এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের তরুনী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে কলকাতা পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও একাধিকবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন যে কোনো প্রমান নষ্ট করা হয়নি এবং পুলিশ যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছিল । কিন্তু সিবিআইয়ের তদন্তে মুখ্যমন্ত্রী ও বিনীত গোয়েলের দাবির বিপরীত তথ্য উঠে এসেছে বলে একটা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে জানা গেছে । কিছু বিষয় এখনো মেলাতে পারছে না সিবিআই । তার মধ্যে তাড়াহুড়ো করে দাহ, ময়নাতদন্তে আঘাতের গুরুতর বিবরণ বাদ,মৃতদেহের ত্রুটিপূর্ণ ভিডিওগ্রাফি, সেমিনার কক্ষে ভিকটিমের উপস্থিতি সম্পর্কে ধৃতকে অবহিত কে করল,অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের সাক্ষ্যের মধ্যে অসঙ্গতি এই মামলাকে আরও জটিল করে তুলেছে । যেটা তথ্যপ্রমাণ লোপাটের স্পষ্ট সঙ্কেত বলে মনে করছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেল ইনচার্জ অমিত মালব্য ।
তিনি একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের একাংশ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন । সেই প্রতিবেদনে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে তদন্তকারীরা মনে করছেন, অত্যন্ত দ্রুত সুরতহাল এবং ময়না- তদন্ত করে ফেলা হয়েছে এবং মৃতদেহ দাহ করা হয়েছে। সিবিআই সুত্রে দাবি, সুরতহাল ও ময়না-তদন্তের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধাপ, যা খুন এবং ধর্ষণের তদন্তে খুবই জরুরি, সেগুলি এখানে সম্ভবত মানা হয়নি। তার প্রমাণও গোয়েন্দারা পেয়েছেন বলে দাবি। মৃতদেহ দাহ করে ফেলায় তা আর এখন সম্ভব নয় বলেই সিবিআইয়ের বক্তব্য।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও দাবি, সুরতহাল এবং ময়না- তদন্তের সময়ে করা ভিডিয়োগ্রাফির যে ফুটেজ সিবিআই পেয়েছে, তার বহু অংশই নাকি অস্পষ্ট। ইচ্ছে করে তাড়াহুড়োয় এমন হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, মৃতদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিস্তারিত বিবরণ ও উল্লেখ করা হয়নি ময়না-তদন্তের রিপোর্টে। মিলছে না সে রাতে হাসপাতালে থাকা সকলের বক্তব্য। আলাদা করে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু অসঙ্গতি সে রাতে সেমিনার রুম এর চাবি কার কাছে ছিল এবং কী করে তরুণীর সেখানে থাকার খবর ধৃত সঞ্জয় এত সহজে জেনে গেল, এই সমস্ত প্রশ্ন ও ঘুরছে।
সূত্রের খবর, তরুণীকে জীবিত অবস্থায় শেষ কে দেখেছেন এবং মৃতদেহ কে প্রথম দেখলেন, সেই বক্তব্য ঘিরে ধোঁয়াশাও কাটেনি। সূত্রের খবর, মৃতদেহ প্রথম দেখা সাড়ে ন’টায় গিয়েছিল বেলা
হাসপাতাল থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল বেলা ১০টা ১০ মিনিটে। মাঝে প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় কী হল, সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রে খবর, এই ৪০ মিনিট কী হয়েছে, সেটাই এখন মূল চিন্তা তাদের। এর মধ্যে তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে, নাকি যা তথ্য-প্রমাণ মিলেছে সেটাই যথেষ্ট ধরে নেওয়া হয়েছে, দেখছে সিবিআই । এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় অমিত মালব্য লিখেছেন,’আরজি কর এমসিএইচ ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রাথমিক অব্যবস্থাপনার বিষয়ে সিবিআই-এর চমকপ্রদ প্রকাশ, সত্যকে অস্পষ্ট করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টাকে উন্মোচিত করে এবং তার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের মধ্যে রাজনৈতিক বড় বড় ব্যক্তিদের সহ জড়িতদের রক্ষা করে।
১)পোস্টমর্টেম পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিগত ত্রুটি, ময়নাতদন্তের ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত এবং ত্রুটিপূর্ণ ভিডিওগ্রাফি এবং ভিকটিমের শরীরে আঘাতের বিষয়ে গুরুতর বিবরণ বাদ দিয়ে মূল প্রমাণ ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করার বিষয়টি অনস্বীকার্য হয়ে উঠছে।
২) মামলাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে যে রাতে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের সাক্ষ্যের মধ্যে স্পষ্ট অসঙ্গতি। সিবিআই এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি কিভাবে গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে সেমিনার কক্ষে ভিকটিমের উপস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং মৃতের সন্ধান এবং পুলিশ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে সন্দেহজনক ৪০ মিনিটের বিলম্ব একটি বৃহত্তর কভার আপের অংশ ছিল কিনা।
৩) মৃতদেহ দাহ করার তাড়াহুড়ো ভাবতে অবাক লাগে – স্পষ্টতই একটি দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সচেতনভাবে এড়ানো হয়েছিল।
সব শেষে তিনি লিখেছেন,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন এবং তার অনুসারীদের দ্বারা প্রমাণ ধ্বংসের মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা, তদন্তকে সিবিআই-এর জন্য ক্রমবর্ধমান কঠিন অঙ্গীকার করেছে, যদিও এটি দেশের সবচেয়ে দক্ষ তদন্তকারী সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। বাংলাকে দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করে ক্ষমতা এবং দুর্নীতির এই সম্পর্ক মমতা ব্যানার্জি এবং তার তথাকথিত পুলিশকে অন্যায়ের অগ্রগামী হিসেবে উন্মোচিত করে । প্রতিটি দিন যাচ্ছে, বাংলার গর্বিত উত্তরাধিকার মমতা ব্যানার্জির ‘জঙ্গলরাজ’-এর অধীনে শ্বাসরুদ্ধ হচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক লাভের জন্য সত্যকে বলি দেওয়া হয়।।