এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৪ জানুয়ারী : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে বিএলআরও অফিসে আরটিআই করাতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা জনৈক এক ব্যক্তি । বদলে গেল আবেদনকারীর বাবার নাম ও ধর্ম পরিচয় । আরটিআই-এর রিপোর্ট পাওয়ার পর আবেদনকারী স্বর্গীয় জিতেন্দ্রনাথ দত্তর ছেলে মুক্তিপদ দত্ত নামে ওই ব্যক্তি দেখতে পান যে তার বাবার নাম বদলে করা হয়েছে “আব্দুর রব” (Abdur Rob) । ঘটনাকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ওই পরিবারটি ।
জানা গেছে, দুর্গাপুরের বিধাননগর এলাকার বাসিন্দা মুক্তি পদ দত্তের দুই ভাই সুশান্ত দত্ত ও বাবু দত্ত ভাতার বাজারে বসবাস করেন । সুশান্ত দত্তদের বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুকুর । কুলচন্ডা মৌজার অন্তর্গত ১৪৩৬ এবং ১৪৭৫ খতিয়ানে ১ একর ৭৩ শতক জলকর জলকর বিশিষ্ট ওই পুকুরটির দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে । বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়ায় ।
সুশান্ত দত্ত জানিয়েছেন, তিনি ২০১৭ সালে নভেম্বরে বর্ধমান শহরের বাসিন্দা স্বর্গীয় অমরনাথ তা -এর বংশধরদের কাছ থেকে ওই পুকুরটি তার এবং তার স্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা দত্তর নামে কিনেছিলেন । কেনার দু’বছর আগে থেকে পুকুরটি লিজ নিয়ে চাষ করছিলেন তিনি । কিন্তু পুকুরটি কেনার পর থেকেই স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা তাকে পুকুর থেকে মাছ তুলতে দিচ্ছে না অভিযোগ তার ।
সুশান্ত বাবুর আরও অভিযোগ যে আদালতের স্পষ্ট রায় থাকা সত্ত্বেও তিনি পুকুরের দখল পাচ্ছেন না । তিনি বিএলআরও অফিস এবং ভাতার থানার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন ।
সুশান্ত বাবু বলেন,’আমি বিএলআর অফিসে গেলে বলা হয় যে পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ভেস্টেড । এই বলে আমার সঙ্গে রীতিনীতি দুর্ব্যবহার পর্যন্ত করা হয় । কিন্তু ওই খতিয়ানে সার্চিং করে জানতে পারি যে পুকুরটি আমার এবং আমার স্ত্রীর নামেই রেকর্ড রয়েছে ৷
জানা গেছে,গত বছর ২২ নভেম্বর আরটিআই করেন সুশান্তবাবুর দাদা মুক্তি পদ দত্ত । দিন চারেক আগে, গত ১০ জানুয়ারী, তিনি আরটিআই-এর রিপোর্ট হাতে পান । আর তখনই তার নজরে পরে যে তার বাবার নাম জিতেন্দ্রনাথ দত্ত বদলে “আব্দুর রব” করে দেওয়া হয়েছে । এ নিয়ে মুক্তিপদ বাবু ও তার ভাইয়েরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । যদিও ভাতারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মাধব মণ্ডল ফোনে ‘এইদিন’কে বলেন, ‘টাইপ করতে ভুল হয়ে গেছে । আগামী সোমবার অফিস খোলার পর ভুল সংশোধন করে দেওয়া হবে ।’
প্রসঙ্গত,বিগত বামফ্রন্টের জমানা থেকেই রাজ্যের বিএলআরও অফিসগুলিতে চুড়ান্ত অনিয়ম শুরু হয় । টাকার বিনিময়ে এবং ভূয়ো নথি দেখিয়ে একজনের সম্পত্তি অন্যের নামে করে দেওয়া, এমনকি অফিস থেকে জমি জায়গার পর্চা পর্যন্ত হাপিশ করে দেওয়া হত বলে অভিযোগ । রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হলেও বিএলআরও অফিসের দুর্নীতি আর বন্ধ হয়নি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি খোদ রাজ্যের বিএলআরও অফিসগুলোকে ‘বাস্তুঘুগুর বাসা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন । ভাতার বি এল আর ও অফিসের একাংশের আধিকারিকদের দুর্নীতির কারণে বহু জমি জায়গার মালিককে ভুগতে হচ্ছে আজও । বর্তমানে এ রাজ্য দুর্নীতিতে ইস্যুতে সরগরম থাকায় কিছুটা হলেও বিএলআরও অফিসে অনিয়মে লাগাম পড়েছে । এখন জনৈক ব্যক্তির আরটিআই রিপোর্টে বাবার নাম ও ধর্মপরিচয় বদলে দেওয়ার ঘটনায় ভাতার বিএলআরও অফিসকে ঘিরে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ।।