এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ আগস্ট : রাজ্য রাজনীতিতে একটি সুপরিচিত নাম হল আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান(Nazia Elahi Khan) । বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার এই নেত্রীর অকপট কথাবার্তা বহু মানুষ পছন্দ করেন,অন্যদিকে তেমনি নাজিয়ার নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এনিয়ে চরম আক্রোশের দেখা যায় । ফের একবার অকপটে নিজের মনের কথা প্রকাশ করেছেন ৩১ বর্ষীয়া নাজিয়া । তিনি জানিয়েছেন,তিনি বিধবা এবং এক সন্তানের জননী । ফের বিয়ে করলে তাঁর প্রথম পছন্দ সেনাকর্মী অথবা কোনো সনাতনী হবে ।
পাকিস্তানি ব্লগার সাহিলা খানের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নাজিয়া ইলাহি খান বলেন,’আমি বিয়ে করলে প্রথম পছন্দ সেনাকর্মী অথবা সনাতনী হবে । সিঁদূর আর সাতপাকে বন্ধনের যে বিশ্বাস সনাতনীদের মধ্যে রয়েছে,মহিলাদের প্রতি যে সম্মান সনাতনীদের মধ্যে আছে,তা মুসলমানের মধ্যে আমি কখনো দেখিনি । সনাতনীরা একবার বিয়ে করলে আমৃত্যু স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে না । সাতপাকের বন্ধন মানে সাত জনম,সাত বচন । তবে ইসলাম ছাড়বো না । যদি কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় তাহলে উভয়ে উভয়ের ধর্মকে শ্রদ্ধা করব ।’
তিনি পাকিস্তানি ব্লগারকে বলেন,’ তুমি ভেবে দেখো, এখানে(মুসলমানদের মধ্যে) সাত দিনে কি হবে তার ঠিক নেই- তালাক না কি দিয়ে দেবে কে জানে । আর সনাতনীরা সাতপাকে বন্ধনের সাথে সাথে সাত জনম আর সাত বচনের কথা বলে । সনাতন ধর্ম প্রথম থেকেই মহিলাকে দেবী স্বরূপ দেখে ।’
নাজিয়া ডান হাতে দেবী সরস্বতীর মূর্তি ও বাম হাতে সংবিধানের একটা কপি নিয়ে বলেন,’নাজিয়া ইলাহি খানের খানের এক হাতে মা সরস্বতী, আর অন্য হাতে ভারতের সংবিধান । মা সরস্বতী হলেন শিক্ষা, কোরানের প্রথম শব্দ ইকরা । ভারতে বসবাসকারী যে নাগরিকের সংবিধানের উপর আস্থা নেই,তার ভারতে থাকার কোনো অধিকার নেই । ভারতে থাকতে গেলে সর্ব প্রথম সংবিধানকে রাখতে হবে । এই দুই বিষয়ে নাজিয়া ভরসা করে ।’
মুসলিম সমাজে নারীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে নাজিয়া বলেন,’মৌলবী, মোল্লারা তো বলে যে মহিলা মনোরঞ্জনের বস্তু । আমি কি শিশু নাকি যে মনোরঞ্জন করব? মৌলবী, মোল্লারা তো এটাও বলে যে মহিলাদের পর্দার আড়ালে থাকতে হবে । তাই বলে আমি কি পর্দার আড়ালে নিজেকে রাখবো ? মৌলবী, মোল্লারা এও বলে যে মহিলাদের কম কথা বলা উচিত । তাহলে আদালতে গিয়ে আমি কি মুখে তালা বা ফেবিক্যুইক লাগাবো ? মৌলবী, মোল্লাদের কথায় মহিলা হল বাচ্ছার জন্ম দেওয়ার মেশিন,আর ওদের মনোরঞ্জনের বস্তু করা হয়েছে । মৌলবী, মোল্লারা কি চায় নিজেরাই জানে না । পাকিস্তান আর ভারতের মৌলবী, মোল্লাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই । পার্থক্য শুধু এটাই যে পাকিস্তানে