এইদিন ওয়েবডেস্ক,লাহোর(পাকিস্তান),০৪ জুন : পেশায় পরিচারিকা এক বধূ ৫ মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা। সেই কারনে কাজের চাপ আর নিতে পারছিলেন না । তাই কাজ ছাড়তে চেয়েছিলেন বধূ । আর তার সেই অপরাধের জন্য চুরির অপবাদ দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে একটা ঘরে তাকে আটকে রেখে নির্মম অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠল গৃহকর্তা ও স্থানীয় থানার পুলিশের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট জেলার পাকা ঘরা এলাকায় । বছর আঠাশের আসমা গুলফাম নামে ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন,তিনি পাঁচ বছর ধরে হুদা আদনানের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করছিলেন । এপ্রিলের শুরুতে তিনি আদনানকে জানিয়েছিলেন যে তিনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী এবং শারীরিক অবস্থার কারণে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন না । কিন্তু আদনান বলেছিলেন যে তাকে কাজ ছাড়া চলবে না ।
গুলফাম জানান,তারপর ১৮ এপ্রিল আদনান তার বিরুদ্ধে এক মিলিয়ন রুপি (৪৯০ ইউএস ডলার) চুরির অভিযোগ তোলে । সে ওই টাকা বাথরুমে ফেলে রেখেছিল । পরে নিজেই সেই টাকা সরিয়ে দেয় । তিনি চুরির অভিযোগ অস্বীকার করলে আদনান তাকে একটি ঘরে টেনে নিয়ে যায় । যেখানে আগে থেকেই একজন পুলিশ সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর ইজাজ আহমেদ এবং অন্য তিনজন পুলিশ সদস্য আদনানের স্বামী মিয়া আদনানের সাথে অপেক্ষা করছিলেন ।
গুলফাম মর্নিং স্টার নিউজকে বলেন,’আমাকে দেখার সাথে সাথে ইজাজের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও অভিশাপ দিতে শুরু করে। আমি কথিত চুরির কথা স্বীকার না করলে তারা আমাকে নগ্ন করার হুমকি দেয়, কিন্তু আমি অস্বীকার করলে তারা আমার চুল টেনে ধরে নির্দয়ভাবে মারতে থাকে। নির্যাতনের সময় ইজাজ আমার নখ টেনে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে । প্রচন্ড যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করে উঠি । তা উপেক্ষা করে তারা আমার পেটে লাথি মারে । আমার জরায়ু থেকে রক্তপাত শুরু হয় । তাসত্ত্বেও পুলিশ সদস্যরা এবং তার গৃহকর্তীর স্বামী আমাকে আঘাত করতে থাকে । আমি চিৎকার করেছিলাম, কিন্তু কেউ আমাকে উদ্ধার করতে আসেনি ।’
তিনি বলেন,’আমি এত বছর ধরে সেই বাড়িতে কাজ করেছি, এবং একবারও দম্পতি আমাকে কোনো অন্যায়ের জন্য অভিযুক্ত করেনি। আমি খুব কঠোর পরিশ্রম এবং সততার সাথে কাজ করেছি । তারা আমাকে বিনা অপরাধে সাত দিন ধরে আটকে রেখে বারবার মারধর করেছে । আমি খ্রিস্টান হওয়ার জন্য আমাকে তিরস্কার করেছিল এবং বলেছিল যে আমি মিথ্যা অভিযোগ স্বীকার না করা পর্যন্ত কেউ আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না ।’
জানা গেছে,আসমা গুলফাম অনাগতসহ পাঁচ সন্তানের জননী । তার স্বামী গুলফাম মসিহ পেশায় রিকশাচালক । আসমা মিডিয়াকে বলেছেন,আমার স্বামী অভিযোগ জানাতে সিভিল লাইন থানায় গেলে উলটে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে । এদিকে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২৬ এপ্রিল ছেড়ে দেওয়া হয় ।’ তিনি বলেন,’আমার স্বামী আমাকে একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান । যেখানে আমার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয় । পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বলেন অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে আমার অনাগত সন্তানের জীবন গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে ছিল, তবে ডাক্তাররা আমার সন্তানকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল ।’
আসমা গুলফাম বলেছিলেন যে তিনি সুস্থ হওয়ার পর সিভিল লাইন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু আমার অভিযোগ নেওয়া হয়নি । এরপর আমরা গত ১০ মে শিয়ালকোট জেলা পুলিশ অফিসারের কাছে বর্বরতা এবং বেআইনি ভাবে আটকে রাখার বিষয়ে অভিযোগ জানান । জেলা পুলিশ অফিসার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু অফিসাররা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় ।’।