এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ জুলাই : বাঙালি নির্যাতন নিয়ে ভুয়ো পোস্টের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইমে এফআইআর দায়ের করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী । আজ মঙ্গলবার সকালেই কলকাতার সল্টলেকে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার বিষয়ে জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,
‘মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিএনএস-এর অন্তর্গত ওনার ভুয়ো পোষ্টের জন্য এফআইআর করা উচিত । এবং দিল্লী পুলিশের কাছে দাবি করব যে অবিলম্বে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে সাইবার অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য । দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে মমতা ব্যানার্জির নামে সুনির্দিষ্ট এফআইআর করার দাবি জানাচ্ছি । কাঁথির সংসদ সৌমেন্দু অধিকারী এফ আই আর দায়ের করবেন বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন । এফআইআর দায়ের হওয়ার পর আমরা আশা করব দিল্লি পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে ।’
দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে “পুলিশের অবমাননা এবং জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া এবং সাম্প্রদায়িকভাবে উস্কানিমূলক বিষয়বস্তু প্রচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ” বিষয়বস্তুর সৌমেন্দু অধিকারীর দায়ের করা এফআইআরের কপিটি বিজেপি নেতারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন ।
সৌমেন্দু অধিকারী ওই অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ২৭শে জুলাই ২০২৫ তারিখে, শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার যাচাইকৃত এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি উস্কানিমূলক বার্তা পোস্ট করেন যেখানে অভিযোগ করা হয় যে আধার যাচাইয়ের নামে দিল্লি পুলিশের কর্মীরা একজন বাংলাভাষী মহিলা এবং তার শিশুকে নির্মমভাবে লাঞ্ছিত করেছে। পোস্টটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে এই কাজটি সাম্প্রদায়িক প্রকৃতির এবং দিল্লি পুলিশকে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন,মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত একজন সাংবিধানিক কর্মকর্তার লেখা পোস্টটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল, যার ফলে জনসাধারণের ক্ষোভ, সাম্প্রদায়িক ক্ষোভ এবং দিল্লি পুলিশের মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সুনাম নষ্ট হয়। উক্ত পোস্টের জবাবে, পূর্ব দিল্লির ডিসিপি শ্রী অভিষেক ধনিয়া গণমাধ্যমকে সম্বোধন করে স্পষ্ট করে বলেন: পোস্টে যে মহিলার কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন সজনুর পারভীন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তিনি প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন যে ২৬শে জুলাই সাদা পোশাক পরা চারজন পুরুষ তার বাড়িতে এসে তাকে এবং তার সন্তানদের জোর করে মঙ্গলম হাসপাতালের কাছে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে যায় এবং ২৫,০০০ টাকা চাঁদা আদায় করে। তবে, সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় প্রযুক্তিগত তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর, এটি প্রমাণিত হয় যে তিনি স্বেচ্ছায় তার সন্তানদের সাথে তার বাসভবন ছেড়েছিলেন এবং বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের কোনও উপাদান দেখা যায়নি। আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর, সজনুর পারভীন স্বীকার করেছেন যে তার গল্পটি সম্পূর্ণরূপে বানানো এবং তিনি তার কাকা, মালদা জেলার একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং একজন সাংবাদিকের প্রভাবে কাজ করেছিলেন।
সৌমেন্দু আবেদনে জানান,ভিডিওটি তৈরির পেছনের উদ্দেশ্য ছিল একটি মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ও মানহানিকর উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা। শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্ঞাতসারে বা বেপরোয়াভাবে যাচাই না করা, উস্কানিমূলক এবং মিথ্যা বিষয়বস্তু প্রচারের মাধ্যমে নিম্নলিখিত ধরণের গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়:
ক) দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দেওয়া। খ) ধর্ম, জাতি, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা। গ) শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা। ঘ) শ্রেণীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ তৈরি বা প্রচার করা বিবৃতি। ঙ) কম্পিউটার রিসোর্স ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা করা। চ) সাইবার সন্ত্রাস (যদিও বিষয়বস্তুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অবিশ্বাস জাগানোর জন্য এবং একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে অপমান করার জন্য ব্যবহৃত হয়)।
তিনি আরও লিখেছেন,সাম্প্রদায়িক আভাস দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি সাংবিধানিক পদ ব্যবহার করা গভীরভাবে বিরক্তিকর এবং বিপজ্জনক। এটি ডিজিটাল সতর্কতার একটি নজির স্থাপন করে এবং সাংবিধানিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ভুল তথ্য যুদ্ধের জন্য অন্যদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। উপরোক্ত বিষয়গুলির আলোকে, আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে নিম্নলিখিতগুলি অনুরোধ করছি:
১. আইপি এবং আইটি আইনের প্রাসঙ্গিক বিধানের অধীনে শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক। ২. মূল এক্স পোস্ট এবং সম্পর্কিত ডিজিটাল ডেটার ফরেনসিক সংরক্ষণ এবং পরীক্ষা করা হোক। ৩. রাজনৈতিক কর্মী এবং সাংবাদিকের সাথে জড়িত বৃহত্তর ষড়যন্ত্র সনাক্ত করার জন্য একটি বিশদ তদন্ত শুরু করা হোক, যা মহিলা স্বীকার করেছেন। ৪. আইন অনুসারে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু করা হোক এবং এই বিদ্বেষপূর্ণ কাজের জন্য জবাবদিহিতা নির্ধারণ করা হোক। এই ঘটনা কেবল আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করে না বরং আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃসম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি নাগরিকদের বিশ্বাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। আরও যেকোনো সহযোগিতা বা স্পষ্টীকরণের জন্য আমি প্রস্তুত।
উল্লেখ্য,গত ২৭ জুলাই বিকেলে মমতা ব্যানার্জি এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছিলেন যে দিল্লিতে নাকি মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের উপর নির্যাতন চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ ।
মমতা ব্যানার্জি ওই টুইটে যে ভিডিও পোস্ট করেছেন সেখানে এক ব্যক্তি দাবি করে যে দিল্লি পুলিশ তাকে নাকি মারধর করেছে। সে আঘাতের স্থান দেখানোরও চেষ্টা করে। কিন্তু তার শরীরে তেমন কোনো আঘাতই দেখা যায়নি । মমতা এটাকেই ইস্যু করে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছিলেন,’জঘন্য!! ভয়াবহ!! দেখুন দিল্লি পুলিশ কীভাবে মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের সদস্য একটি শিশু এবং তার মাকে নির্মমভাবে মারধর করেছে। দেখুন কীভাবে বিজেপির বাঙালিদের বিরুদ্ধে ভাষাগত সন্ত্রাসের শাসনকালে একটি শিশুও হিংসার নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না! তারা এখন আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?’ যদিও দিল্লী পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার অভিষেক ধানিয়া পালটা একটা ভিডিও বার্তায় মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ।।