এইদিন ওয়েবডেস্ক,নেত্রকোনা(বাংলাদেশ),০৪ মে : বাংলাদেশের নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় মুক্তি রাণী বর্মণ (১৬) নামের এক হিন্দু ছাত্রীকে প্রকাশ্য রাস্তায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় অবশেষে গ্রেফতার হল খুনি মহম্মদ কাউছার মিয়া (২১) । সে উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের বাসিন্দা সামছু মিয়ার ছেলে । অন্যদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা নিখিল বর্মণের মেয়ে মুক্তি রাণী । ওই কিশোরী প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ।
মঙ্গলবার স্কুল থেকে ফেরার পথে মেয়েটির পথ আটকে কুপ্রস্তাব দেয় কাউছার । তার এই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে উলটে প্রতিবাদ করলে কাছে থাকা একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেয়েটির মাথায় এলোপাথাড়ি কুপিয়ে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতী । এদিকে কিশোরীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় । কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় কিশোরীকে । শেষে মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর । পরে এনিয়ে স্থানীয় বারহাট্টা থানায় খুনের অভিযোগে ঘাতক মহম্মদ কাউছার মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন নিহত কিশোরীর পরিবার । শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ।
নিহত মুক্তির কাকা লিটন বর্মণ বলেন,’স্কুলে যাতায়াতের পথে আমার ভাইঝিকে দীর্ঘদিন ধরেই উত্ত্যক্ত করে আসছিল কাউছার। বিষয়টি তার পরিবারকেও জানানো হয়েছিল । কিন্তু সে যে ভাইঝিকে খুন করে দেবে কল্পনাও করতে পারিনি আমরা ।’
মুক্তির দিদি রুজিনা রানী বর্মন বলেন, ‘কাউছার আমাকেও উত্ত্যক্ত করত,কুপ্রস্তাব দিত । তার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে আমি পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর নেত্রকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই । আমি কাউছারের বাবা শামছুরের কাছে বিষয়টি জানিয়েছিলাম । কিন্তু শামছুর তখন বিষয়টি হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন । আমি স্কুল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমার বোনকে উত্যক্ত করতে শুরু করে কাউছার । আমার বোনের খুনির ফাঁসি চাই আমি ।’
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,মঙ্গলবার বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ সহপাঠিনীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরছিল মুক্তি রাণী বর্মণ । তারা স্কুল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ছালিপুরা এলাকায় আসতেই কাউছার তাদের পথ আটকায় । সে মেয়েটিকে কুপ্রস্তাব দেয় । কিন্তু ওই কিশোরী তার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে আনা একটা হাঁসুয়া দিয়ে ওই মুসলিম যুবক তার মাথায় কোপাতে শুরু করে । মুক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে ঘাতক যুবক পালিয়ে যায় । তার আগেই ভয়ংকর ওই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে দৌড়ে পালিয়ে যায় কিশোরীর সহপাঠিনীরা । পরে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মুক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের আকন্দ বলেন, মুক্তির পরিবার খুবই গরীব । মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ও মেধাবী ছিল । সে মানবিক শাখার ছাত্রী ছিল । বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। আমরা খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই ।।