জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),২৯ মার্চ : গত ২৯ শে মার্চ সিঙ্গুরে একদিকে ঘটা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যজুড়ে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের শুভ শিলান্যাস করেছেন অন্যদিকে সিঙ্গুর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি বিধানসভার দেবীপুর অঞ্চলের নলসারা গ্রামের বাসিন্দারা বঞ্চিত থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। বেহাল রাস্তার হাত থেকে আজও তারা মুক্তি তো পেলইনা এমনকি মুক্তি পাওয়ার আশ্বাসও পেলনা। অথচ মনের মধ্যে আশা ছিল এবার হয়তো তাদের দুঃখের দিন কাটতে চলেছে। উল্টে প্রকল্পের তালিকায় নিজেদের গ্রামের নাম দেখতে না পেয়ে একরাশ হতাশা গ্রাস করল তাদের।
নলসারার গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা দেখলে মনে হবে আলপথের আধুনিক সংস্করণ। আলপথের মত রাস্তার উপর আছে ঘাসের সরু রেখা। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইঁটের টুকরো দেখে মনে হবে কোনো এক সময় হয়তো সংস্কার করা হয়েছিল। রাস্তার মাঝে মাঝে ছড়িয়ে থাকা মোরাম যেন পথচলতি মানুষদের দেখে অবজ্ঞার হাসি হাসছে। অথচ এই রাস্তা ধরে নিত্যযাত্রীরা দেবীপুর স্টেশনে ট্রেন ধরে কর্মস্থলে যায়। এই রাস্তা ধরেই ছাত্রছাত্রীদের দেবীপুর হাইস্কুল যেতে হয়। রাস্তার ধুলোয় তাদের ইউনিফর্মের রঙ বদলে যায়। রোগীদের পরিবারের সদস্যরা ইষ্টনাম জপ করতে করতে রোগীদের নিয়ে যায় হাসপাতালে। সবচেয়ে আতঙ্কে থাকে গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গীরা- কে জানে মাঝ পথে কোনো বিপদ হয়ে যাবে না তো! থলি হাতে মানুষ বাজার করতেও যায়।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ সেই কবে বাম আমলে নলসারার এই রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছিল। তৃণমূল সরকারের আমলে রাস্তার কোনো সংস্কার করা হয়নি, শুধুই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তা দিন দিন বেহাল হতে হতে ভগ্নদশার রূপ ধারণ করেছে। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ শুধু রাস্তা নয়, কোনো এক অজানা কারণে প্রাক্তন বিধায়ক আবুল হাসেম মন্ডলের আমলে বাগান থেকে দেবীপুর স্টেশন যাওয়ার জন্য অনুমোদিত হওয়া ব্রীজ ও পিএইচই আজও বাস্তবের মুখ দেখতে পেলনা। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়িকা নার্গিস বেগম ও বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যের আমলেও গ্রামের রাস্তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অথচ কয়েক বছর ধরে এলাকার বাসিন্দারা দু’হাত ভরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে গ্যাছে। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের নুন্যতম ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে পারলনা।
এলাকার তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী শেখ আসরফের অভিযোগ – বাগান মোড় থেকে যে রাস্তাটি পথশ্রী ও রাস্তাশ্রী প্রকল্পে উদ্বোধনের কথা ছিল রাতারাতি সেটাও পাশের গ্রামে চলে গেলো। পঞ্চায়েত ভোটে কোন মুখে স্থানীয় মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাব?
দেবীপুর অঞ্চলের মাতভাঙা ও নলসারা গ্রামের তৃণমূল বুথ সভাপতি অনুপ কুমার ঘোষ বললেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে রাস্তার সমস্যা ও সেই সংক্রান্ত মানুষের স্বাভাবিক ক্ষোভ সম্পর্কে বারবার জানিয়েছি। প্রতিবার পেয়েছি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। গ্রামের মানুষ থেকে দলীয় কর্মীরা এসবে বিরক্ত। কাজ না হলে আগামী পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করা হতে পারে ।
মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বললেন,উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বদ্ধপরিকর। রাস্তাটির ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নিয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে জানাবেন। তবে পথশ্রী ও রাস্তাশ্রী প্রকল্পে নাম থাকার পর কেন নাম পরিবর্তন হলো এ ব্যাপারে তিনি বিডিও সাহেবের কাছে খোঁজ নেবেন বলে জানান তিনি ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে দলমত নির্বিশেষে এলাকার বাসিন্দারা হয়তো আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন বয়কট করতে পারে। অথবা অন্য কোনো বিকল্প সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে। যতই নেতারা অস্বীকার করুক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত মেমারির একটা অংশ যদি সত্যিই বিকল্প সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে নন্দীগ্রামের মত সেটাও বাংলার রাজনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। দেখার বিষয় হলো তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।।