প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ নভেম্বর : সাফাই কর্মী বা ঝাড়ুদারদের অনেকেই টেরা চোখে দেখে থাকেন।কিন্তু এমনও অনেক ঝাড়ুদার আছেন যাঁদেরকে নিয়ে পৌরবাসীর গর্বের অন্ত নেই।তেমনই একজন হলেন বর্ধমান পুরসভার সফাই কর্মী তথা ঝাড়ুদার মৌসিন আলি ওরফে খোকন।শিস দিয়ে প্রবাদ প্রতিম শিল্পীদের কালজয়ী গানের সুর তুলে প্রতিদিন সকালে তিনি এলাকা সাফাইয়ের কাজ করেন।আর সেই শুর শুনেই ঘুম ভাঙে বর্ধমান পুরসভার ভাতছালা,জোড়া কালিতলা,বাবু পুকুর পাড় ও গোলাহাট এলাকার বাসিন্দাদের।শিস দিয়ে তোলা মৌসিনের গানের সুরই এখন যেন তাঁদের কাছে সুপ্রভাতের সংজ্ঞা হয়ে গিয়েছে।
বছর পঞ্চাশের মৌসিন আলি বর্ধমান পুরসভার ঝাড়ুদার। তবে তিনি পৌরসভার স্থায়ী কর্মী নন। তিনি ২০০৭ সাল থেকে আজও অস্থায়ী ঝাড়ুদার হিসাবেই কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে ৯০০ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ার শর্তে মৌসিন আলি কাজ শুরু করেন। এখন তিনি প্রতি মাসে পুরসভা থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। উপার্জনের সামান্য এই টাকাতেই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার চলে। তবে সংসারে অভাব অনটন যাই থাক না কেন, সকালে ঝাড়ু হাতে সাফাইয়ের কাজে বের হলেই মৌসিন যেন সব ভুলে সুরের জাদুকর বনে যান।তারই ফাঁকে ফাঁকে তিনি ’স্বচ্ছ বর্ধমান’ গড়ার বার্তাও দেন। কঠিন শীতকাল হোক বা গ্রীষ্মের তাপদাহ,শিস দিয়ে গানের সুর তুলে ঝাড়ু দিতে দিতে দিতেই মৌসিন পৌছে যান এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়। ওই সব পাড়ার লোকজনও মৌসিনের আগমনের সাথে সাথে সাথে বুঝে যান সকাল হয়ে গিয়েছে।
সামান্য বেতনের একজন ঝাড়ুদার হলেও মৌসিন
নিজের কাজ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন।তেমনই রয়েছে তাঁর গান বাজনার প্রতি ভালবাসা। কন্ঠের জাদুতে তিনি আম জনতাকে মুগ্ধ করতে না পারলেও তাঁর শিস দিয়ে তোলা গানের সুরে মুগ্ধ শহর বর্ধমানের আট থেকে আশি , সকলেই।শিস দিয়েই মৌসিন
অবলিলায় মহঃ রফি ও লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে মান্না দে এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া কালজয়ী বাংলা ও হিন্দি গানের সুর তুলতে পারেন ।শিস দিয়েই বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টি গানের সুর অনায়াসেই পরিবেশন করতে পারেন মৌসিন আলি। কিন্তু ঝাড়ু দিয়ে পুরসভা এলাকায় সাফাই কাজ করার সময়ে শিস দিয়ে গানের সুর তোলার কি কারণ আছে ? উত্তরে মৌসিনের জানান,“এতে তিনি সংসারের অভাব অনটন ভুলে গিয়ে নিজের কাজে একাত্ম হতে পারেন ।
গান বাজনার প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও মৌসিন আলি কেন গলা ছেড়ে প্রাণ খুলে গান না গেয়ে শিস দিয়ে গানের সুর তোলেন ,তা জানার জন্য বর্ধমানবাসীর কিন্তু কৌতুহলের শেষ নেই।এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মৌসিন বলেন,’ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আমার একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল। তাই গানের তালিম না জুটলেও গান শুনে গানের সুর তোলার চেষ্টা করতাম।তার পর অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে সবকিছুই যেন হারিয়ে ফেলি।পড়াশুনাও থমকে যায়। যাবতীয় স্বপ্ন,ইচ্ছা -আকাঙ্খাকে বিসর্জন দিয়ে সংসারের জোয়াল কাঁধে নিতে হয় । পরবিবারের সবার মুখের অন্নের সংস্থানের জন্যে জীবিকা হিসাবে বেছে নিতে হয় ঝাড়ু দেওয়ার কাজ।এভাবেই জীবন কাটছে । তবে গান শিখে গান গাওয়ার সাধ পূরণ না হলেও গান বাজনার প্রতি ভালবাসা হৃদয়ে রয়েই গিয়েছে। তাই গলা খুলে গান গাওয়ার সাধ শিস দিয়ে গানের সুর তুলেই পূরণ করেন বলে মৌসিন আলি জানিয়েছেন ।’।