১৯৪৯ সালের ১৫ জানুয়ারী,জেনারেল কোডানানন্দ মাদাপ্পা কারিয়াপ্পা স্বাধীন ভারতের প্রথম সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। তারপর থেকে প্রতি বছর এই তারিখে সেনা দিবস পালিত হয় । তিন দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকারী জেনারেল কেএম কারিয়াপ্পা অবসর গ্রহণের পরেও কোনও না কোনওভাবে সেনাবাহিনীতে সেবা করে গেছেন। তিনি ১৯৫৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি কেবল স্বাধীন ভারতের প্রথম সেনাপ্রধানই ছিলেন না, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম ৫ তারকা পদমর্যাদার কর্মকর্তাও ছিলেন। ৫ তারকা পদমর্যাদার অফিসার হওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার, কারণ তিনি ছাড়া কেবল জেনারেল মনেকশই এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। কিন্তু, অধিকাংশ ভারতীয়ের অজানা যে জেনারেল কারিয়াপ্পা দেশের প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্রথম পছন্দ ছিলেন না? আসলে, নেহেরু চেয়েছিলেন একজন ইংরেজ অফিসারকে সেনাপ্রধান করতে । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সরকার ক্রমাগত বিবেচনা করছিল যে সেনাবাহিনীর কমান্ড কাকে দেওয়া উচিত ।
এই প্রসঙ্গে নেহেরুর ডাকা একটি সভার কথা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ। নেহরুর সেই সভায় অনেক বড় বড় নেতা ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কোনও ভারতীয়ের সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই, তাই এই পদটি কেবল একজন ইংরেজকে দেওয়া উচিত। বৈঠকে সবাই নেহরুর সাথে একমত ছিলেন কিন্তু একজন সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন যিনি নেহরুর মতামতের সাথে একমত ছিলেন না। সেই ব্যক্তি ছিলেন- লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাথু সিং রাঠোর। তিনি বললেন, “আমি কিছু বলতে চাই” এবং নেহরুর মতামতের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাঠোর বলেন, যদি কোনও ভারতীয়ের অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে এর অর্থ এই নয় যে ভারতকে দাসত্বে আবদ্ধকারী ব্রিটিশদের একজনকে সেনাপ্রধানের পদ দেওয়া উচিত। তারপর নেহেরু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কি এই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত? কিন্তু রাঠোড় নিজের কথা নয়, দেশের কথা ভাবছিলেন। তাই, তিনি সেনাপ্রধানের পদ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে তাঁর মতে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি এই পদের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জন করেছেন। তার নাম- কেএম কারিয়াপ্পা। কেএম কারিয়াপ্পা তখন একজন লেফটেন্যান্ট ছিলেন। তার হিন্দি তেমন ভালো না বলে মানুষ তাকে ‘ব্রাউন সাহেব’ বলেও ডাকত। হ্যাঁ, কন্নড় ভাষার উপর তার ভালো দখল ছিল। ফিল্ড মার্শাল জেনারেল কারিয়াপ্পা তার সাহসিকতার জন্য অনেক সম্মান পেয়েছেন।
জেনারেল কারিয়াপ্পার জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারী কর্ণাটকের কোডাগুতে। ১৯৯৩ সালের ১৫ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কারিয়াপ্পার বিয়ে হয়েছিল মুথু মাচিয়াহের সাথে। সেই সময় কারিয়াপ্পা ছিলেন অধিনায়ক এবং তাঁর বয়স ছিল ৩৭ বছর। তবে তার স্ত্রীর বয়স ছিল তার প্রায় অর্ধেক। জেনারেল কারিয়াপ্পা তার কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য পরিচিত।
জহরলাল নেহেরুর সম্পর্কে একটা কথা বলা খুব উল্লেখযোগ্য হবে যে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত, জন কেনেথ গ্যালব্রেথকে জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, আমিই ভারত শাসনকারী শেষ ইংরেজ। গালব্রেথ নেহরুকে খুব ভালো বন্ধু বলে অভিহিত করেছিলেন যিনি গালব্রেথের স্ত্রীর প্রতি “গভীরভাবে ঘনিষ্ঠ” ছিলেন। একই গালব্রেথ বিশ্বাস করেছিলেন যে ব্রিটিশ কলোনি হওয়াটা ভারতের সৌভাগ্য ছিল । আউটলুকে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছিল ।।