এইদিন ওয়েবডেস্ক,রংপুর,২৮ জুলাই : ইসলামের নবী হজরত মহম্মদকে নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগে বাংলাদেশের রংপুরের ১৫ হিন্দু বাড়িতে লুটপাটের পর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল মুসলিমরা । এই ঘটনায় ১৭ বছরের এক হিন্দু কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । যদিও জানা যাচ্ছে যে কিশোরের নামে ভুয়ো ফেসবুক একাউন্ট খুলে ইসলামের নবীর কটুক্তি করে একের পর এক পোস্ট করা হয়েছিল ।
এদিকে শনিবার রাতে ও রবিবার (২৭ জুলাই) বিকালে দুই দফায় ধৃত কিশোরের বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে জামাত ইসলামির সদস্যরা । ভাঙচুর ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের এক সদস্যও আহত হয়েছেন ।
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এখনও গোটা এলাকায় চরম আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে ।পুলিশ জানায়, গ্রেফতার কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। বাড়ি গঙ্গাচড়ার বেদগাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রামে।
বাংলাদেশ ট্রিবিউন জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে নবীকে নিয়ে কটূক্তি করে ওই কিশোর ফেসবুকে পোস্ট করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হিন্দু কিশোর স্থানীয় একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার দেওয়া ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শনিবার বিকালে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ কিশোরের বাড়িতে যায়। এরপর তাকে গ্রেফতার করে রাত ৮টার দিকে গংগাচড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ফাঁসির দাবিতে স্থানীয় মুসলিমরা মিছিল বের করে। রাত ৯টার দিকে মিছিলটি কিশোরের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয় দফায় কিশোরের দাদুর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়৷ খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গংগাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, ‘ওই কিশোর ফেসবুকে নবীকে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে—এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে গ্রেফতার করে শনিবার রাতে থানায় আনা হয়। এরপর সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে রবিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।’
ওসি আল এমরান বলেন, শনিবার রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। পরিস্থিতি শান্ত করার পর আমরা চলে আসি। রবিবার জোহরের নামাজের পর হাজার হাজার লোক সেদিকে যাবে—এমন খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাই। দুপুর ১টা থেকে পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। এতে পুলিশ সদস্যদের অনেকে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আলী হোসেন গুরতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
ওই এলাকার মেম্বার পরেশ চন্দ্র বলেন, ‘রবিবার দুপুরে গ্রামের পাশে কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার থেকে খিলালগঞ্জে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল, তারা শুধু মানববন্ধন করবে, কারও বাড়ির দিকে আসবে না। কিন্তু বিকাল ৩টার দিকে উত্তেজিত জনতা খিলালগঞ্জ বাজারে থেকে জড়ো হয়ে ওই কিশোরের গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ির দিকে স্লোগান দিতে দিতে আসে। এ সময় আমারসহ অন্তত ১৫টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধরনী কান্ত মোহন্ত, ধনঞ্জয় কুমার, অতুল চন্দ্র, কমলা কান্ত, দুলাল চন্দ্রের বাড়িঘর। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।’
সন্ধ্যা ৬টার দিকে খিলালগঞ্জ বাজারে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। আমরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
রংপুর আদালতের জিআরও ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরে ওই কিশোরকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর বিচারক অনুপম রায়ের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাকে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আগামী ২৭ আগস্ট।।