এইদিন ওয়েবডেস্ক,১৮ এপ্রিল : ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পর জহরলাল নেহেরু প্রথম যে কাজটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করতে শুরু করেছিলেন তা হল ভারত থেকে হিন্দু ধর্মকে নির্মুল করা । আর তিনি ভারতীয় ইতিহাসে ইসলামিকরণ করাকে মূলত এর অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন । তার এই কাজে দোসর ছিলেন প্রথম কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদ । মৌলানা আজাদ ভারতের হিন্দু বীরদের গৌরবোজ্জল অধ্যায়কে উপেক্ষা করে মহিমান্বিত করেছিলেন হানাদার মুঘলকে । তাই আমরা পড়েছি মুঘল সম্রাট আকবর নাকি ‘ধর্মনিরপেক্ষ ও মহান’ শাসক ছিলেন । যেখানে প্রকৃত দেশপ্রেমী ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের কাহিনীকে উপেক্ষিত রাখা হয়েছে এতদিন ।
মুঘল আমলের দুই হিন্দু বীর ছিলেন মেওয়ারের রাজা রাজ সিং এবং বীর দুর্গাদাস রাঠোড । অথচ আমরা অনেকেই ওই দুই মহান হিন্দু বীরের সম্পর্কে কিছুই জানি না । আওরঙ্গজেব যখন মথুরার শ্রীনাথ মন্দির ভেঙে দেন, তখন মেওয়ারের রাজা রাজ সিং পালটা ১০০ টি মসজিদ ভেঙে দেওয়া করান । ছেলে ভীম সিংকে তিনি গুজরাটে পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘সব মসজিদ ধ্বংস করে দিয়ে এস’ । পিতার আদেশ পেয়ে ভীম সিং ৩০০ মসজিদ ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে আসেন ।
বীর দুর্গাদাস রাঠোড আওরঙ্গজেবকে পরাজিত করেছিলেন এবং মহারাজ অজিত সিংকে রাজা ঘোষণা করেন । কথিত আছে দুর্গাদাস রাঠোড়ের খাবার, জল, ঘুম সবই ছিল তাঁর ঘোড়ার পাশে,যে ঘোড়ায় চড়ে তিনি যুদ্ধে যেতেন । সেখানকার লোকগীতিতে গাওয়া হয় যে দুর্গাদাস না থাকলে রাজস্থান শ্মশানে পরিনত হত । শিবাজীর মতো সাহসী দুর্গাদাস রাঠোড়ও গেরিলা যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন।
আওরঙ্গজেবের সময়ে দক্ষিণে শিবাজী, রাজস্থানে দুর্গাদাস, পশ্চিমে শিখ গুরু গোবিন্দ সিং এবং পূর্বে লাচিত বুরফুকান, বুন্দেলখণ্ডে রাজা ছত্রশাল প্রভৃতি অনেক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং তাদের প্রতিরোধের ফল হল আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর সাথে সাথে মুঘল রাজবংশের পতন নিশ্চিত হয় । ইতিহাস সাক্ষী, যখনই সন্ত্রাসীরা চরম বর্বর হয়েছে, হিন্দুরা আরও সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ করেছে। হিন্দুরা তরবারি হাতে নিয়ে সর্বদা হানাদারদের প্রতিরোধ করেছে ঠিকই, কিন্তু সুফি ও খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের কাছে পরাজিত হয়েছে । আর তারা সফল হয়েছে হিন্দুদের উদারতা ও স্বাধীন চেতনার জন্য । আজও এই দুই দুর্বলতা হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে । কারন “সেকুলারিজম’ নামে ‘মারাত্মক ব্যাধি’ হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত দুই রাষ্ট্র ভারত ও নেপালের হিন্দুদের অস্তিত্ব সঙ্কটের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
ভারতে বাবর প্রায় ৪ বছর রাজত্ব করেন। হুমায়ূনকে পিটিয়ে বিদায় করা হয়। তারপর আকবর মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং জাহাঙ্গীর, শাহজাহানের ও আওরঙ্গজেবের পর মুঘল শাসনের অবসান ঘটে । আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে আওরঙ্গজেব ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১০২ বছর ভারত ছিল মুঘল হানাদারদের দখলে । কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এই ১০০ বছরই মূলত প্রাধান্য পেয়ে এসেছে ।