মসজিদে বোম চালানো যায়,১২-১৩ বছরের মেয়েকে খুব সহজে নিকাহ করে নিতে পারে । আর এখানে ওসব সম্ভব নয় । কারন এখানে আইন খুব কঠোর । আইনকে আরও কঠোর করার কথাবার্তা চলছে । সেই সাহসে ভারতের মুসলিম মহিলারা বলতে শুরু করেছে আমাদের ক্ষেত বলো না । আমাদের কন্ট্রাক্ট করো না,কারন আমরাও মানুষ । এসব শুনে মৌলবী, মোল্লাদের খারাপ লাগছে,কারন এতদিন তারা মুসিলিম সমাজকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল ।’
তিনি মুসলিম ধর্মগুরুদের নিশানা করে বলেন,’ মৌলবী, মোল্লারা টিভি চ্যানেলে বসে ৭২ কুমারী হুরের জন্য প্রার্থনা করে । কিন্তু মেয়েদের সুশিক্ষার জন্য প্রার্থনা করতে ওদের দেখা যায় না ।
আমি এক বিধবা,আমার এক সন্তান আছে । কিন্তু আমি যদি ফের বিয়ে করার কথা চিন্তা করি তাহলে আমার প্রথম পছন্দ হয় সেনাকর্মী হবে, নচেৎ কোনো সনাতনী হবে । একজন সনাতনী ২০ বছর বয়সে বিয়ে করলেও আমৃত্যু স্ত্রীর সঙ্গ ছাড়ে না ।’
ইসরোর মহিলা বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করে নাজিয়া ইলাহি খান বলেন,’তুমি দেখো,মোদীজি যখন ইসরোর অফিসে গিয়েছিলেন তখন মহিলা বিজ্ঞানীদের কত স্বাভাবিক দেখা গেছে । শাড়ি পরে,সিঁদূর লাগিয়ে এসেছিলেন মহিলা বিজ্ঞানীরা । আর ভাবো যে ওই সমস্ত মহিলা বিজ্ঞানীদের স্বামীরা কতটা তাদের অগ্রাধিকার দেয়, ৪০-৪২ দিন মহিলা বিজ্ঞানীরা ইসরোর দলের সাথে রইল,এটা যদি কোনো মুসলিম মহিলা হত তাহলে তার স্বামী তালাকের চিঠি ইসরোর অফিসে পাঠিয়ে দিত । সনাতনীরা শিক্ষার মূল্য বোঝে,রাষ্ট্রপ্রেমী মহিলাদের আরও উৎসাহ দেয় । সনাতনীদের মাথায় কুচিন্তা আসে না ।’
চন্দ্রপৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩ অবতারণ স্থলের নাম ‘শিবশক্তি’ রাখার প্রসঙ্গে নাজিয়া বলেন,’শিবশক্তি নাম দেওয়ায় ভারতের কংগ্রেসের মত বিরোধী দলগুলি,মুসলমানরা এবং পাকিস্তানের লোক বিরোধিতা করছে । তাহলে কি নাম দেবে? কারবালা দেবে ? আমরা পাকিস্তানে নেই,হিন্দুস্থানে আছি । রাহুল গাঁধীরা ৪০০ থেকে ৪০ এ এসেছে কেন? কারন ওরা মহিলাদের সম্মান দিত না ।’
‘শিবশক্তি’ নামের ব্যাখ্যা দিয়ে নাজিয়া বলেন, ‘শিবকে গোটা জগতের পিতা মনে করা হয় । আর শক্তির অর্থ হল নারী সশক্তিকরণ । সনাতন ধর্ম সাড়ে চার হাজার বছরের প্রাচীন ধর্ম । সনাতন ধর্ম প্রথম থেকেই মহিলাকে দেবী স্বরূপ দেখে । সীতা মায়ের অপহরণ হয়েছিল, ওনার নাকের নথের কথা ওনার দেবর পর্যন্ত জানতেন না । কারন দেবর কখনো তার বউদির চেহারা দেখেনি । সম্পর্কের এই সীমানা সনাতন ধর্ম আমাদের শেখায় । এই আবেগকে ভারত ও পাকিস্তানের মুসলিমরা বুঝতে পারবে না । এই আবেগকে ভারতের বিরোধী দল বুঝতে পারবে না । এই আবেগকে তারাই বুঝতে পারবে, যারা মহিলাদের সবচেয়ে বেশি মানসম্মান দেয় । যারা দেবীর চরণে ফুল দেয়,তারাই একমাত্র এই আবেগ বুঝতে পারবে । মুসলমানরা তো জীবনেও বুঝতে পারবে না এই আবেগ । কারন কোরানে তো দেবীর কোনো অস্তিত্বই নেই ।’।