দিন কয়েক আগে এক কোটি পুরষ্কার ঘোষণা করা কুখ্যাত মাওবাদী সন্ত্রাসী মাদভি হিদমা(Madvi Hidma)কে নিকেশ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী । যে দান্তেওয়াড়া ও ঝিরাম ভ্যালি সহ ২৬টি বড় মাওবাদী হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিল । বছরের পর বছর ধরে ২৬০ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী ছিল এই হিদমা৷ তাকে নিকেশ করায় ছত্রিশগড়ের আদিবাসীরা উল্লসিত । ভারতীয় সেনার সঙ্গে গ্রামবাসীদের খুশিতে নাচতে পর্যন্ত দেখা গেছে । কিন্তু বামপন্থী ও উগ্র বামপন্থী দলগুলি মাদভি হিদমার মৃত্যুতে মড়াকান্না শুরু করে দিয়েছে । দিল্লিতে উগ্র বামপন্থী এমনকি শ্লোগান তুলেছে : “কমরেড হিদমা অমর রহে” এবং “কত হিদমা মারবে ? প্রতিটি ঘরে হিদমার জন্ম হবে” । তাদের কথায় হতদরিদ্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য অস্ত্র ধরতে বাধ্য হয়েছিল হিদমা । কিন্তু বাস্তব চিত্র হল পুলিশ রেকর্ড অনুসারে হিদমা ২৬০ জন নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি ৮১ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল ।
বামপন্থীদের প্রকৃত স্বরূপ
এই সমস্ত কথিত প্রোলেতারিয়েত প্রেমীদের আসল স্বরূপ জানতে হলে চলতি বছরের আগস্ট মাসে ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় ৩০ বছর বয়সী এক জনদরদী শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডের কথা জানা আবশ্যক । লক্ষ্মণ বরসে নামে ওই শিক্ষক সরকারি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী পরিদর্শনকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন । যিনি পরিচিত ছিলেন ‘শিক্ষাদূত’ হিসাবে৷ হত্যার দিন সন্ধ্যা ৭.৩০ টার দিকে জগরগুন্ডা থানার অন্তর্গত সিলগার গ্রামে তার বাড়িতে ঢুকে সশস্ত্র নকশালরা তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে । তথ্য অনুযায়ী, বরসের পরিবারের সদস্যদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরও মারধর করে নকশালরা।
এর আগে ১৪ জুলাই, পার্শ্ববর্তী বিজাপুর জেলার ফারসেগড় এলাকায় নকশালরা পুলিশের গুপ্তচর সন্দেহে দুই শিক্ষাদূতকে হত্যা করে। নিহত শিক্ষক (শিক্ষা দূত), বিনোদ মাড্ডে (৩২), পিল্লুরের বাসিন্দা, কোন্ডাপাদগু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অন্য শিক্ষক, সুরেশ মেটা (২৮), টেকমেটার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। উভয়ের মৃতদেহ তাদের গ্রামের কাছে জঙ্গলে ফেলে রেখে যায় ঘাতক নকশালরা ।
তার আগে,চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি, একই কারণে পার্শ্ববর্তী দান্তেওয়াড়া জেলায় একজন শিক্ষাদূতসহ দুইজনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সাথে সাথে, চলতি বছর এ পর্যন্ত সুকমা, বিজাপুর এবং দান্তেওয়াড়া সহ সাতটি জেলা নিয়ে গঠিত বস্তার অঞ্চলে মাওবাদী হিংসায় প্রায় ৩০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। কিন্তু দেশের তথাকথিত কোন বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বা ছাত্র -ছাত্রীদের থেকে শিক্ষক এবং সাধারণ নাগরিকদের হত্যার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ সভা বা মোমবাতি মিছিল করতে দেখা যায়নি । কিন্তু জল্লাদ নকশালকে পুলিশ যখন নিকেশ করে তখন সেই বামপন্থী এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ ছাত্র-ছাত্রীরা গর্ত থেকে বেড়িয়ে উৎপাত শুরু করে । যেকারণে বামপন্থীদের মানসিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে । মুখে প্রোলেতারিয়েতদের কথা বললেও নকশালরা আদপেই কি বঞ্চিত মানুষের স্বার্থের কথা ভাবে ? এই প্রশ্ন উঠছে । অনেকেই বলছেন যে জঙ্গলের আড়াল থেকে হামলা চালানো নকশালদের থেকে শহুরে নকশালরা আরও বেশি বিপজ্জনক । রাষ্ট্রের কল্যাণে এদের মূলোৎপাটন করা দরকার বলে মনে করেন অনেকে ।।

