার করে দেয় যে বৃদ্ধ পরেশ শীল তাদের নবী মোহাম্মদকে সাঃ বলেনি । এই হিন্দু মুনাফেক। সে ইসলাম অবমাননা করেছে ।
এরপর রবিবার কয়েকজন জোহরের নামাজের পর স্থানীয় মুসলিম ধর্মোন্মাদের দল পরেশবাবুর সেলুনে হামলা চালায় । তাকে সেলুন থেকে বের করে রাস্তায় এনে নির্মমভাবে লাথি-চড়-ঘুষি মারা হয় । বাবাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন বিষ্ণু শীল । তাকেও ব্যাপক মারধর করা হয় । এরপর পুলিশ এসে পিতাপুত্রকে থানায় নিয়ে যায় । কিন্তু থানাতেও জিহাদি পুলিশের হাত থেকে রেহাই পায়নি হিন্দু পিতাপুত্র । জঙ্গি ওসি নূরনবী মিঁয়া দু’জনকে থানায় লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে ।
পরে থানা চত্বরে উপস্থিত পরিবারের লোকজন ও হিন্দু প্রতিবেশীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ওসি নূরনবী মিঁয়া বলে, ‘দাড়ি নিয়ে মন্তব্য করেছে, তাও ৯০% মুসলমানের দেশে । এত বড় সাহস ? এই দেশটা মুসলমানদের, কোনো হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নয় । এই দেশে ইসলাম পরিপন্থী কোনো মন্তব্য বরদাস্ত করা যাবে না। এই কথা মাথায় রেখে বিধর্মীদের চলতে হবে ।’ পাশাপাশি ওসি নুরনবী বলেছেন,ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।।

