এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ ডিসেম্বর : গত বছর ৭ই আগস্ট ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ ইজরাইলের নাশকতা চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ খুন করার পর ইসরাইল যখন গাজায় অভিযান শুরু করে তখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী ও তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো । ইসরাইলকে ধিক্কার জানিয়ে রাজ্যজুড়ে মিছিল বের করেছিল সিপিএম । বর্ধমান শহরে মিছিলে করে গেছেন সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম । কিন্তু গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়া আসার পর থেকে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের যে নিপীড়ন চলছে তার প্রতিবাদ মিটিং মিছিল করা তো দূরের কথা সেভসবে নিন্দা জানাতে ভুলে গেছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ওই রাজনৈতিক দলটি । বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সিপিএমের বরিষ্ঠ নেতা সুজন চক্রবর্তীর একটা ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে । সুজনের কথায় বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিমরাই মারা যাচ্ছে । হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে । মন্দির মসজিদে আক্রমণ হচ্ছে । কিন্তু সুজন জানানি যে বাংলাদেশের কটা মসজিদেএ যাবৎ আক্রমণ হয়েছে । আসলে বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের উপর নিপীড়ন চলছে কারণ কট্টর মৌলবাদী ইসলামিক দলগুলো চাইছে না যে হিন্দুরা আছে তাদের দেশে থাকুক । সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্যে সেভাবে হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গ উঠে আসেনি । আর তার এই ‘দ্বিচারিতা’র তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপির বিধায়ক অব্দিবিন তারা পাল । তিনি কটাক্ষ করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান তোদের একই সরকারের প্রধান মৌলবাদী মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে বামপন্থীরা ।
সুজন চক্রবর্তীর ভিডিওটা নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন অগ্রিমিত্রা । ভিডিওতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে বলতে শোনা গেছে,’বাংলাদেশে কিছু পুরো বোকা লোকের সংখ্যায় বেড়ে গেছে কিনা জানিনা । নাকি বিপ্লব হয়েছে ? তার মধ্যে মৌলবাদী শক্তির যে আস্ফালন বাড়ছে… মন্দির মসজিদের উপর দিয়ে আক্রমণ হয়েছে… বহু মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছেন খুন হয়েছেন । তার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের । এমনকি ওখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন । শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে… ভাইস চ্যান্সেলরকে পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হচ্ছে….ইত্যাদি ইত্যাদি। গোটা দেশটির দ্বারা ধ্বংস করছে তাহলে একবার বলছে বাংলা- বিহার-উড়িষ্যা দখল করব, বলছে সেভেন সিস্টার্স দখল করব। এসব বান্ডিল হয়ে যাবে মানুষ রুখে দাঁড়ালে এই মৌলবাদীরা বান্ডিল হয়ে যাবে । কেন ? কারণ বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করেই বাংলাদেশ তৈরি করেছেন । মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা ধ্বংস করতে চায় তারা এসব প্রলাপের মতো আজেবাজে কথা বলছে ।’
প্রতিক্রিয়ায় অতিরিকরা পাল লিখেছেন, ‘সিপিএম নেতারা ফিলিস্তিনে হামলার নিন্দা জানিয়ে সমাবেশের আয়োজন করে, কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার কথা বললে নীরব থাকে। বাংলার মানুষ ও গোটা জাতি বোঝে এই দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এই দলটি স্বভাবতই হিন্দুবিরোধী। ঠিক এই কারণেই সিপিএম নেতারা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিপীড়নের বিষয়ে নীরব থাকেন। বাংলাদেশের বামপন্থীরা সেখানে ইসলামী মৌলবাদীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা ইউনূস সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। তো, বাংলা নিয়ে উচ্চবাচ্য করার বদলে সুজন দা, বাংলাদেশে বামপন্থীদের কর্মকাণ্ডের কথা আগে বলবেন না কেন?’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর ২০২৪, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) পলিট ব্যুরো একটা লিখিত বিবৃতি জারি করেছিল । হিন্দু নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের সমালোচনা করলেও মুসলিমদের প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত করেছে ভারতের ‘হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি বন্য ও উস্কানিমূলক অপপ্রচার’কে । সিপিএমের এই প্রকার ‘ভন্ডামি’তে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । কিন্তু সিপিএমের বারবার কেন মুসলিম তোষামোদী নীতি ? অগ্নিমিত্রার কথায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট ব্যাংক । এই বিষয়ে তিনি সুজন চক্রবর্তীকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষ আপনার রাজনৈতিক এজেন্ডা সম্পর্কে ভালো করেই জানে, যে কারণে নির্বাচনে আপনার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। আপনিও বাংলার রাজনীতিতে নিয়োজিত আছেন শুধুমাত্র ৩০% ভোট ব্যাঙ্কের জন্য।’ তিনি আরো লেখেন,’যদি এই দাবিটি অসত্য হয়, আমরা আপনাকে অবিলম্বে রাস্তায় নেমে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দাবি জানাই। ফিলিস্তিনের জন্য সমাবেশের জন্য যথেষ্ট। এবার সুজন দা, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধভাবে মিছিল করছেন না কেন?’