এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২১ আগস্ট : সত্যজিৎ রায়,মৃনাল সেন,তপন সিনহাদের মত প্রখ্যাত পরিচালকদের সিনেমা দেখার জন্য আপামর মানুষ মুখিয়ে থাকতেন । উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের নিখাদ প্রেমের ছবিতে উত্তাল হয়ে পড়ত গোটা বাংলার যুব সমাজ । উত্তম-সুচিত্রার একই সিনেমা বহুবার দেখার রেকর্ড আছে অনেক মানুষের । কিন্তু ওই সমস্ত পরিচালক বা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের যুগ চলে যাওয়ার পর থেকেই ধুঁকতে শুরু করেছে বাংলা সিনেমা । স্মার্টফোনের দাপটে অনেক সিনেমা হল আজ বন্ধ । যেকটি হল আজ চালু আছে সেখানে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য ঠাসাঠাসি ভিড় হয়েছে, একথা আজ পারতপক্ষে শোনা যায় না । তাই ছবিতে লাভের মুখ দেখতে বাংলার পরিচালক ও প্রযোজকরা ক্রমশ ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড’
( politically motivated) হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে । তবে এই অভিযোগ আজকের নয়,বরঞ্চ বামফ্রন্টের জমানা থেকেই দেখা যাচ্ছে এই ট্রেন্ড । সাম্প্রতিক কালে দুটি বাংলা ছবির একটিতে মুসলিম প্রেমিকের হাতে কৃষ্ণের বাঁশি এবং অপরটিতে গীতার শ্লোকের মাঝে খুনের দৃশ্যায়নের কারনে ফের একবার বাংলা সিনেমার প্রযোজক পরিচালকদের মানসিকতা নিয় আঙুল তুলেছেন বাংলার একাংশের মানুষ । তাঁদের অভিযোগ, ক্ষুদ্রস্বার্থের লোভে সম্প্রীতির বার্তার আড়ালে আদপে তোষণনীতি চালাচ্ছে বাংলা টলিউড ।
সম্প্রতি রিলিজ হওয়া বাংলা টলিউডের যে দুটি সিনেমা এখন বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে তার একটি হল রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ধর্মযুদ্ধ‘(Dharmajuddha) । অপরটি ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ‘বিসমিল্লাহ’ (Bismillah) । দুটি ছবিরই টুইটারে হ্যাশট্যাগ বয়কট ট্রেন্ড চলছে । ‘বিসমিল্লাহ’ আদপে এক সঙ্গীতশিল্পী মুসলিম যুবকের প্রেমকাহিনী হলেও সামাজিক দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে । ছবির নায়কের হাতে দেখা গেছে কৃষ্ণের বাঁশি । প্রেমিকা ফাতিমার সঙ্গে নায়ককে রাধা-কৃষ্ণের মতো দেখানো হয়েছে । অভিযোগ, একজন কৃষ্ণভক্ত নারী, মুসলমান বাঁশিবাদকের মধ্যে কৃষ্ণকে দেখছেন । কিন্তু যারা কৃষ্ণভক্ত নারী তারা মীরার মতো হয় । কৃষ্ণকে দেখে তাঁরা প্রেমে পড়েনা,বরঞ্চ কৃষ্ণকে ভক্তি করেন । তাই এই ছবিতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা । সেই সঙ্গে ছবির টিজার পোস্টারটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করা শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashree Ganguly) লিখেছেন,’যত ভাঙন তুলে নিক এ মন বলতেই হবে বিসমিল্লাহ ।’ আর শুভশ্রীর এই ক্যাপশন দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে বহু মানুষ ।
অন্যদিকে ‘ধর্মযুদ্ধ’ পলিটিক্যাল ড্রামা ছবি । সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিটি । এক দাঙ্গার রাতের ঘটনাকে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী । এই ছবিতেও হিন্দু ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ । গীতার শ্লোকের মাঝে এক বৃদ্ধ নারীর গলায় ছুড়ি বসানোর দৃশ্য দেখানো হয়েছে ছবিটিতে । আর এই দৃশ্যায়নের প্রতিবাদের সরব হয়েছেন একাংশের মানু্ষ । তাঁদের অভিযোগ,বাংলা টলিউডের পরিচালকরা ইতিহাস ভিত্তিক সিনেমা না বানিয়ে নিছক মনগড়া কাহিনীর উপর সিনেমা তৈরি করছে । দেশভাগের পর থেকে হিন্দুরা অত্যাচারিত হলেও তা কখনো সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা করেননি কেউ । উলটে শাসকদলের সুবিধা পাইয়ে দিতে পশ্চিমবঙ্গের চিত্র পরিচালকরা তোষামোদকারী সিনেমা বানাচ্ছে । আর এক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মকে হাতিয়ার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে ।।