এইদিন ওয়েবডেস্ক,০৭ নভেম্বর : কংগ্রেসের জমানায় ১৯৮৯ এ ভিপি সিং-এর ক্যাবিনেটের গৃহমন্ত্রী ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল পিডিপির সাংসদ মেহেবুবা মুফতির বাবা মুফিতি মহম্মদ সঈদ । আর সেই সময়েই জম্মু-কাশ্মীরে হয়েছিল হিন্দু পন্ডিত নরসংহার ৷ সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রাজনৈতিক ভাষ্যকার পুষ্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ মন্তব্য করেছেন ‘বেইমানির ভয়েই ভারতে কোনো মুসলমানকে গৃহমন্ত্রী করা হয় না ।’
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুষ্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ । তাঁর বক্তব্যের ভিডিও বিগ নিউজ (Big News) নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে পোস্ট করা হয়েছে । ভিডিওতে পুষ্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠকে বলতে শোনা গেছে,’ভারতে কোনো মুসলমানকে গৃহমন্ত্রী কখনো করা হয় না । কারন ভয় লাগে যে বেইমানি না করে দেয় । ১৯৮৯ সালে ভিপি সিং এর সরকারে ৮ ডিসেম্বরে প্রথম মুসলিম গৃহমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন । ওই ব্যক্তির নাম মুফিতি মহম্মদ সঈদ । ৮ ডিসেম্বরে মন্ত্রী হয়েছিল,আর ১৮ জানুয়ারীর মধ্যে কাশ্মিরী পন্ডিতদের মেরে কেটে,ধর্ষণ করে, শিশুদের আছরে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল ।’
জম্মু-কাশ্মীরের এক বুদ্ধিজীবীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, তখনকার সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবিকে যখন রাস্তায় খুন করা হয়েছিল তখন ওনার চারপাশে মোটরসাইকেলে ঘোরাচ্ছিল । আর হত্যাকারীরা বলেছিল, কেউ যদি এক কাফেরকে জল দেয় তাহলে আমরা তাকেও ছাড়বো না ৷ এই ঘটনায় মুফতির মেয়ে(মেহেবুবা মুফতি) কাঁদেনি, না মুল্লারা কেঁদেছিল, কাশ্মিরীয়তের কথাও কেউ বলেনি,আর আজ আমরা সেই ঘটনার কথা বেমালুম ভুলে গেছি ।’ তিনি বলেন,’আর সেই সময়ে, এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়,ভারতের গৃহমন্ত্রীর মেয়ের অপহরণ হয়ে গেল । গৃহমন্ত্রী নিজেই করিয়েছিল৷ সন্ত্রাসবাদের প্রতি ওর কমিটমেন্ট দেখুন,নিজের ধর্মের প্রতি,নিজের এজেন্ডার প্রতি, গৃহমন্ত্রী মেয়েকে ছাড়ানোর নামে ৪ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিল । অথচ তার মেয়ে নিজের বাড়িতেই ছিল ।’
তিনি বলেন,’সেই সময় কংগ্রেসের তথাকথিত সেকুলার, লিডার অফ অপজিশন,গুলাম নবি আজাদ,আমি জানি না ও ইসলাম থেকে আজাদ নাকি নবির গুলাম,নাকি কংগ্রেস থেকে আজাদ আমি জানিনা ৷ ওর বাড়ি থেকেও ওর এক ভাইপো গায়েব হয়ে গিয়েছিল । সবকিছু খুব দ্রুত হয়েছিল । আর ২৭ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিল এবং সন্ধ্যায় ভাইপো ঘরে চলে এল । আর এক সাহাব, যিনি বাজপায়ির জমানায় ভোট দিয়েছিল, নাম জানেন? সঈফ উদ্দিন সোচ মহাশয় । ওরও ভাইঝি উধাও হয়ে গিয়েছিল । এমন মনে হচ্ছিল প্রত্যেকের এজেন্ডা কি সুন্দর । ওর ভাইঝির বদলে ৭ সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিল।’
পুষ্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ বলেন,’ভারতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ভিত মজবুত হওয়ার পিছনে ভারতের প্রথম মুসলমান গৃহমন্ত্রী দায়ি । নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে একটা ঘটনা হলে গোটা বিশ্বজুড়ে শোড়গোল পড়ে যায় । কেউ ভিসা আটকাতে যায়,কেউ ধর্না করতে যায় । কিন্তু ৫ লাখ হিন্দু নিজের দেশেই দিল্লির রাস্তার পাশে কেউ পানের দোকান করে,কেউ পানমশালার দোকান করে শরনার্থীর জীবনযাপন করছে । কিন্তু আজ পর্যন্ত এদের জন্য ধর্না হয়নি, সংসদ কান্নাকাটি করেনি ।’
পাশাপাশি কিছু ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা নিয়ে খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন পুষ্পেন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ ।
তিনি বলেন,’সম্প্রতি দেশে কিছু ঘটনা ঘটেছে, কেউ আখলাবকে মেরে দিল,কোনো গোরক্ষক কাউকে মেরে দিল, হাতে গোনা কয়েটা ঘটনা ঘটেছিল, প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেওছিলেন যে যারা এই কাজ করেছে তারা গুন্ডা,তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত । কিন্তু এই দু’একটা ঘটনায় দেশ লিঞ্চিস্থান হয়ে গেল ।’
