প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ আগস্ট : স্বাধীনতার আগের মধ্যরাত যখন গোটা বাংলার মহিলারাদের দখলে সেই সময়ে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছিলেন এক আদিবাসী কন্যা প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যজড়ে তোলপাড় জারি থাকার মাধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের নান্দুর গ্রামে ঘটে যাওয়া এমন নৃশংসা ঘটনায় শিউরে উঠেছিলেন জেলাবাসী।আবশেষে ঘটনার ৯ দিন বাদ পুলিশের জালে ধরা পড়লো খুনি । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম অজয় টুডু । পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় তাঁর বাড়ি হলেও শক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে । জেলার পুলিশ সুপার আমন দীপ আজ শনিবার দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযুক্তকে উপস্থিত করার আগে কীভাবে আসামী ধরা পড়ল সেই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই হত্যা রহস্যের সমাধানে প্রথমে ৯ সদস্যের সিট গঠন করে জেলা পুলিশ। পরে সেটা বেড়ে ২১ জনের টিম হয়। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া থেকে বছর ২৬ বয়সী অজয় টুডুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সে গা ঢাকা দিয়ে ছিল । পূর্ব মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলা পুলিশ এই তদন্তে সাহায্য করেছে বলে আমনদীপ জানান। আরো জানান, দুটি টিম এখনও ব্যাঙ্গালোরে রয়েছে।
পুলিশ সুপারের কথা অনুযায়ী ,ছেলেটি ১৪ আগস্ট রাতে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তাদের মধ্যে ব্যাঙ্গালোরে থাকাকালীন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন নিয়ে দু’জনার মধ্যে বচসার সময় আসামী প্রিয়াঙ্কা হাঁসদাকে গলা কেটে খুন করে। সে কি তবে অস্ত্র সঙ্গে নিয়েই এসেছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করবে।জামাকাপড় উদ্ধার করবে। হেফাজতে নিয়ে আরো তদন্ত চলবে৷ তবেই এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে। ছেলেটি এবং মেয়েটি কি একসঙ্গেই ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরেছিল?এই প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার জানান, হ্যাঁ। তারা ১২ তারিখ একসঙ্গেই ফিরেছিল। এবং ১৪ তারিখ দুপুরে আততায়ী অজয় গাংপুরে আসে বলে পুলিশ জেনেছে। ধৃতকে হেপাজতে নিয়ে খুনের প্রকৃত কারণ জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চালাবে পুলিশ ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বছর ২২ বয়সী নিহত তরুণীর প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা ব্যাঙ্গালোরে একটি শপিং মলে কাজ করতেন। বছর খানেক আগে তিনি শপিং মলে কাজে যোগদেন । ১৪ আগস্ট খুন হওয়ার দু’দিন আগে তিনি নান্দুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।ওই দিন সন্ধ্যায় বাথরুমে যাবার নাম করে তিনি ঘর থেকে বের হন।তারপর থেকে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যাবার পরেও প্রিয়াঙ্কা ঘরে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।মেয়ের খোঁজে নামেন তারা।খোঁজ চালাতে চালাতে বাড়ির অদূরে প্রিয়াঙ্কার গলা কাটা রক্তাত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন।তারা চিৎকার করে কান্নাকাটি জুড়ে দেন ।তা শুনে পাড়া প্রতিবেশীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে যান।খবর পেয়ে বর্ধমান ও শক্তিগড় পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় ।নিহত তরুনীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠায়। খুনির সন্ধানে গঠন করা হয় সিট ।অবশেষে ঘটনার আট দিন বাদে খুনিকে জালে পুরতে পারে পুলিশ ।
তরুণীর বাবা সুকান্ত হাঁসদা পেশায় দরজী। বাড়ির কাছে পিঠেই তাঁর দোকান রয়েছে । তিনি বলেন, আমার মেয়ে পড়াশুনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিল।বি-এ পাশ করার পর দর্শন বিষয়ে এম-এ পড়ার জন্যে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্যাঙ্গালোরের শপিং মলে কাজে যোগ দেয়।তবে কারা তাঁর মেয়েকে নৃশংস ভাবে খুন করলো তার কিছুই জানাতে পারেন নি সুকান্ত হাঁসদা । তিনি শুধু এটুকু বলে ছিলেন ’প্রতিহিংসায়’ কেউ তাঁর মেয়েকে এমন নৃশংস ভাবে খুন করেছে। একই দাবি করেছিলেন,তরুণীর মা কাজল হাঁসদাও ।
এদিকে আদিবাসী তরুণী খুন হওয়ার পর থেকে খুনি ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত মাঝের কটা দিন পুলিশকে নানা স্তরের চাপ হজম করতে হয় । খুনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আদিবাসী সংগঠন পথে নামে।তারা বর্ধমান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভেও অংশ নেয়। বিজেপি মালদার হাবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেন । ভাঙড় কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি নিহত তরুণীর বাড়িতে যান।খুনি গ্রেপ্তার হতে বিলম্ব হওয়ায়
পুলিশি তদন্তের আস্থা হারিয়ে নিহত আদিবাসী অরুনীর বাবা সিবিআই তদন্ত ও দোষীদের যথাযথ শাস্তির জন্য হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন । হাইকোর্টে মামলা ফাইল করার জন্য শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে অনুমতি চাওয়া হয়।মামলাকারীর আইনজীবী দেবপ্রিয় সামন্ত জানিয়েছেন,’মহামান্য হাইকোর্ট আগামী মঙ্গলবার মামলাটি শোনার জন্য দিনক্ষণ ধার্য্য করছেন’।।