এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,৩০ এপ্রিল : ইসলামে মূর্তি পূজো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । তাসত্ত্বেও পূর্ব বর্ধমান জেলার কান্দরা গ্রামের কান্দরার ভাণ্ডারীপাড়ার এক মুসলিম পরিবার প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে বংশপরম্পরায় জগন্নাথদেবের পূজো করে আসছে । কান্দরার ভাণ্ডারীপাড়ার বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের শাহ আলম খাদিম ওরফে টিটু খাদিম জগন্নাথ দেবের পূজারী । বসতবাড়ি লাগোয়া টিনের ছাউনি চালে জগন্নাথের মন্দির। পূজো ও নামাজ পাশাপাশি চলে । এযাবৎ এনিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি । টিটু খাদিম বলেন, ‘আমাদের মন্দিরে পুজোপাঠ যেই করতে আসুন কোনও বাধা নেই। মন্দিরে যদি কেউ নামাজ পড়েন তাতেও আপত্তি নেই ।’ আমাদের পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে একই ভাবেই পূজো ও নামাজ পাশাপাশি চলছে বলে তিনি জানান ।
টিটু খাদিমদের বাড়িতে জগন্নাথদেবের পূজোর প্রচলনের পিছনে একটা কাহিনী জড়িয়ে আছে । তিনি জানান যে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে আমাদের এক পূর্বপুরুষ উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় গিয়েছিলেন । সেখানেই তিনি রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন দুই হাত ভাঙ্গা একটি কৃষ্ণমূর্তি । তিনি ওই মূর্তি কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ইসলামিক রীতি অনুযায়ী মূর্তি রাখা বা পুজো করা নিষিদ্ধ। মূর্তিটি বাড়িতে আনার পর আপত্তি ওঠায় বাড়ির পাশে ডোবায় ফেলে দিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর বাড়িতে একের পর এক অঘটন ঘটতে থাকে বলে শুনেছি। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে আবার মূর্তিটি তুলে এনে পুজো শুরু হয় । তারপর থেকে বংশপরম্পরায় পূজো হয়ে আসছে ।
এলাকাবাসীর কেউ বিগ্রহকে ‘জগন্নাথ’ বলে চেনেন। কেউ বলেন ‘বুড়ো ঠাকুর’ । স্থানীয় এলাকা ছাড়াও বীরভূম, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি জেলা থেকেও বহু হিন্দু পুন্যার্থী টিটু খাদিমের বাড়িতে পুজো দিতে আসেন। চারশো বেশি ভক্ত টিটু খাদিমের মন্দিরে নিয়মিত আসেন। অনেকে মানত রাখেন। টিটু বলেন, ‘আমার বাবাই আমাকে পুজোর মন্ত্র এবং উপাচার শিখিয়ে গিয়েছেন ৷’
জানা গেছে,টিটু খাদিমরা ছয় ভাই। তিনি সবার ছোট। দুই দাদা মারা গিয়েছেন। বাবা জাহের আলিম খাদিম ২৩ বছর আগে দেহত্যাগ করেন। মন্দিরের পাশেই বাবার দেহ কবরস্থ করা হয় । টিটুর দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেরা বাইরে কাজ করেন। টিটু কখনও যজমানদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে স্ত্রী টুম্পা খাদিম পুজোপাঠের দায়িত্ব সামলান। সকাল সন্ধ্যা দুইবার পুজো হয়। বুড়ো ঠাকুরের পুজো ছাড়াও মন্দিরে রয়েছে নাড়ুগোপালের মূর্তি,শিব এবং বিভিন্ন দেবদেবীর ছবিও। সারাদিনের বেশিরভাগ সময় টিটু খাদিম মন্দিরে ও বাবার সমাধির সামনে কাটিয়ে দেন।
কান্দরার ভাণ্ডারীপাড়ার গ্রামের এই ঘটনাটি এক অর্থে মর্মান্তিকও । কারন ভারতে মুঘল আমলে অস্ত্রের জোরে হিন্দুদের ব্যাপকভাবে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল । কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও তারা শাশ্বত সনাতনী সংস্কৃতিকে কিছুতেই ভুলতে পারেননি ।।