তিনি বলেন,’সুপ্রিম কোর্টের ব্যানার হেডলাইন খবর হয়ে গেল ‘We Will Not Accept Linching government should take immediate drumsticks action’. আর এই ভারতেই ১৯৮৪ সালে খোদ দিল্লিতে সাড়ে তিন হাজার শিখকে খুঁজে খুঁজে মারা হয়েছিল । রাস্তায় মেরেছিল,গলার টায়ার ঝুলিয়ে মেরেছিল, শিশুদের আছড়ে মেরেছিল । প্রাণ বাচাতে যে বাক্সের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল । কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলেনি এটা মব লিঞ্চিং । সাড়ে তিন লাখ বা ৫ লাখ হিন্দু পন্ডিতের সাথে যা ঘটেছিল তা মব লিঞ্চিং ছিল না ।’
তিনি বলেন,’কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের পাখন্ড ও ড্রামা দেখুন । সুপ্রিম কোর্ট ভারতের সেনাকে নির্দেশ দিচ্ছে যে পাথরবাজদের প্লাস্টিকের গুলি চালাতে হবে অথবা গরম জল ছুড়তে হবে । এখন একজন সেনা জওয়ান বিদেশি সন্ত্রাসীদের সাথে লড়াই করবে নাকি পাথরবাজদের গরম জল ছুড়বে ? এটা দেশের মানসিক দেওলিয়াপন । এমনকি প্লাস্টিকের গুলির মাপজোখও করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ।
সুপ্রিম কোর্টের এটাই চিন্তা যে মুম্বাইয়ের দই হান্ডির লম্বা কত হবে । মহাকালেশ্বরকে কত পরিমান জল দিতে হবে । কিন্তু এই সুপ্রিম কোর্টই মুখ ঘুরিয়ে ছিল যখন দিল্লি থেকে ৪১ কিমি দূরে রাম রহিমের আশ্রমের নিরস্ত্র ভক্তদের উপর ডিসিপির নির্দেশে পুলিশ পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি চালিয়ে ৩৪ জনকে মেরে দিল । তখন সুপ্রিম কোর্ট পুলিশকে বলেনি যে আপনাদের গরম জল ঢালা উচিত ছিল অথবা প্লাস্টিকের বুলেট ছোড়া দরকার ছিল । এটাই হল সুপ্রিম কোর্টের ভন্ডামি ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন,’আপনারা আশা করেন সুপ্রিম কোর্ট অযোদ্ধার শুনানির তারিখ দেবে ? ডেট দিলেই বিচারক পেটের ব্যাথার বাহানায় পালিয়ে যাবে । আপনারা মুখ খোলেননা বলেই সুপ্রিম কোর্ট পেয়ে বসে । যদিও আদালত অবমাননার কেস হয় হোক, সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন ।আদালত অবমাননার কেস করতে চায় তো ৫,১০,৫০,০০০ লোকের উপর করুক । আমরা ভয় পাই কেন,ভাই? নিজের দেশেই ভয় পাবো? মেহেবুবা মুফতিকে কেন ভয় লাগে না,আর আপনাদের লাগে? মেহেবুবা ত্রিরঙ্গা তুলতে দেব না বলে হুশিয়ারি দিলেও ওর বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কেস হয় না? আমরা মুখ খুলিনা বলেই সুপ্রিম কোর্ট অদ্ভুত সব ফয়সালা শোনায় । সুপ্রিম কোর্টও জানে এই সমাজ ঘুমচ্ছে ।,
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে বলেন,’
‘একজন ঘুম ভাঙানোর জন্য এসেছেন,কিন্তু মানুষ বুঝতেই পারছে না । কারন বুঝতে গেলে বুদ্ধি থাকতে হবে । ভারত ১৯৪৭ সালে হয়নি । ভারতের পরিচয় তাজমহল, লালকেল্লা বা কুতুবমিনার নয় । ভারতের পরিচয় ৫,০০০ বছর আগের । আপনারা নিজেরাই জানেননা যে আপনারা কাদের বংশধর । আপনাদের আভ্যন্তরীণ পুরুষত্ত্ব শেষ হয়ে গেছে । আপনাদের অতীত কাহিনী কেউ ‘মন কি বাত’ এ বলার চেষ্টা করছেন । কিন্তু কেউ বুঝতেই পারছে না । প্রধানমন্ত্রীর কথাকে কেউ ঠাকুমার গল্প বলে মনে করছে । প্রধানমন্ত্রীর প্রথম মন কি বাত আর সংসদের প্রথম ভাষণ মন দিয়ে শুনুন । এই রকম মানসিকতার মানুষ ১০-২০ হলেও কাজ হয়ে যাবে ।
তিনি বলেন,’এই কারনে রাষ্ট্রপতি ভবনে আর ইফতার হয় না । এই কারনে বিদেশি অতিথিদের ভোজের পরে হাতে তাজমহলের মডেল ধরিয়ে আর স্বাগত জানানো হয় না । কারন তাজমহল হল আদপে একটা কবর । কে চাইবে কবরকে ঘরে নিয়ে যেতে ? তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জিকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে বিদেশি অতিথিদের শ্রীমদ্ভাগবত গীতা দেওয়ার প্রথা চালু করেন প্রধানমন্ত্রী । কারন শ্রীমদ্ভাগবত গীতাই হল ভারতের পরিচয় ।
পরম্পরা ভাঙার জন্য শক্তি চাই৷ ইতিহাস এটা তৈরি করে না যে কে নিষ্ঠুর নৃশংস, ইতিহাস তাদেরই লেখা হয় যারা বেঁচে থাকে ৷’ মুঘল শাসকদের নামে দিল্লির সড়ক পথের নামকরণের সমালোচনা করে তিনি নাম পরিবর্তনের কথাও বলেন ।
তিনি বলেন,’ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এডিটোরিয়ালে নরেন্দ্র মোদী জেতার পর লিখেছিল,’স্বাধীন ভারতে এই প্রথম স্বাধীন সরকার হল ।’ আপনারা জানেন না, কিন্তু বিশ্ব বোঝে । এর আগে যে সরকার ছিল সেটা ছিল ট্রানসফার ওফ পাওয়ারের সরকার ।’।