এইদিন ওয়েবডেস্ক,কুষ্টিয়া,২২ ফেব্রুয়ারী : স্কুলের পড়ুয়াদের ধর্মাচরণের থেকে পড়াশোনায় বেশি মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দিতেন এক মুক্তমনা মুসলিম শিক্ষক । পাশাপাশি ছাত্রীদের হিজাব বা বোরখা না পরে স্কুলের পোশাক বিধি মেনে চলার জন্য বলতেন তিনি । আর তাঁর সেই অপরাধেই ওই শিক্ষক মৌলবাদীদের রোষানলে পড়ে গেলেন । শেষ পর্যন্ত জনৈক এক কট্টরপন্থী ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মুসলিম শিক্ষককে গ্রেফতার করল পুলিশ । ঘটনাটি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী এলাকার । হতভাগ্য শিক্ষকের নাম মোহম্মদ আবু সালেহ (৫০) । তিনি কুমারখালী উপজেলার কয়া চাইল্ড হ্যাভেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং কয়া মালিথাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে । মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয় । বুধবার ভোরে কয়া এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ।
স্থানীয় সূত্রে খবর,উচ্চশিক্ষিত আবু সালেহ একজন মুক্তমনা হিসাবে এলাকায় পরিচিত । ধর্ম নিয়ে বেশি মাতামাতির তিনি ঘোর বিরোধী । এনিয়ে খোলাখুলি নিজের মতামত প্রকাশ করতেন সালেহ সাহেব । তাঁর চাঁচাছোলা বক্তব্যের কারনে অনেকে তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন । তবে এই মানসিকতার জন্য এলাকার মৌলবাদীরা তাঁকে চরম অপছন্দ করেন । কিন্তু মৌলবাদীদের বিশেষ পাত্তা দিতেন না সালেহ সাহেব । তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের যুক্তিবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিলেন । চেয়েছিলেন ধর্ম নিয়ে বেশি মাতামাতি না করে আরও বেশি করে পড়াশোনায় মনযোগী হয়ে উঠুক তারা । স্কুলের ছাত্রীদের বোরকা ও হিজাব পরে আসা তিনি একেবারে পছন্দ করতেন না । দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ছাত্রীদের বোরখা না পরে স্কুলের পোশাক বিধি মেনে চলার কথা বলে আসছিলেন ।
জানা গেছে, সম্প্রতি ছাত্রীরা বিষয়টি তাদের অবিভাবকদের বলে দেয় । এরপর সোমবার এক ছাত্রীর অভিভাবক স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষক আবু সালেহের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করেন । সালেহ সাহেব ছাত্রীর অবিভাবককে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বেশি ধর্মাচরণ করতে গিয়ে তাঁদের সন্তানদের আখেরে পড়াশোনায় ক্ষতি হবে । এছাড়া ছাত্রীদের উপর হিজাব বা বোরখা নীতি চাপিয়ে না দেওয়াই উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন ।
সূত্রের খবর,আবু সালেহের এই প্রকার কথাবার্তা শুনে কোনো উত্তর দিতে না পেরে চুপচাপ ফিরে আসেন ছাত্রীর বাবা । তারপর এলাকায় ফিরে গিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগ তুলে কানাকানি শুরু করে দেন । একথা চাওড় হতেই চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকার কট্টরপন্থীদের দল । মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকার একটি মসজিদে শতাধিক কট্টরপন্থী জড়ো হয় । তারা ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । দুপুর একটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয় । এরপর ওইদিন রাতের দিকে এনামুল হক নামের একজন থানায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করে । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।
মোহম্মদ এনামুল হকের কথায়, আবু সালেহ ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তাই তার শাস্তির দাবিতে থানায় মামলা করেছি । শুধু এনামুলই নয়, মুক্তমনা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলী হোসেন । তিনিও দাবি করেছেন, আবু সালেহ দীর্ঘদিন ধরে ধর্মবিরোধী মন্তব্য করে আসছিলেন। তার উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি ।
তবে কট্টরপন্থীরা কয়া চাইল্ড হ্যাভেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহের কঠিন শাস্তির দাবিতে সরব হলেও বাংলাদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তাঁর গ্রেফতারির নিন্দা করেছেন । তাঁদের দাবি ওই মুক্তমনা শিক্ষককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক ।।