এইদিন ওয়েবডেস্ক,রাঁচি,১৭ ডিসেম্বর : ‘লাভ জিহাদ’-এর অস্তিত্ব আছে কি নেই এনিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির বিভিন্ন মত । তথাকথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলির দাবি ‘লাভ জিহাদ’ আদপে বিজেপির অপপ্রচার । কিন্তু ভারতের বামফ্রন্ট শাসিত রাজ্য কেরালায় লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে হিন্দু ও খ্রিস্টান মেয়েদের ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যুক্ত হতে বাধ্য করার অভিযোগ ইতিপূর্বে বহুবার উঠেছে । তবে শুধু কেরালাই নয়, ন্যাশানাল শুটার ঝাড়খণ্ডের রাঁচির তারা শাহদেওরকে (Tara Shahdeo)লাভ জিহাদে ফাঁসিয়ে কিভাবে তার জীবনকে নরক করে তোলা হয়েছিল তা পরিবর্তী কালে সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজেই প্রকাশ করেছিলেন ওই তরুনী ।
তারা শাহদেওর ২০১৪ সালে রাঁচির হিন্দপিরি থানায় স্বামী রঞ্জিত কোহলি ওরফে রকিবুল হাসান,শাশুড়ি কোশল পারভিন,ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহমেদসহ কয়েকজনের এফআইআর দায়ের করেছিলেন । তার অভিযোগের পরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায় দেশজুড়ে । এই ষড়যন্ত্রে ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন ডিজিপির বিরুদ্ধেও ‘লাভ জিহাদ’ ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তারা শাহদেওর ।
একটা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তারা শাহদেওর জানান, ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহমেদ প্রথমে বিয়ের প্রস্তাব নিয়েছিল । সে রকিবুল হাসানকে রঞ্জিত কোহলি হিসাবে পরিচয় দেয় । এরপর ২০১৭ সালের ৭ জুলাই তাদের হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয় । প্রথমে রকিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে বুঝতেই পারেননি যে সে আদপে একজন মুসলিম । বিয়ের পরদিন ৮ জুলাই তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে কাবা মসজিদের ছবিসহ বিভিন্ন মুসলিম সিম্বল দেখতে পান । এনিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তার স্বামী তাকে জানায় যে তার নাম রঞ্জিত কোহলি নয়,বরঞ্চ তার নাম রকিবুল হাসান এবং সে একজন মুসলিম । তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় । নিকাহ করার জন্য চাপ দিতে থাকে তারা । কিন্তু তিনি হিন্দু হয়ে নিকাহ করতে অস্বীকার করলে তার ভাবা ও ভাইকে মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেখায় রকিবুল হাসান ও মোস্তাক আহমেদ । শেষে তিনি রকিবুলের বাড়িতে আসা কাজীর সামনে তিন বার ‘কবুল হ্যায়’ বলতে বাধ্য হন । কিন্তু যখন তিনি কবুলনামা পড়েন, দেখতে পান যে তার নাম রাখা হয়েছে সারা পারভিন । তিনি তাতে স্বাক্ষর করেননি । এরপর থেকে তার উপর শুরু হয় নারকীয় নির্যাতন ।
তারা শাহদেওর বলেন,’আমি যাতে পালাতে না পারি সেজন্য বাড়ির বাইরে ২৪ ঘন্টা পাহাড়ার রাখা হয়েছিল নিরাপত্তারক্ষীদের । আর বাড়ির ভিতরে আমার উপর চলত শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন । দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে আমি সেই নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করেছি । আর ওই মুসলিম পরিবারের খপ্পর থেকে পালানোর সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছি । অবশেষে একদিন সেই সুযোগ এসে যায় । রকিবুল হাসান ওইদিন দিল্লি গিয়েছিল । সেই সুযোগে শৌচাগারের টিসুপেপারে আমার ভাইয়ের নম্বর লিখে আমার জন্য রাখা পরিচারিকে দিয়ে ভাইকে ফোন করে পুলিশ এনে আমায় উদ্ধার করার জন্য বলতে বলি । ওইদিন ওই পরিচারিকা যদি আমার পাশে না দাঁড়াত তাহলে আজ হয়ত আমি জীবিত থাকতাম না ।’
তিনি বলেন,’পুলিশ এলেও ঘটনাটি পারিবারিক হিংসা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল তৎকালীন ডিজিপি । শেষে আমি সিবিআই তদন্তের দাবি জানাই ।’
জানা গেছে,সিবিআই ২০১৫ সালে তদন্তের দায়িত্ব হাতে নেয় এবং দিল্লিতে একটি মামলা নথিভুক্ত করে । বিশেষ সিবিআই আদালত এই মামলায় তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল । তারা শাহদেওর প্রাক্তন স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, তার প্রাক্তন শাশুড়িকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মুশতাক আহমেদকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় সিবিআই আদালত । এই মামলায় প্রসিকিউশন ২৬ জন সাক্ষীকে আদালতে পেশ করে, তাদের জেরা সাত মাস ধরে চলে। ২০১৭
সালে, সিবিআই মামলায় একটি চার্জশিট দাখিল করেছিল, যেখানে তারাকে তার স্বামীর দ্বারা তার ধর্ম পরিবর্তন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
তারা শাহদেওর বলেন,’সাংবাদিকরা আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল আমি লাভ জিহাদের শিকার হয়েছি কিনা । কিন্তু লাভ জিহাদ সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারনা ছিল না । তখন আমি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাই । সাংবাদিকেরা আমায় জানান ধর্ম পরিচয় গোপন রেখে হিন্দু মেয়েদের ফাঁসিয়ে জোর করে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার নাম হল লাভ জিহাদ । একথা শুনে আমি উত্তর দিই যে, ওই সমস্ত কিছুই আমার সাথে ঘটেছিল…. আমিও লাভ জিহাদের শিকার হয়েছিলাম ।’ হিন্দু মেয়েদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ যে মুসলিমদের এই ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করুন, লোকলজ্জা বা মৃত্যুর ভয়ে নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে লাভ জিহাদিদের জেলে পাঠানোর জন্য রুখে দাঁড়ান ।
২০১৮ সালের জুন মাসে রাঁচির একটি পারিবারিক আদালত শাহদেওকে বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করেছিল । বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি এক হিন্দু যুবককে বিয়ে করেন । বর্তমানে সুখের সংসার তাঁর ।।