জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউশগ্রাম,১৬ এপ্রিল : ক্যালেণ্ডারের পাতায় একটা দিন পেরিয়ে গ্যাছে ঠিকই তাও ওরা ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করলেন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পেশাগত দিক দিয়ে প্রত্যেকেই সরকারের প্রশাসনিক দপ্তরের উচ্চ পদে নিযুক্ত আছেন । কেউ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক, কেউ বা পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত আছেন। কাজের চাপ প্রচুর। নেশা সুযোগ পেলেই সাহিত্যচর্চা করা। এবার তাদের হাত ধরেই গুসকরা ও তার আশপাশের একদল সাহিত্যপ্রেমী মানুষ এক ভিন্ন স্বাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলনের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেলেন।
এলাকার সুপরিচিত গবেষণা ধর্মী আঞ্চলিক ইতিহাস, সাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক ‘কাহার সাহিত্য’ পত্রিকার উদ্যোগে এবং কলকাতার ‘দিবা রাত্রির কাব্য’ পত্রিকার সক্রিয় সহযোগিতায় ১৬ ই এপ্রিল আউসগ্রাম ১ নং ব্লকের সংহতি মঞ্চে ‘বর্ষবরণ ও সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় । হায়দ্রাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আউসগ্রাম ১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক তথা সাহিত্য প্রেমী অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। যদিও তিনি প্রশাসনিক আধিকারিক হিসাবে নয় একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মূলত তারই ঐকান্তিক আগ্রহে আকারে ছোট্ট কিন্তু তাৎপর্যে বিশাল এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একদল কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য মনস্ক ও কাব্যপ্রেমী পাঠক ও শ্রোতা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে তারা হাজির হন। আউসগ্রাম ১ নং ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দিবারাত্রির কাব্য পত্রিকার সম্পাদক আফিফ পুয়াদ, সঙ্গীত শিল্পী অঙ্কন রায় ও তার সম্প্রদায়, অবসরপ্রাপ্ত বরিষ্ঠ আধিকারিক শ্রীকুমার চক্রবর্তী সহ আরও অনেক বিশিষ্ট মানুষ। স্বরচিত কবিতা পাঠ, সঙ্গীত, সাহিত্য বিষয়ক ভাবগম্ভীর আলোচনা সবকিছু মিলিয়ে প্রায় চার ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানটি জমজমাট হয়ে ওঠে ।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন আউসগ্রাম ১ নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক তথা কবি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়। তাকে সহযোগিতা করেন কাহার পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও সহ সম্পাদক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এবং দিবারাত্রির কাব্য পত্রিকার সম্পাদক আফিফ পুয়াদ । উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক কবি, শিল্পীর হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহার সামগ্রী। কাব্য সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘কাহার স্মারক সম্মাননা’ তুলে দেওয়া হয় কবি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের হাতে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী তৃপ্তি চট্টোপাধ্যায়। ছোট্ট বিহানের নৃত্য প্রদর্শন ছিল অসাধারণ। অঙ্কন রায় ও তার সম্প্রদায়ের সঙ্গীত পরিবেশন উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও সন্তোষ ঘোষ, সুব্রত ব্যানার্জ্জী, কানাইলাল জানা, পিয়াল রায়, সস্ত্রীক মহম্মদ মোজহারুল হামিদ প্রমুখের কবিতা পাঠ যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিল। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি পত্রিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হয়।
যার আন্তরিক আগ্রহে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় সেই অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘এটা কোনো সরকারি অনুষ্ঠান নয়। সুতরাং বিতর্কের কোনো সুযোগ নাই ।’ তিনি আরও বলেন,’এই ধরনের অনুষ্ঠান যত বেশি করে হবে তত বাংলা সাহিত্যের প্রসার ঘটবে। স্হানীয় কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে পাঠকদের। এতে তারা যেমন উৎসাহ পাবে তেমনি বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ঘটবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বিশিষ্ট সাহিত্য প্রেমী প্রদীপ মুখার্জ্জী । পেশায় পঞ্চায়েত কর্মী প্রদীপ বাবু দীর্ঘদিন ধরে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে আসছেন এবং তাকে কেন্দ্র করেই তিনি প্রকাশ করেন ‘কাহার’ পত্রিকা । অরিন্দম বাবু, দিবা রাত্রির কাব্য পত্রিকার সম্পাদক আফিফ পুয়াদ, হায়দ্রাবাদের বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার মলয় রুজ সহ উপস্থিত প্রত্যেক কবি-সাহিত্যিক সহ সাহিত্য প্রেমী মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রদীপ বাবু বলেন,’প্রত্যেকের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে ।’ আগামী দিনেও তিনি সবার সহযোগিতা প্রার্থনা করেন ।।