অভিষেক চৌধুরী,কালনা,১৭ ডিসেম্বর : শুভেন্দু অধিকারীর পর্ব মিটতে না মিটিতেই বৃহস্পতিবার দল ছাড়ার কথা ঘোষনা করেছেন পশ্চিম বর্ধমানের পান্ডবেশ্বর বিধানসভার তৃনমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারী । এদিকে আবার একই দিনে দলের বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়েছেন কালনার তৃনমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু । বুধবার তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন বলে খবর । এরপর এদিন তিনি নিজের এলাকায় এসে নিজের দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা মেরে পুরসভা ভোটে জেতার গুরুতর অভিযোগ করেছেন । এমনকি কালনা শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা বর্তমানে ওই পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগের বিরুদ্ধে জায়গা-জমি কেনাবেচার মতো বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িয়ে থাকারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি । যদিও দল ছাড়া বা অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি বিশ্বজিৎবাবু । অন্যদিকে বিধায়কের এই গুরুতর অভিযোগ নিয়ে পালটা মুখ খুলেছেন দেবীপ্রসাদ বাগ ।
গত বুধবার তৃণমূল সাংসদ সুনীল মন্ডলের কাঁকসার বাড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু।স্বাভাবিক কারণেই এই ঘটনায় ব্যাপক চান্চল্যও ছড়ায়।অন্যদিকে মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সৈকত পাঁজাকে নিয়েও জল্পনা তৈরী হয় এইদিন।যদিও তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান।অন্যদিকে আবার ওইদিনই কালনার আরো এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শংকর হালদার দিলীপ ঘোষের হাত থেকে বিজেপির দলীয় পতাকা নিজের হাতে তুলে নেন কয়েক শো কর্মী সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে এমনিই দাবি তার।শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকের পরের দিনই বৃহস্পতিবার কালনায় এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে একাধিক বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু।কালনা পৌরসভার একসময়ের চেয়ারম্যান বর্তমানে পুরপ্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ সহ প্রশান্ত কিশোর ও তৃণমূলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে তোপ দেগে জানান,‘দলের শুদ্ধিকরণের জন্য অনেক টাকা খরচ করে প্রশান্ত কিশোরকে যে নিয়ে আসা হোলো সেই শুদ্ধিকরণের জায়গায় অশুদ্ধি বেশি হয়েছে।সেইটা যদি শুদ্ধিকরণের জায়গায় আসে তা চিন্তভাবনা করে দেখবো।’কিছুদিন আগেই কালনা শহর তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে বিশ্বজিৎ কুন্ডুকে সরিয়ে দিয়ে সভাপতি করা হয় দেবপ্রসাদ বাগকে।যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এরপরেই বিশ্বজিৎবাবুকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই করে দেয়।তাতেও কিন্তু বরফ গলেনি বরং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরা স্রোত বেড়েই যায়।আর তাই বৃহস্পতিবার কালনায় দলীয় কার্যালয়ে বসেই কালনার পুরপ্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিশ্বজিৎবাবু বলেন,‘২০১৫ সালে যে ছাপ্পা মেরে ভোটে জিতেছে।যে গোটা কালনা শহরে বিভীষিকার মতো কাজ করে রেখে দিয়েছে।যেখানে মানুষ বিচার-আচারের জায়গায় নেই।যেখানে যত জায়গা জমি যা বিক্রি হবে সব সে কিনবে।মানে চেয়ারম্যান যাকে আবার সভাপতি করা হয়েছে।সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’তৃণমূল হাইকম্যান্ডের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি বলেন,‘এর আগেও এই সব বিষয়ে ববি হাকিম,অরূপ বিশ্বাস,স্বপন দেবনাথ,উজ্বল প্রামাণিককে জানানো হয় । অভিষেকের সিএ কে দেওয়া হয়েছে। দশদিন ধরে ফোন করেছি ।অভিষেকের সঙ্গে পাঁচ মিনিটের জন্য কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি।’এরপরে তিনি আরো এক মারাত্মক অভিযোগ করে বলেন,‘দিদিকে বলো কর্মসূচিতে গিয়ে এক মহিলা আমাকে অভিযোগ করেছিলেন যে আমি বুথ সভাপতিকে বলেছিলাম বাড়িটা করে দেওয়ার জন্য কিন্তু আমার বাড়িটা করে দিলো না।এক বুথ সদস্য ওই মহিলার কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা চায় ।আর টাকা দিতে না পারলে সন্ধ্যার সময় স্কুলমাঠে গিয়ে দেখা করতে বলে।সেই ভিডিও রেকর্ডিং পিকে-র ওখানে পাঠালেও কিছুই হয়নি।’যদিও কথার ফাঁকেই তিনি জানান মলয় ঘটক তাকে ফোন করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।যদিও তিনি যাননি।পরে ওনার সঙ্গে দেখা করে নেবেন বলে জানান।পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জির সৈনিক হিসাবে নিজের গর্ব অনুভব হওয়ার কথা বিশ্বজিৎবাবু বললেও নিজের সম্পর্কে এইদিন তিনি অবস্থান যেমন ষ্পষ্ট করেননি তেমনিই শুভেন্দুর সঙ্গে তার কি কথা হয়েছে তা তিনি বলেননি।যদিও সূত্রের খবর শুভেন্দুর সঙ্গেই তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল।অন্যদিকে কালনার পুরপ্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন,‘২০১৫ তে ছাপ্পাভোট যদি হয়েই থাকে,আর ওই কারণেই যদি উনি অন্যদলে যান তাহলে ২০১৬ সালেই তো উনি যেতে পারতেন।আসলে মানুষ যখন বোঝে আমার এই দলে থেকে জেতার মতো পরিস্থিতি নেই।দাঁড়ালে পরে আমি হেরে যাবো।তখন মুখ থেকে এই ধরনের কথা বের হয়।’অন্যদিকে মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজাকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হয় যে,উনি দাদার অনুগামী না তৃণমূলেই রয়েছেন।সেই বিষয়ে তিনি বলেন,‘আমি কোনো কিছুতেই নেই।আমার মামা মারা গেছে।কাছা পড়ে আছি।মামার বাড়িতেই রয়েছি।দলের কোনো কর্মসূচিতে আমি থাকি না।আমি ইন অ্যাক্টিভ।’পাশাপাশি শুভেন্দুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেসুরো বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মন্ডল এইদিনও ঘুরপথে দলের ও পিকের কঠোর সমালোচনা করেন।আগামীদিনে তার পদক্ষেপ কি হবে সেই বিষয়ে তিনি চরম গোপনীয়তা রেখেছেন।