প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ জুন : সেই বাম আমল থেকে বাসিন্দারা পাকা সেতুর দাবি করে আসলেও তা আজও পূরণ হয়নি । তাই বর্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার ’অমরপুর’ ও ’শম্ভুপুরের’ ফেরিঘাট দিয়ে নৌকায় চড়েই ভরা দামোদর পারাপার করতে হচ্ছে যাত্রীদের।কোন অঘটন ঘটেগেলে শলিল সমাধি ঘটবে জেনেও বিকল্প পথ না থাকায় নৌকাতেই দামোদর পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন বহু যাত্রী। তাঁরা চাইছেন ’অমরপুর’ ও ’শম্ভুপুরে’ দামোদরের উপরে পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগী হোক রাজ্য সরকার ।
নিম্নচাপের জেরে টানা ছয় দিন ধরে চলছে প্রবল বৃষ্টিপাত। তার সঙ্গে ব্যারাজ থেকেও ছাড়া হয়েছে জল ।এরফলে দামোদরে এখন জলস্তর অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।জল বাড়তেই খুলে দেওয়া হয়েছে কাঠের অস্থায়ী সেতু । সেই কারণে এখন নৌকাতেই অমরপুর ও শম্ভুপুরের ফেরিঘাট থেকে চলছে যাত্রী পারাপার।
জামালপুরের অমরপুর ফেরিঘাট থেকে দামোদর পার হয়ে হুগলীর চাঁপাডাঙা পৌছানো যায় খুব সহজেই।এছাড়াও অমরপুর স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং দুই পাড়ের ১২-১৪ টি এলাকার বহু সাধারণ মানুষ সারাবছর অমরপুর ঘাট থেকে দামোদর পেরিয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করেন।এলাকার বাসিন্দা দীপক অধিকারী বলেন , ’ভোট আসে ভোট যায় । কিন্তু তাঁদের দুর্ভোগের দিনের ’ইতি’ আর ঘটছে না ।প্রতি বর্ষায় তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দামোদর পারাপার করতে হয় । এই সময়ে চাপাডাঙা পৌছানোও খুব দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে । প্রায় ২০-২৫ কিমি পথ ঘুরে তবে চাপাডাঙা পৌছাতে হয় । পাকা সেতু না হলে তাঁদের দুর্ভোগ কাটবে না’ । এলাকার অপর বাসান্দারা বলেন, সেই বাম আমল থেকে জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চল ,হুগলীর চাপাডাঙ্গা ও জামালপুর বিধানসভা এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ অমরপুরে দামোদরের উপরে পাকা সেতুর দাবি সরকারের কাছে জানিয়ে আসছেন । কিন্তু সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি ।কবে পাকা সেতু তৈরি হবে তাও কারুর জানা নেই । তাই অগত্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অমরপুর ফেরিঘাট থেকে নৌকায় চলছে যাত্রী পারাপার ।
একই রকম ভাবে জামালপুরের শম্ভুপুর ও বর্ধমন ২ ব্লকের বড়শুল এলাকার মধ্যে সংযোগকারী দামোদরের উপরে পাকা সেতু তৈরির দাবিও দীর্ঘদিনের ।অমরপুর ঘাট থেকে শম্ভুপুর ফেরিঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি । শম্ভুপুর ঘাট পেরিয়ে রায়না, খণ্ডঘোষ সহ জামালপুরের সর্বত্র সহজেই পৌছানো যায় ।একই ভাবে এইসব এলাকার বাসিন্দারা শম্ভুপুর ঘাট পেরিয়ে বড়শুলে পৌছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে শহর বর্ধমানে যেমন পৌছান, তেমনি দুর্গাপুর ও আসানসোলের পথেও যাতাযাত করতে পারেন ।বছরের অন্যান সময়ে এখানে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতু দিয়ে পারাপার চললেও সমস্যা তৈরি হয় বর্ষা কালে । তখন নৌকাই দামোদর পারাপারের একমাত্র ভরসা । দুর্ভোগ ও জলযন্ত্রণা বাড়ে তখনই।সেই দুর্ভোগ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে এতদ অঞ্চলের মানুষজনও দীর্ঘদিন ধরেই দামোদরের উপরে শম্ভুপুর ও বড়শুলের মধ্যে সংযোগকারী পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন ।
জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও বিধায়ক অলোক মাঝি জানিয়েছেন, ‘অমরপুর এলাকায় দামোদরের উপরে পাকা সেতু তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের । বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছেও জানানো রয়েছে । প্রত্যাশা রয়েছে সরকার এই বিষয়ে নিশ্চই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে“। পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু জানিয়েছেন , ‘অমরপুর ও শম্ভুপুরে দামোদরের উপরে পাকা সেতু তৈরির ‘প্রপোজাল’ রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো রয়েছে ।দাবির বিষয়টি রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীনে রয়েছে ।’।