এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোহিমা,০৬ ডিসেম্বর : নাগাল্যান্ডের মোন জেলায় (Mon District) গ্রামবাসীদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ প্যারা স্পেশাল ফোর্সের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করল নাগাল্যান্ড পুলিশ । উল্লেখ্য,নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর পৃথক তিনটি ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয় । এফআইআর-এ নাগালান্ড পুলিশ অভিযোগ করেছে, ‘সাধারন মানুষকে হত্যা ও আহত করা’ই ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য ।
প্রসঙ্গত,ঘটনার সুত্রপাত শনিবার সন্ধ্যায় । সেই সময় একটি পিকআপ ভ্যানে চড়ে গান গাইতে গাইতে স্থানীয় কয়লা খনির কয়েকজন শ্রমিক বাড়ি ফিরছিলেন ৷ এদিকে সেনাকর্মীরা নিষিদ্ধ সংগঠন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড-কে (এনএসসিএন-কে) এর ইয়ং ওং গোষ্ঠীর জঙ্গিদের গতিবিধি সম্পর্কে গোপন সুত্র থেকে তথ্য পেয়েছিলেন । সেনাকর্মীরা ভুল বশত জঙ্গি ভেবে ওই শ্রমিকদের উপর গুলি চালিয়ে দেয় । এতে ছয় শ্রমিক প্রাণ হারান ।
পুলিশ সুত্রে খবর,এদিকে অনেক রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা বাড়িতে না ফিরলে স্থানীয় যুবক ও গ্রামবাসীরা তাঁদের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে । পরে শ্রমিকদের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন । ওই লোকজন সেনাবাহিনীর গাড়ি ঘেরাও করে । গ্রামবাসীদের সঙ্গে সেনা কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষে বেধে যায় । সংঘর্ষে একজন সেনা নিহত হন । সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা । এরপর আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী গুলি চালালে আরও সাতজন গ্রামবাসী নিহত হন ।এই ঘটনায় রবিবার বিকেলে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায় । ক্ষুব্ধ জনতা কনিয়াক ইউনিয়ন এবং আসাম রাইফেলস ক্যাম্পের অফিসে ভাংচুর করে এবং একাংশে অংশে আগুন দেয় ।হামলাকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিবর্ষণ করে । ফলে আরও অন্তত একজন গ্রামবাসী নিহত এবং দুজন আহত হন ।
রাজ্য পুলিশ রবিবার জানিয়েছে, প্রথম গুলি চালানোর ঘটনাটি সম্ভবত ভুলবশত ঘটে যায় । তবে
তবে ‘শনিবার সন্ধ্যায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সেনার তরফ থেকে স্থানীয় থানায় কোনও গাইড চাওয়া হয়নি বলে পুলিশের দায়ের করা এফআইআরে দাবি করা হয়েছে ।
প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন,ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার আইজিপি নাগাল্যান্ডের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) গঠন গঠন করা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী নিফিউ রিও ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সমাজের সকল অংশকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন । সেই সঙ্গে নাগাল্যান্ড সরকার নিহত ১৩ জনের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ।
এদিকে নাগাল্যান্ডের হিংসাকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক মহল । বিরোধীদলগুলি এই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করছে । এদিকে আবার তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সোমবার হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন । ওই প্রতিনিধি দলে সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিতা দেব, অপরূপা পোদ্দার, শান্তনু সেন এবং দলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব অন্তর্ভুক্ত থাকবেন বলে জানা গেছে ।।