এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জুন : সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের একের পর এক জেলায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে । মালদা জেলার মোথাবাড়িতে হিংসার শিকার হয়েছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, গাড়ি, দোকানপাট । মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদে খুন হয়েছে হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর পুত্র চন্দন দাস । তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ইরফান পাঠানের লোকসভা কেন্দ্র জঙ্গিপুরের অন্তর্গত সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের ওই হিংসায় হিন্দুদের প্রচুর ঘরবাড়ি, দোকানের ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে । সর্বশেষ হিংসার ঘটনাটি ঘটে মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার মহেশতলা পুরসভার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় । সেখানেও হিংসার শিকার স্থানীয়ভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুরা । যদিও রাজ্যের শাসক দলে এই সমস্ত হিংসার ঘটনাগুলোকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে মেনে নিতে চায়না । আর সিপিএম ও কংগ্রেস ওই সমস্ত হিংসার ঘটনার পর এযাবৎ মুখই খোলেনি । নিজের রাজ্যে একের পর এক হিংসার ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে মাথাব্যথা নাই সিপিএমের । কিন্তু তারা পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে লড়াইয়ের ডাক দিল ৷ বিষোদগার করল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ।
আসলে,আজ থেকে ৫০ বছর আগে আজকের দিনে (১৯৭৫ সালের ২৫ জুন) দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী । প্রতিবছর এই দিনটি “কালা দিবস” হিসাবে পালন করে আসছে বিজেপি । জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সিপিএমও প্রতিবছর এই দিনে পথসভা করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ৷ আজ বিকেলে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের নাসিগ্রাম মোড়ে সিপিএমের পথসভা ছিল । সেই পথসভাতে স্থানীয় সিপিএমের নেতাদের স্লোগানে জায়গা পায়নি পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনাগুলি । পরিবর্তে তারা দেশজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার ডাক এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে । সিপিএমের ইচ্ছা যে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক ভারত ।
সিপিএমের স্লোগানের মধ্যে ছিল সংবিধানে ‘আরএসএসের মতাদর্শ কায়েম করার’ বিরুদ্ধে। ‘বিচার ব্যবস্থার মধ্যে আরএসএসের মতাদর্শ’ প্রবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক । ‘যুক্তিবাদী তথ্য নির্ভর পার্লামেন্টের পরিবর্তে স্বৈরাচারী পার্লামেন্ট’ লাগু করার জন্য শাসক দল বিজেপির কাছে জবাবদিহি । ‘ঘন ঘন আইন তৈরি করার’ বিরুদ্ধে এদিন স্লোগান দেয় সিপিএম নেতারা। ”গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে রক্ষা করার জন্য লড়াইয়ের ডাক । বিচার ব্যবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্বাধীন সার্বভৌম ভারতে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক। সংবিধান রক্ষার জন্য লড়াই এবং ভারত পাকিস্তান সমস্যা দ্বিপাক্ষিক ভাবে মেটানোর আহ্বান । কাশ্মীর সমস্যায় ভারত পাকিস্তান ছাড়া তৃতীয় কোন দেশের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয় । স্লোগান দেওয়া হয় যুদ্ধ লাগিয়ে যুদ্ধ থামানোর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশলের বিরুদ্ধে । প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে শক্তিশালী ভারত গঠনের ডাক দেয় সিপিএম । দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে স্লোগান দেন তারা । কিন্তু তারা ঘুনাক্ষরেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাগুলি নিয়ে কোন স্লোগান দেননি ।
আজ বিকেলে ভাতারের সিপিএমের এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ মন্ডল, এরিয়া কমিটির সদস্য ইন্দ্রজিৎ হাজরা ও নজরুল হকসহ হাতে গোনা ৫-৬ জন সিপিএমের কর্মী ।।