তার আগে ভারতের হিন্দু রাজাদের হাজার হাজার বছরের বীরগাথাকে সুপরিকল্পিত ভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । হাম্পি নগরীতে হীরা ও মাণিকের রাজারা ছিল, মহাভারতের যুদ্ধের পর জরাসন্ধ রাজবংশের ২২ জন রাজা ১০০৬ বছর, প্রদ্যোত রাজবংশের ৫ রাজার ১৩৮ বছর, ১০ শিশুনাগ রাজবংশের ৩৬০ বছর, নন্দ রাজবংশের ৯১০ বছর রাজত্বকাল ভারতের ইতিহাসের কোথাও উল্লেখ নেই । এছাড়া ১২ মৌর্য শাসক ৩১৬ বছর শাসন করেছেন, ১০ শুঙ্গ শাসক ৩০০ বছর,৪ কানভন ৮৫ বছর, ৩৩ অন্ধ্র ৫০৬ বছর এবং ৭ গুপ্ত ২৪৫ বছর শাসন করেছেন। রঘুবংশী লোহানা (লোহর রানা), যিনি পাকিস্তানের সিন্ধু, পাঞ্জাব থেকে আফগানিস্তানের সমরকন্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন, যিনি সমগ্র উত্তর-পশ্চিম ভারতকে শাসন করেছিলেন এবং সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়ে এই দেশকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, যিনি আলেকজান্ডারের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন মুহম্মদ গজনীর পিতা সুবক্তগিনকে নিজ দরবারে হত্যা করে তার মাথা মুলতানে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন,এসব ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি ।
কাশ্মীরে, কার্কোটক রাজবংশের ললিতাদিত্য মুক্তপিদ সেই আরবদের পরাজিত করেছিলেন যারা শতাব্দী ধরে কাশ্মীরের দিকে ভয়ে চোখ তুলতে পারেনি। কাশ্মীরের সবচেয়ে শক্তিশালী রানী দিদ্দা লোহরানা (লোহার ক্ষত্রিয়) সবচেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতিতে শাসন করেছিলেন এবং সমস্ত শত্রুদের নির্মুল করেছিলেন । কিন্তু আজ রানী দিদ্দা লোহরানার নাম ক’জন জানে?
তারিখ হিন্দওয়া সিন্ধু এবং চাচনামা প্রথম আরব মুসলিম আক্রমণ,যেখানে করাচির নিকটবর্তী দেবালে ৭০০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করা হয়, ভারতের ইতিহাস সেই নির্মম ঘটনাকে উপেক্ষা করেছে ।আর যাঁরা এই আরবদের পিটিয়ে ইরাকে পাঠিয়েছিলেন সেই বাপ্পা রাওয়াল,প্রথম নাগভট্ট , পুলকেসিনের মতো সাহসী যোদ্ধারা ইতিহাসের পাতায় উপেক্ষিত হয়ে আছে ।
এছাড়া বিক্রমাদিত্য ১০০ বছর রাজত্ব করেন।এত বড় সম্রাট হয়েও তিনি ভারতের ইতিহাসে অজ্ঞাত হয়ে গেলেন। বামপন্থী ইতিহাসবিদরা নেহরুবাদের ভাবধারায় অনুপ্রানিত হয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে এমন অসংখ্য হিন্দু বীরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । তাই নতুন করে ভারতের ইতিহাস লেখার কথা উঠলেই তারা চিল চিৎকার শুরু করে দেন । এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস,চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগত সিং, মাস্টারদা সূর্য সেনের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাস ভারতের আধুনিক প্রজন্ম ভুলতে বসেছে । তাদের অনুপ্রেরণা করে তোলা হয়েছে ‘বিনা খড়গ বিনা ঢাল /বাপু তু কর দিয়া কামাল’-এর মত এক আজগুবি এক মতাদর্শকে । এই ইতিহাসকে এভাবে উপস্থাপন করার জন্য শুধুমাত্র একজনই দায়ী এবং তিনি হলেন ভারতের প্রথম কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদ। এখন যদি ইতিহাসে সেই সময়ের প্রকৃত হিন্দু যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়, বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষাকে গেরুয়াকণের অভিযোগ তোলে!’
সৌজন্য স্বীকার : মডিফাইড হিন্দু ৯