এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১০ অক্টোবর : পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলি নৃশংস ও ভয়াবহ নরসংহারের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে নোয়াখালীর হিন্দু নরসংহার ছিল অন্যতম । মুসলিম শাসক তৈমুর লঙের হিন্দু নরসংহার,ইংরেজদের জালিওনাবাগ গনহত্যা বা হায়দ্রাবাদের হিন্দু নরসংহার -এই সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছিল নোয়াখালীর হিন্দু নরসংহারের ঘটনা । আজ থেকে ৭৭ বছর আগে,১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন শুরু হয় গনহত্যা । চলে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে । নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও অনুমান করা হয় প্রায় ৫০,০০০ হিন্দুর মৃত্যু হয়েছিল নোয়াখালীর মুসলিমদের হাতে ।
প্রতিটি হিন্দু পরিবার যখন দুর্গোৎসবের পর পবিত্র কোজাগরি লক্ষ্মী পূজায় মেতে উঠেছিল,ঠিক সেই সময় হামলা চালিয়ে দেয় তাদেরই প্রতিবেশী কট্টরপন্থী মুসলিমদের দল । শুধু নির্বিচারের হত্যাই নয়, হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধর্ষণ করে নরপশুরা । তার পাশাপাশি চলে ঘরবাড়ি, মন্দির লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা । মুসলিম কট্টরপন্থীদের দল অগনিত হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করেছিল । জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল হিন্দুদের । ধর্মান্তরিত করার পর তাদের কাছ থেকে মুসলিমরা ‘জিজিয়া কর’ পর্যন্ত আদায় করত ।
নোয়াখালীতে হিন্দু নরসংহারের ঘটনা ঘটেছিল নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া ও সন্দ্বীপ থানা এবং ত্রিপুরা জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম থানা মিলে প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে । ঠিক কতজন হিন্দু মুসলিমদের হামলায় মারা গিয়েছিলেন তার সঠিক পরিসংখ্যান আজও পাওয়া সম্ভব হয়নি । ভারত ও বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) আন্ডার সেক্রেটারি আর্থার হেন্ডারসন হাউস অব কমন্সে ১৯৪৬ সালের ৪ নভেম্বর জানিয়েছিলেন, নোয়াখালী আর ত্রিপুরা জেলার (কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমন্বয়ে ছিল ত্রিপুরা জেলা) মৃতের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় সম্ভব হয়নি। এই দুই জেলায় কয়েক হাজার বাড়ি লুট হয়েছে, শুধুমাত্র ত্রিপুরাতেই ৯,৮৯৫ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে । নোয়াখালীতে যার সংখ্যা অগণিত। এছাড়া হাজার হাজার হিন্দু নারীদের অপহরণ করা হয়েছে। তবে দাবি করা হয় বাংলাদেশ নোয়াখালীর হিন্দু গনহত্যার সময় ৫০০০০ হিন্দুকে হত্যা এবং ৭৫০০০ হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ ও ধর্মান্তরকরন করা হয় ।
জানা যায়,মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নোয়াখালীতে ক্যাম্প করেন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নোয়াখালী ও এর আশেপাশের এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন । যদিও তার এই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় । ১৯৪৬ সালের ৭ এপ্রিল একটি দৈনিক ইংরাজি পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরপর তিনি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে মিটিং করার জন্য বম্বের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হন । তার আগে তিনি বলে যান,হিন্দুরা হয় নোয়াখালী ছেড়ে পালাও, অথবা ধর্মান্ধতার আগুনের শিখায় মৃত্যু বরন করো (Hindus to leave or perish in the flames of fanaticism) ।’
অত্যারিত হিন্দুদের প্রতি গান্ধীর এই প্রকার আচরণে কার্যত হতাশায় ডুবে যায় হিন্দুরা । ইসলামি মৌলবাদীদের হামলার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ হতভাগ্য হিন্দু কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে চলে যান । এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ আক্রান্ত হিন্দু এলাকার মুসলিমদের অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন ।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন,’স্মরণে নোয়াখালী । ধর্মীয় অসহিষ্ণুতায় নিহত সকল হিন্দুদের আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি ।’।
তথ্যসূত্র : সৌজন্যে উইকিপিডিয়া ।