এইদিন বিনোদন ডেস্ক,২০ নভেম্বর : সঙ্গীত পরিচালক এআর রহমানের দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরেছে। রহমানের স্ত্রী সায়রা বানু ২৯ বছর পর ডিভোর্সের ঘোষণা করেছেন বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম। সায়রা তার আইনি প্রতিনিধি বন্দনা শাহের মাধ্যমে ইন্ডিয়া টুডেকে একটি বিবৃতি দিয়েছেন । বিবৃতিতে বলা হয়েছে,’বিয়ের অনেক বছর পর, মিসেস সায়রা তার স্বামী জনাব এ আর রহমানের কাছ থেকে আলাদা হওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের সম্পর্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানসিক চাপের পরে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও, এই দম্পতি দেখা গেছে যে উত্তেজনা এবং অসুবিধাগুলি তাদের মধ্যে একটি অপূরণীয় ব্যবধান তৈরি করেছে, যা এই সময়ে কোনও পক্ষই পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করেন না। মিসেস সায়রা জোর দিয়েছিলেন যে তিনি ব্যথা থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । মিসেস সায়রা এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে জনসাধারণের কাছ থেকে গোপনীয়তা এবং বোঝার অনুরোধ করেছেন, কারণ তিনি তার জীবনের এই কঠিন অধ্যায়টির মুখোমুখি হয়েছেন।’
দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান হয়ে ওঠার কাহিনী :
এ আর রহমানের জন্ম ১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারী । আগে তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন । তার নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার । বাবা তামিল সঙ্গীত পরিচালক আর কে শেখর এবং মা গৃহবধূ কস্তুরী দেবী। বাবার কাছেই সঙ্গীত জগতে হাতেখড়ি হয় তার । আর কে শেখর তখন মালয়ালম মুভিতে সুরকার রূপে কাজ করছিলেন। তার ছোট ছেলে দিলীপকে সাথে নিয়ে মুভি স্টুডিওতে যেতেন।
দিলীপের ছেলেবেলা ছিল খুব অভাব ও কষ্টের। একটি রহস্যময় রোগে তার পিতা মারা যান। রহমানের বয়স তখন মাত্র ৯ বছর । ওই সময়ে হিন্দু ধর্মের প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠেন ৷ পিতার চিকিৎসার জন্য টাকার অভাব, তার যন্ত্রণা, পরিচিত মানুষের তীব্র উদাসীনতা এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের উপেক্ষা দিলীপকে খুব কষ্ট দেয়। আরো কষ্ট দেয়, বিশেষত তার পিতার মৃত্যুর দিনটি। ওই দিনেই তার পিতার সুর আরোপিত প্রথম মুভিটি রিলিজড হলেও তা তিনি দেখে যেতে পারেননি। এগুলো এতই বেদনাদায়ক ছিল যে আজো এ আর রহমান এ নিয়ে কিছু বলতে চান না।
পিতা শেখর পেছনে রেখে যান তার স্ত্রী কস্তুরী (এখন করিমা বেগম) এবং তিন কন্যা ও এক পুত্র। কাঞ্চনা (দিলীপের বড়) এবং বালা (এখন তালাত) ও ইশরাত। এই তিন বোন ও মায়ের সংসার চালানোর সব দায়িত্ব এসে পড়ে বালক দিলীপের ওপর। ১১ বছর বয়সে তিনি ইলিয়ারাজা সঙ্গীত দলে যোগ দেন কিবোর্ড প্লেয়ার রূপে। ইতোমধ্যে তিনি গিটার বাজানো শেখেন। এভাবে এ আর রহমান চূড়ান্তভাবে মিউজিক ওয়ার্ল্ডে ঢোকেন। তাকে সব রকম অনুপ্রেরণা ও সাহায্য দেন তার মা যিনি চেয়েছিলেন প্রয়াত স্বামীর পদাঙ্ক যেন ছেলে অনুসরণ করে।
দিলীপ তখন অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে যোগ দেন এবং জিঙ্গল (বিজ্ঞাপনী স্লোগান) লেখা এবং এতে সুর দেয়ায় মনোনিবেশ করেন। প্রায় পাঁচ বছর তিনি বিজ্ঞাপনী ব্যবসায়ে কাজ করেন। ওই সময় তিনি ইসলামি আধ্যাত্মিক গানের দিকে ঝোঁকা শুরু করেন। তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ যে মিউজিক অ্যালবামটি তিনি প্রকাশ করেন এর নাম ছিল দিন ইসাই মালাই (Deen Isai Malai)। ইসলামি আধ্যাত্মিক গানের এই সঙ্কলনটি ছিল তামিল ভাষায়।
ওই অ্যালবাম প্রকাশের সময় ১৯৮৮ সালে অর্থাৎ দিলীপের বয়স যখন একুশ তখন তার এক বোনের গুরুতর অসুখ হয়। কোনো চিকিৎসাতেই কাজ হচ্ছিল না। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন পরিবারের এক বন্ধুর উপদেশে তারা যান শেখ আবদুল কাদের জিলানি নামে মুসলিম পীরের কাছে। তিনি পীর কাদরি নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
পিতার রোগের সময় ওই একই পীরের কাছে দিলীপ পরিবার গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা বাঁচেনি । বোনের অসুখের সময় দিলীপের পরিবার যান পীর কাদরির কাছে । কাকতালীয় ভাবে তার বোন বেঁচে যায় । এরপর ২০-এর দশকে তরুণ দিলীপসহ তার গোটা পরিবার ইসলামে ধর্মান্তরিত হন । দিলীপ হয়ে যান এ আর রহমান। পুরো নাম আল্লাহ রাখ রহমান৷
সঙ্গীতশিল্পী এআর রহমান ও সায়রা বানুর ১৯৯৫ সালে নিকাহ হয় । তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে – রাহিমা, আমীন এবং খাতিজা। সাম্প্রতিক সময়ে রহমান রায়ানে কাজ করেছেন , যা ধনুশের সোফোমোর পরিচালনায় চিহ্নিত হয়েছে। তার আসন্ন প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে থাগ লাইফ , ছাওয়া , এবং গান্ধী টকস ।।