এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৫ জানুয়ারী : বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ছাত্রদের উপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে মুসলিম ছাত্ররা । “আদিবাসী” শব্দ সম্বলিত ছবি অপসারণের প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে মতিঝিলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের এই হামলা হয় । নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাঠিসোঁটা দিয়ে সংখ্যালঘু ছাত্রদের ব্যাপক মারধর করা হয় । তাতে বহু পড়ুয়ার মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন । হামলার পর বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে আরও একটা আশ্চর্যজনক বিষয় হল ইসলামি জিহাদিদের হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল । কিন্তু পুলিশ কার্যত নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করে ।
জানা গেছে,নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা পাঠ্যপুস্তকের পিছনের প্রচ্ছদে “আদিবাসী” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটি ছবিতে । শিল্পকর্মটিতে পাঁচটি পাতা বিশিষ্ট একটি গাছের চিত্র দেখানো হয়েছে, প্রতিটি পাতায় বাংলাদেশের ধর্মীয় বা জাতিগত সম্প্রদায়ের জন্য একটি শব্দ খোদাই করা আছে – মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং “আদিবাসী”। ছবির পাশে “পাতা ছিঁড়ে ফেলা নিষিদ্ধ” লেখা ছিল।
পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালি মুসলিমদের একটি সংগঠন “স্টুডেন্টস অফ সার্বভৌমত্ব”-এর সদস্যরা ১২ জানুয়ারী জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি প্রাঙ্গণ ঘেরাও করার পর বইটির অনলাইন সংস্করণ থেকে ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়।এরপর জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন বুধবার সকাল ১১ টায় এনসিটিবির সামনে ছবিটি অপসারণের বিরুদ্ধে “আদিবাসী ছাত্র” ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘোষণা করে । “স্টুডেন্টস ফর সার্বভৌমত্ব” একই সময়ে একই ভবনের সামনে পাল্টা বিক্ষোভের ঘোষণা করে ।
ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যের পাদদেশে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। পরে, তারা রোকেয়া হলের দিকে রওনা হয় এবং কলা অনুষদ এবং মধুর ক্যান্টিন ধরে মিছিল করে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে।সকাল ১১টার দিকে মতিঝিলের এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থানে বসে স্টুডেন্টস ফর সার্বভৌমত্বের জঙ্গিরা । এদিকে বিক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্ররা এলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাদের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুসলিম ছাত্ররা ৷ আদিবাসী ছাত্রদের ব্যাপক মারধর করে মুসলিমরা৷ পুলিশ দু’দলের মাঝে দাঁড়িয়ে শুধু হুইশেল বাজায় এবং আদিবাসী ছাত্রদের উপর হামলা দাঁড়িয়ে দেখে ।
পুলিশ উভয় পক্ষকে একে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, মুসলিম ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সার্বভৌমত্বের পক্ষের একটি দল ফের লাঠি দিয়ে আদিবাসী ছাত্রদের উপর আক্রমণ করে। ব্যাপক মারধরের ফলে আদিবাসী ছাত্রদের দলটি ভেঙে পড়ে এবং পরে তাদের দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। স্টুডেন্টস ফর সার্বভৌমত্ব লাঠি নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। আন্দোলনরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একজন সংগঠক অলিক ম্রো পরে বলেন,’স্টুডেন্টস ফর সোভেরিটির ছাত্ররা আমাদের উপর আক্রমণ করে। এগারো জন আহত হয়।’ অন্যদিকে স্টুডেন্টস ফর সোভেরিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘আদিবাসীদের আক্রমণে স্টুডেন্টস ফর সোভেরিটির চৌদ্দ জন ছাত্র আহত হয়।’
রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সমাবেশের সময় ম্রো বলেছিলেন,’একদল বিচ্ছিন্নতাবাদীর চাপে তারা গ্রাফিতি সরিয়ে ফেলে। এবং তারা আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে ডাকে। এনসিটিবি কি রাষ্ট্রের পুতুল নাকি সরকার এটি পরিচালনা করে? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। তোমাদের যেমন অধিকার আছে, আমাদেরও অধিকার আছে। কিন্তু তারা এটিকে উল্টে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলার চেষ্টা করে।’ পাঠ্যপুস্তকের ছবিটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,’এখন থেকে, আদিবাসীদের পাঠ্যপুস্তকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাওয়া উচিত।’
স্টুডেন্টস ফর সার্বভৌমত্বের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুহাম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন,’বিদেশী প্ররোচনায় ২০০৭ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নিজেদের ‘আদিবাসী’ বলে দাবি করে আসছে, কিন্তু তারা তা নয়। তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে এবং আমাদের ভূমিতে বাঙালিদের সাথে সহাবস্থান করেছে। ‘আদিবাসী’ বলতে আদিবাসীদের বোঝায়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আদি ভূমি প্রতিবেশী দেশ যেমন মায়ানমার, ভারত, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদিতে অবস্থিত।’
তার কথায়,’২০০৭ সালে জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসীদের উপর একটি ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল। এই ঘোষণাপত্রে কিছু বিতর্কিত অনুচ্ছেদ রয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে আদিবাসী অঞ্চলের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এবং অখণ্ডতা থাকবে না। দেশে কোনও উপজাতীয় আদিবাসী না থাকায় বাংলাদেশ এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি। সেই ঘোষণাপত্রের একটি অনুচ্ছেদ আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয় এবং আরেকটি অনুচ্ছেদ তাদের স্বায়ত্তশাসন এবং তাদের নিজস্ব সরকার গঠনের অধিকার দেয়। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম যে পাঠ্যপুস্তক থেকে এই অসাংবিধানিক শব্দটি অপসারণ করা হোক কারণ এটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ।’।