এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৫ জুলাই : পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ত্রিপুরা ও আসাম প্রভৃতি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির একাধিক জেলায় বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জন্য জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে । বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ এর কারণে ইতিমধ্যেই আসামের হিন্দুরা ২০৪০ সালের মধ্যে সংখ্যালঘু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা । ভারতের জনবিন্যাসের পরিবর্তন নিয়ে এযাবৎ সংসদে কোন আলোচনাই হয়নি । সেই হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সংসদের অধিবেশন ছিল কার্যত একটা ঐতিহাসিক দিন। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের বিশেষ বিশেষ জেলাগুলিতে হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে বাঁচাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের দাবি করলেন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে । ঝাড়খন্ডের সাঁওতাল পরগনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ মিলে মোট তিনটি জেলাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছেন দুবে । ঝাড়খণ্ডের তিন জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলাতে অবিলম্বে এনআরসি কার্যকর করার দাবিও জানান তিনি ।
সংসদে নিশিকান্ত দুবে জানিয়েছেন, ঝাড়খন্ড যখন বিহার থেকে আলাদা হল তারপর ২০০০ সালে সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসী জনসংখ্যা ছিল ৩৬ শতাংশ । আর আজ আদিবাসী জনসংখ্যা কমে ২৬ শতাংশ হয়েছে । বাকি ১০% আদিবাসীরা কোথায় চলে গেল ? এই বিষয়ে সংসদের কোন মাথা ব্যথায় নেই, কেবল ভোট ব্যাংকের পলিটিক্স ।
তিনি বলেন, আমার রাজ্যে যে সরকার আছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা এবং কংগ্রেস, তারা এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপে নিচ্ছেনা । তার ফলে আজকে কি হচ্ছে ? বাংলাদেশ থেকে লাগাতার অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়ছে ৷ আদিবাসী মহিলাদের বিয়ে করছে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা ৷ এটা হিন্দু মুসলমানের বিষয় নয় । আমাদের রাজ্যে আদিবাসী কোটায় যে মহিলা সংসদের ভোট লড়ে তার স্বামী একজন মুসলিম । জেলা পরিষদের যে অধ্যক্ষ তার স্বামী মুসলিম । আদিবাসীদের যে মহিলা প্রধান হন তার স্বামীও মুসলিম । আমাদের এলাকায় অন্তত এমন ১০০ জন আদিবাসী প্রধান আছেন যাদের স্বামীরা সকলেই মুসলিম ।
নিশিকান্ত দূরে আরো জানান যে ঝাড়খন্ডে প্রতি বছর ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ জনসংখ্যা বাড়ে । আমি যে লোকসভা এলাকার বাসিন্দা তার অন্তর্গত বিধানসভা মধুপুরে প্রায় ২৬৭ বুথে ১২৩ শতাংশ মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে । অন্য জায়গায় যেখানে ভোটার বাড়ে মাত্র ১৫-১৭ শতাংশ । ঝাড়খণ্ডের অন্তত ২৫ টা বিধানসভায় ১২৩ থেকে ১১০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে । এটা খুব চিন্তাজনক ।
তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলার তারানগর ইলামি এবং ডাঙ্গাপাড়ায় সম্প্রীতি দাঙ্গা হয়েছিল । কেন হয়েছিল ? কারণ পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ,মালদা এবং মুর্শিদাবাদ থেকে লোকজন এসে আমাদের এলাকার লোকেদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছে । যে কারণে একের পর এক গ্রাম খালি হয়ে যাচ্ছে ।
নিশিকান্ত দুবের এই বক্তব্যের পর তৃণমূলের সাংসদরা হৈহোট্ট গোল শুরু করে দেয় । তবে তিনি তাদের বিশ্বাস পাত্তা না দিয়ে ফের বলতে শুরু করেন, যদি আমার বক্তব্য ভুল হয় তাহলে আমি পদত্যাগ করতে তৈরি আছি । মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে মুসলমানরা এসে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করছে । আর ঝাড়খণ্ডের পুলিশ কিছুই করতে পারছে না ।
এরপর তিনি দাবি করেন,পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং ঝাড়খণ্ডের অড়রিয়া,কাটিহার, সাঁওতাল পরগনা মিলে ৫ জেলাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হোক । ঝাড়খন্ড হাইকোর্ট পর্যন্ত গত ৫ জুলাই মন্তব্য করেছিল যে যেভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে কেন্দ্র সরকারকে হস্তক্ষেপ করা উচিত । কিশান্গঞ্জ কিশানগঞ্জ, অড়রিয়া,কাটিহার, সাঁওতাল পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হোক । এন আর সি লাগু করা হোক । তা না হলে হিন্দু খালি হয়ে যাবে । আর যদি তা না হয় তাহলে সংসদের একটা কমিটিকে সেখানে পাঠানো হোক । ২০১০ সালের ল’কমিশনের সুপারি অনুযায়ী ধর্মান্তরন বন্ধ এবং বিবাহের জন্য সরকারি অনুমতি নেওয়ার আইন চালু হোক ।
প্রসঙ্গত, নিশিকান্ত দুবে হলেন সেই সাংসদ যিনি কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সংসদের পাসওয়ার্ড বিদেশে পাচার এবং অর্থের বিনিময়ে সংসদের প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন । যার জেরে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ বাতিল হয়ে যায় ।।