শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২০ এপ্রিল : আছে যথাযথ যোগ্যতা । আছে এসসি শংসাপত্র । তবুও জোটেনি কোনও চাকরি । তাই পরিবারের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে টিউশনের পাশাপাশি চায়ের দোকান খুলেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পাতুন গ্রামের বাসিন্দা বছর আঠাশের হেমন্ত মল্লিক । দিনভর হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে তিনি কোনও রকমে টিকিয়ে রেখে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের জীবন ।
জানা গেছে,মন্তেশ্বর থানার পাতুন গ্রামের বাসিন্দা পেশায় জনমজুর শীতল মল্লিক এবং রেনুকাদেবীর দুই ছেলের মধ্যে বড় হেমন্ত । ছোট অমিত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর এক ডিস্ট্রিবিউটরের গোডাউনে দেখাশোনার কাজ করেন । দু’জনেই বিবাহিত । এক কামরার মাটির মাটকোঠা ঘর ৷ সেই ঘরের নিচে সঙ্গীতাদেবী এবং বছর দেড়েকের মেয়ে আরোহী নিয়ে থাকেন হেমন্তবাবু । উপরে ছোট্ট কুঠুরিতে স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন অমিত । আর ওই ঘরের পাশে রয়েছে খড়ের ছাউনি মাঠির ছিটেবেড়া দেওয়া রান্নাঘর । সেখানেই থাকেন হেমন্তদের বাবা-মা ।
হেমন্ত মল্লিক বলেন, ‘আমি চন্দ্রপুর কলেজ থেকে বাংলা অনার্স করেছি ৷ ৫০ শতাংশ নম্বর ছিল । তারপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছি । এমএ-তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলাম । এরই মাঝে ২০১৩-১৫ সালে বড়শুলের কলানবগ্রামের সতীশচন্দ্র কলেজ থেকে আইটিআই করেছি । এছাড়া কম্পিউটারের বেসিকও করা আছে আমার ।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারে অভাব । সেই কারনে পড়াশোনা চলাকালীনই আমি সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি । কিন্তু পাইনি । বিভিন্ন অফিসে ৮-১০ হাজার টাকার চুক্তি ভিত্তিক যে সমস্ত কাজ দেওয়া হচ্ছে তার জন্য ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার ঘুঁষ দিতে হয় । আমাদের মত গরীব পরিবারের শিক্ষিত বেকারদের অত টাকা ঘুঁষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই । তাই এখন চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছি ।’ হেমন্তর কথায়, ‘২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে চাকরির পরিস্থিতি খুবই খারাপ । পিএইচডি করা ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত চাকরি পাচ্ছেন না । সে জায়গায় আমার মত এমএ পাশদের আর কতটা সম্ভাবনা থাকতে পারে ?’
পরিবার সুত্রে জানা গেছে,বছর আড়াই আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে বিয়ে হয় দুই ভাই হেমন্ত ও অমিতের । বর্তমানে তাঁদের দু’জনেরই বছর দেড়েকে একটি করে সন্তান রয়েছে । যৌথ পরিবার হলেও নিজের নিজের পরিবারের খরচ মাসের প্রথমে তুলে দিতে হয় বাবা-মায়ের হাতে ।
হেমন্ত বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমি টিউশন পড়াতাম । কিন্তু বিয়ের পর আর কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না । তাই বছর খানেক আগে দেনুরের ৫ মাথা মোড়ে একটা চায়ের দোকান খুলেছি । সারাদিনে ৫-৬ বাড়িতে গিয়ে টিউশন পড়িয়ে আসি । তারই মাঝে দোকান চালাই । সকাল ৫ টায় বেড়িয়ে রাত্রি ১০ টায় বাড়ি ফিরি । তাতেও কোনও রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি । মেয়ে বড় হওয়ার পর কিভাবে তার পড়াশোনার খরচ জোটাবো জানিনা ।’
হেমন্তবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,’ছোট্ট একটা মাটির ঘরে এত কষ্ট করে তিনটি পরিবারের বসবাস । অথচ এযাবৎ আবাস যোজনার অনুদান দেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই করেনি স্থানীয় পঞ্চায়েত । এমনকি পরিবারের সদস্যদের জবকার্ড থাকলেও কাজ দেওয়া হয় না ।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,হেমন্ত মল্লিকের দাদু সিপিএমের নেতা ছিলেন । তখন থেকেই পরিবারটি সিপিএমের সমর্থক । আর সেই কারনেই পরিবারটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে । যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল ।।