এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসাকে রাজনৈতিক বলে চালানোর চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং তাদের জোট সঙ্গী সিপিএম ও কংগ্রেস । যদিও জঙ্গিপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হিন্দু পরিবারগুলো কেউই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত নয় ৷ বরঞ্চ তারা হয় সিপিএম, নয় কংগ্রেসের সাথে যুক্ত । অভিযোগ যে শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধেই স্থানীয় মুসলিমদের হামলার শিকার হয়েছেন তারা । বৃহস্পতিবার রাতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন হওয়া মুর্শিদাবাদের শমশেরগঞ্জ-এর জাফরাবাদের বাসিন্দা পিতা ও পুত্র হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাস যে সিপিএমের কর্মী ছিলেন সেটা জানিয়েছেন মহম্মদ সেলিম । এই সাম্প্রদায়িক হিংসায় একদিকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মুসলিম তোষণের নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে । পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠছে । একারণে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘তোষণবাজ’ আর পুলিশকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে কটাক্ষ করে তুলোধুনো করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ।
তিনি আজ মঙ্গলবার এক্স-কে একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন । ভিডিওটি হল ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহলে আশ্রয় নেওয়া মৃত হরগোবিন্দ দাসের পরিবারের৷ মুসলিমদের হামলায় মৃত হরিগোবিন্দ দাসের ভাইপো অ্যাম্বুলেন্সে কোনরকম লুকিয়ে দুই দুগ্ধপোষ্য শিশু সহ ৮-১০ জন পরিবারের সদস্য প্রথমে ঝাড়খণ্ডের পাকুরে যায় । সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহলে পৌঁছায় ৷ পরিবারের একজন অশীতিপর অথর্ব মহিলাও রয়েছেন । বৃদ্ধা হাঁটতে পারেন না ।
হরিগোবিন্দ দাসের ভাইপো বলেন,’ঘটনার দিন সাড়ে আটটা থেকে নটা নাগাদ কিছু লোক দল বেঁধে এসে আমার দোকানে হামলা করে । দোকানে ভাঙচুর করার পর আগুন ধরিয়ে দেয়৷ তার আগে যার মালপত্র যা ছিল সব লুটপাট করে নেয় । তারপর বাড়ির লোকের উপর হামলা চালায় । বাড়ির দরজা-জানলা সব ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ জাফরাবাদের দুই একটা বাড়ি বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ আমার কাকা এবং ভাইপোকে বাড়ি থেকে টেনে বার করে কুপিয়ে খুন করে৷’ তিনি আরো জানান, তার বৃদ্ধা মাকে রোগী সাজিয়ে একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাতে পরিবারের সমস্ত লোক লুকিয়ে প্রথমে পাকুর এবং পরে রাজমহলে আসেন । তার অভিযোগ পুলিশকে যথা সময়ে ফোন করলেও পুলিশ তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি ৷ অনেক পরে পুলিশ আসে৷ যদিও তার আগেই তার কাকা এবং ভাইপোকে হত্যা করা হয় ।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গকে মৌলবাদী তোষণের স্বর্গরাজ্যে রূপান্তরিত করার মূল কারিগর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মেরুদণ্ডহীন ‘কুছ পরোয়া নেহি’ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ । পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের জ্ঞাতার্থে এই সম্পূর্ণ ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পেশ করলাম, যাঁরা গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নাটকীয় প্রচারে ব্যস্ত যে মুর্শিদাবাদে নাকি আর কোনও ভয়-ভীতির কারণ নেই!’
তিনি লিখেছেন,’কয়েকদিন আগে মুর্শিদাবাদে একই পরিবারের পিতা পুত্রকে (স্বর্গীয় হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাস) বর্বর মৌলবাদী পিশাচরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করবার পর তাঁদের পরিবার কোনও মতে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে এখন প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জের একটি স্থানে আপাতত নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সেখানকার সহৃদয় স্থানীয় হিন্দুরা তাঁদের সুরক্ষার জন্য একটি অস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। অন্য রাজ্যে পরিবারের মৃত সদস্যদের পারলৌকিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন করার পর তাঁদের মুখেই শোনা যাচ্ছে কয়েকদিন আগের বিভীষিকাময় হাড় হিম করা অভিজ্ঞতার কথা…যেখানে একই পরিবারের দুইজনকে ঘর থেকে বের করে জনসমক্ষে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হলেও ভয়-ডরহীন রাজ্য পুলিশ পরিবারের অন্যান্যদের সুরক্ষার জন্য নূন্যতম ব্যবস্থা নেয়নি।’
সব শেষে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’চারঘন্টা পর পুলিশ এলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি ওই পরিবারের! শেষ পর্যন্ত জিহাদীদের চোখে ধুলো দিয়ে কোনও মতে এম্বুলেন্স এ চেপে তাঁদের প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে অন্য রাজ্যে গিয়ে! প্রশাসনের ভূমিকা কতটা অমানবিক, পৈশাচিক এবং হিন্দুবিরোধী হলে একটি রাজ্যের সরকারের প্রতি নিরীহ হিন্দুদের নূন্যতম বিশ্বাসও চলে যায়! স্বজনহারানো অশ্রুসিক্ত প্রতিটি হিন্দু বাঙালি এর যথাযোগ্য উত্তর দেবে। মাননীয়া ব্যর্থ মূখ্যমন্ত্রী, আপনি প্রস্তুত থাকুন মমতা ব্যানার্জি !’

