এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,৩১ জানুয়ারী : সস্তা জনপ্রিয়তা ও ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকার নিজেদের মত করে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করে রেখেছে । ওই স্কীমগুলির অধীনে ভোটারদের মাসিক ৫০০-১০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে । মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির থেকে ওই প্রকল্পগুলি চালু করার একটাই উদ্দেশ্য হল সস্তা জনপ্রিয়তা ও ভোটব্যাঙ্ককে সুরক্ষিত রাখা । এদিকে এই ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’র কারনে রাজ্যগুলিকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান ব্যয় করতে গিয়ে রাজকোষ শূণ্য হয়ে যাচ্ছে । যেকারণে আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে ওই সমস্ত রাজ্যগুলি । ওই সমস্ত রাজ্যগুলির ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’র উপর এবার লাগাম টানতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আর তার শুরুটা হতে পারে নিদারুন আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা দক্ষিণের সিপিআই(এম) শাসিত রাজ্য কেরালাকে দিয়ে ।
সিপিআই(এম) শাসিত কেরালা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ‘ভ্রান্ত নীতি’র ঘোর বিরোধী রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান । অত্যন্ত মৃদুভাষী, ভদ্র, সাহসী এবং বিনয়ী আরিফ মহম্মদ খান কেরালার মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট সরকারের সৃষ্টি কিছু প্রকল্পের উপর লাগাম টেনে ধরেছেন । একারণে রাজ্যপালকে সরাতে উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম । সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই নিত্যদিন রাজ্যপালকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং কালো পতাকা দেখায় । তাতেও দৃঢ়চেতা আরিফ মহম্মদ খানকে বাগে আনতে পারছে না সিপিএম ।
গত ২৫ জানুয়ারী কেরালা বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ছিল । সিপিএম সরকারের তরফে রাজ্যপালকে উদ্বোধনী বক্তৃতা পাঠের জন্য একটি লিখিত বয়ান দেওয়া হয়েছিল । সেই বয়ানের ছত্রে ছত্রে ছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র নিন্দা, কেরালাকে আর্থিক সংকটে ফেলার অভিযোগ, ভারতের ফেডারেল কাঠামো ভাঙার অভিযোগ এবং কেরালা সরকারের ঋণের অধিকার দাবি । কিন্তু সুচতুর আরিফ মহম্মদ খান শুধুমাত্র প্রথম ও শেষ অনুচ্ছেদ পাঠ করে মাত্র দু’মিনিটেই বক্তব্য শেষ করে বিধানসভা ত্যাগ করে রাজভবনে ফিরে আসেন। আর তাতে লাঠিও ভাঙেনি,অথচ সাপও মরেছে । কিন্তু রাজ্যপাল যদি সিপিএম সরকারের লিখিত বয়ান পাঠ করতেন তাহলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত গভর্নর প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন বলে পরের দিন দৈনিক সংবাদপত্রের শিরোনামে দেখা যেত ।
কেরালার রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমস্যা হল জনসাধারণকে ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ নিয়ে । সস্তা জনপ্রিয়তা ও ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখতে প্রতিমাসে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে কেরালা সরকার । রাজ্যপাল জানেন যে সিপিআই(এম) সরকার বেশি খরচ করেছে। আর তার সবই কেন্দ্রের কাছে ধার করা টাকায় । এদিকে রাজ্যের রাজস্বের ভান্ডার শুণ্য, রাজ্যের কোন নিজস্ব আয় নেই । কেরালার পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে রাজ্যে আর্থিক সংকট ঘোষণা করে এবং সিপিআই(এম) সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পদক্ষেপ পর্যন্ত নিতে পারেন রাজ্যপাল ।
রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর যখন থেকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার কেরালা সরকারকে বাজেট বহির্ভূত ভাবে ব্যায়ে লাগাম টানতে শুরু করে তখন থেকে বিপাকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন । আরিফ মহম্মদ খান খুব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারী ব্যয়ের উপর নজর রাখছিলেন । এদিকে কেন্দ্রীয় ঋণের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন । রাজ্যের পক্ষে আইনি লড়াই লড়ছেন সাংসদ তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কপিল সিব্বাল । কপিল সিবাল সংবিধানের ১৩১ ধারার অধীনে বিষয়টিতে বিচারিক হস্তক্ষেপ চাইছিলেন। কেরালা সরকারকে ২৬২ বিলিয়ন টাকা ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি ।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে ভারত সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি বলেছিলেন যে কেরালার সিপিআই(এম) সরকার তার ব্যর্থতাগুলি আড়াল করার চেষ্টা করছে । ভেঙ্কটরামানি বিচারকদের সতর্ক করে বলেছিলেন যে কেরালা সরকার তার আবেদনের মাধ্যমে দাবি করছে যে “দয়া করে আমাদের ব্যর্থতা ঢাকতে অনুমতি দিন”,
এমন দাবি মেনে নেওয়া যায় না । এই বিষয়ে আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেছেন যে আগামী ৩১ শে মার্চের আগে যদি কেরালা সরকার আর্থিক সাহায্য না পায়, তবে রাজ্যটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে যে কেরালার সিপিআই (এম) সরকার সাংবিধানিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে রাজ্যকে আর্থিক বিপর্যয় ঘোষণা করে রাজ্যের শাসনভার নিজের হাতে নিতে পারে । কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে যুক্তি হল যে রাজ্যের সিপিআই(এম) সরকার অযথা ব্যয় এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এমন করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ।
এদিকে কেরালার উদাহরণ অন্যান্য অ-বিজেপি রাজ্যগুলির জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করা হচ্ছে । কারন কেরালা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি অবিজেপি রাজ্য সরকারের মধ্যেও ভোটব্যঙ্ক সুরক্ষিত রাখা এবং সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য অপরিমিত ব্যয় করতে দেখা যায় । ওই সমস্ত অভ্যাস কাটাতে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আর তার শুরুটা তিনি দক্ষিণের বামফ্রন্ট শাসিত রাজ্য দিয়েই শুরু করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে ।।