প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুলাই : সালিশি সভায় হাজির না হওয়ায় জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার চকদিঘী অঞ্চলের কুবাজপুর গ্রামের বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধোর,খুনের হুমকি ও বৃদ্ধার শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটনো অভিযুক্তরা এবার দেখালো নতুন চমক । জামালপুর থানার পুলিশের পাঠানো নোটিশ পেয়েই শনিবার চুপিসারে বর্ধমান আদালতে আত্মসমর্পণ করে ১২জন অভিযুক্ত । আর আত্মসমর্পণ করেই ফটাফট ১২ অভিযুক্তই জামিন পেয়ে যায় । জানা গিয়েছে সরকারী আইনজীবী যেমন অভিযুক্তদের কারুর জামিনের বিরোধীতা করে নি, তেমনই পুলিশের তদন্তকারী অফিসারও কাউকে পুলিশি হেপাজতে নেওয়ার আবেদন আদালতে জানায় নি। জামিন নিতে বাকি রয়েছেন যাঁর ডাকা সালিশি সভায় হাজির না হওয়ায় বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলেকে চরম আত্যাচারের শিকার হতে হয় , সেই চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান । ইতিমধেই পুলিশ তাকেও নোটিস সার্ভ করেছে। সূত্রের খবর সেই নোটিশকে হাতিয়ার করেই একই কায়দায় সোমবার বা মঙ্গলবার জামিন প্রাপ্তির জন্যে বর্ধমান আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন আজাদ রহমান । এদিকে আদালত থেকে ১২ অভিযুক্তরের জামিন পেয়ে যাওয়ার ঘটনার কথা জেনে স্তম্ভিত অভিযোগকারী নি নির্যাতিতা সাহানারা বিবি এবং তাঁর স্বামী ও ছেলে।
বিরোধীরা বলছে ,অভিযুক্ত যদি তৃণমূলের হয় ,তবে সাত খুন মাফ ।তৃণমূলের অভিযুক্তদের জন্যে তৈরি হয়ে যায় পুলিশ আর তৃণমূলের সেটিং । আর সেই ’সেটিংয়ের’ দৌলতেই শুধুমাত্র ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়েও শুধুমাত্র পুলিশের পাঠানো ’নোটিশ’ কে হাতিয়ার করেই আদালতে জামিন পেয়ে যায় তৃণমূলের অভিযুক্তরা । যদিও নোটিশ পাঠানো নিয়ে পুলিশের ব্যাখ্যা,“নতুন আইন অনুযায়ী সাত বছরের কম সাজার মামলায় অভিযুক্তদের নোটিশ নোটিশ পাঠানো বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। সেই মতই মামলা রুজুর পরেই অভিযুক্তদের সকলকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আদালতে বিচারাধীন থাকা বৃদ্ধা সাহানারা বিবির পুত্র বধূর করা খোরপোশের মামলার বিচারের জন্যে ডাকা হয়েছিল সালিশী সভা ! ১৪ জুন সেই সালিশী সভায় হাজির হননি বৃদ্ধা সাহানারা বিবি এবং তাঁর স্বামী বোরহান আলি ও ছেলে শেখ বসির আলি।চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি আজাদ রহমানের ডাকা সালিশি সভায় বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে না হাজির হওয়ায় চটে যায় আজাদের সাগরেদরা। তারা ওইদিন রাতেই কুবাজপুর গ্রামের বৃদ্ধ দম্পতি বাড়িতে চড়াও হয়ে তাদের মারধোর,খুনের হুমকি এমনকি বৃদ্ধা সাহানারা বিবির শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ ওঠে । খুনের হুমকি হুমকিতে ভীত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে বাধ্য হন নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালাতে।পরে বৃদ্ধা ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় গোটা ঘটনা সবিস্তার জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং জেলার পুলিশ সুপার কে অভিযোগ জানান । আজাদ রহমান যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সালিশি সভা ডাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে ঘটনার কথা জানার পরেই জেলার পুলিশ সুপার আমন দীপ জানিয়ে দিয়ে ছিলেন,অভিযোগের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে“ । সেই মত ২৫ জুন পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তি জামালপুর থানার পুলিশ এফআইআর রুজু করে ঠিকই ।তবে সেই এফআইআরে ভিত্তিতে পুলিশের পাঠানো নোটিশ হাতে পেয়েই এখন জামিনে মুক্ত ১২ অভিযুক্ত । এমন তাজ্জব কাণ্ডে চকদিঘীর বাসিন্দারাও স্তম্ভিত ।।
ছবি : সালিশী সভায় হাজির না হওয়ায় মারধর ও খুনের হুমকি-প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছাড়লেন বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে ।