এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ আগস্ট : আগামী কাল ২৭ আগস্ট, বুধবার পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক দিন হতে চলেছে । ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ এর ব্যানারে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ওইদিন “নবান্ন অভিযান”-এর ডাক দেওয়া হয়েছে৷ স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে কোনো শাসকের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাজ্যের মূল প্রশাসনিক ভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়নি । ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের এই অভিযান ঘিরে রয়েছে চরম উৎসাহ । বুধবারের “নবান্ন অভিযান” শুধু এরাজ্যই নয়,গোটা দেশ তাকিয়ে আছে । এদিকে এই অভিযানের ২৪ ঘন্টা আগে উল্লিখিত সংগঠনের নামে থেকে একটা নতুন বিবৃতি জারি করা হয়েছে । সেই বিবৃতিতে কর্মসূচি সম্পর্কে এবং কিছু কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে । পাশাপাশি অভিযান বানচাল করছে এই ডাকের মূল তিন কো-অর্ডিনেটরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে । অন্যদিকে এই কর্মসূচি ঘিরে বড়সড় আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন রাজ্যের এডিজি আইনশৃঙ্খলা মনোজকুমার ভার্মা । পুলিশের অনুমতি না নিয়ে এই অভিযান করায় তিনি এটিকে ‘আইনগতভাবে বেআইনি কর্মসূচি’ বলে অবিহিত করেছেন । পাশাপাশি পুলিশের আশঙ্কা সাধারণ মানুষ ও মহিলাদের সামনে রেখে হামলার পরিকল্পনা করা হতে পারে । এডিজি আইনশৃঙ্খলার কথায়,তাঁদের কাছে খবর আছে, একটা বড় সংখ্যক চাইছে ওইদিন গন্ডগোল হোক। এমন উস্কানি তৈরি করা হবে যাতে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় । আর তার ফায়দা তুলবে মিছিলের আহ্বায়করা ।সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে আগামিকাল কিছু দুষ্কৃতী ব্যাপক গন্ডগোল, অশান্তি, হিংসা এবং বিশৃঙ্খলা ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার । তিনি এও দাবি করেন যে এই অন্দোলনের একজন সদস্য রবিবার কলকাতার একটা পাঁচতারা হোটেলে এক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে কোন দলের সেই নেতা তিনি স্পষ্ট করেননি ।
যাই হোক,এদিকে অভিযানের আগে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে নতুন বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে । তাতে লেখা হয়েছে,প্রিয় পশ্চিমবঙ্গবাসী,পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে ২৭ আগস্ট নবান্ন চলোর যে ডাকটা দেওয়া হয়েছে তাতে শাসক কার্যত নড়ে গেছে, এটা পরিষ্কার। এখন চেষ্টা হচ্ছে যারা এই ডাকের কো-অর্ডিনেটর তাদেরকে আটকানো বা ধরপাকড় করা। তাই জানিনা ওইদিন নবান্নের গেট পর্যন্ত তারা পৌঁছাতে পারবেন কিনা। তাই আপনাদেরকে পুরো কর্মসূচিটা বলে রাখছি। যাতে করে কো অর্ডিনেটররা পৌঁছাতে না পারলেও আপনারাই কো-অর্ডিনেট করে কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারেন।’
এরপর লেখা হয়েছে,’সবার প্রথমে ভাববেন যে নবান্নটা আমাদেরই, এটা মমতা ব্যানার্জির ব্যক্তিগত জায়গা নয়। ফলে বাংলাদেশের গণভবনের মত যেন কোনো লুটপাট না হয়। যারা নবান্নের কাছে পৌঁছাতে পারবেন একসঙ্গে চিৎকার করে শুধু স্লোগান দিয়ে যাবেন। ভাঙচুরের দিকে হাঁটবেন না। পুলিশকে আঘাত করবেন না। প্ররোচনায় পা দেবেন না। তারপর নিজেরাই একটা টিম ঠিক করে নবান্নে উঠবেন।আশা করি আপনাদের চাপের কাছে সিকিউরিটি বিভাগ পিছু হটবে। মুখ্যমন্ত্রীকে গিয়ে ডাইরেক্ট বলবেন, প্লিজ আপনি পদত্যাগ করুন। যদি না করেন চেম্বারের গেটের সামনে ধরনাতে বসে যাবেন,বের হতে দেবেন না। নিচে থাকা লোকজনেরা যতক্ষণ পারবেন থাকবেন বা তারা বাড়ি চলে যেতে পারেন কিন্তু আপনারা নবান্ন ছাড়বেন না। যদি শেষ পর্যন্ত পুলিশ জোর করে আপনাদেরকে বের করে দেয়, তাহলে একটা কথা শুধু ঘোষণা করে দেবেন, সরকার যখন আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করলো না, তখন আমরাও আর এই সরকারকে সহযোগিতা করব না। আজ থেকে শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। আপাততভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত মমতা ব্যানার্জি যতদিন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকবেন, আমরা সম্পত্তিকর এবং বিদ্যুৎ বিল দেব না। লাইন কাটতে এলে আমরাও একযোগে বুঝিয়ে দেব। এই বলে কর্মসূচি শেষ করে দেবেন। আর যদি নবান্নে ঢুকতেই না দেওয়া হয়, বা অনেক দূরে যদি আটকে দেওয়া হয় বা নবান্নে পৌঁছালেও মমতা ব্যানার্জি হয়তো এলেনই না, সেক্ষেত্রেও যেখান থেকেই ফিরে আসতে হবে সেখান থেকেই এই ঘোষণাটা যে যার মত করে করে দেবেন এবং মনস্থির করে বাড়ি ফিরবেন। এবং বলবেন আমরা আর নবান্নে আসব না, এবার নবান্ন কে ছুটতে হবে। যে যার এলাকা থেকেই যা টাইট দেওয়ার দিয়ে দেব। আর একটা কথা বলি, পুলিশি ব্যারিকেড ভেদ করে তখনই এগোবেন যখন আপনাদের চাপে পুলিশ পিছু হটবে। পুলিশকে আঘাত করে নয়। মোবাইলে সবাই ভিডিও করবেন। ওখানে নেট হয়তো বন্ধ রাখা হতে পারে। সুযোগ পেলেই সব আপলোড করবেন। জয় আমাদের হবেই…পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ ।’ যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই বয়ান আদপেই পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করেনি এইদিন ।।