প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ ফেব্রুয়ারী : বাবা উকিল । আর মা ও ছেলে মিলে একটি কোম্পানির নাম দিয়ে ঝাঁ চকচকে অফিসে ও কলসেন্টার খুলে চালাচ্ছিল প্রতারণা ।মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানোর টোপদিয়ে নানা ভাবে মানুষজনকে আর্থিক ভাবে প্রাতারিত করার কাজে তাঁরা সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিল।তবে এক প্রতারিতর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ তদন্তে নামতেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে মা ও ছেলের প্রতারণার কর্মকাণ্ড।যা পুলিশ কর্তাদেরও স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে ,প্রতারক মা ও ছেলের নাম
বাবলি চক্রবর্তী ও শুভজিৎ চক্রবর্তী । উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতের শান্তিকুঞ্জ আবাসনে তাদের আদি বাস। বর্তমানে তারা উত্তর ২৪ পরগণার মধ্যমগ্রামের দোলতলায় থাকে। পূর্ব বর্ধমানের
জামালপুর থানার বিষ্ণুবাটি গ্রাম নিবাসী প্রতারিত
গৌতম দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত
বৃহস্পতিবার দুপুরে মধ্যমগ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।পরদিন তাদের বর্ধমান আদালতে পেশ করে চার দিনের রিমান্ডে নেয় জামালপুর থানার পুলিশ।এর পরেই মা ও ছেলেকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে তাদের প্রতারণার যাবতীয় কর্মকাণ্ড জেনে নিয়ে পুলিশ অভিযানে নামে । প্রতারক মা ও ছেলে মিলে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা থানার সোদপুরের একটি কোম্পানির নাম দিয়ে যে অফিস খুলেছিল সেখানে পুলিশ হানা দেয়। পুলিশের দাবি সেখান থেকে ১৭টি ল্যাপটপ,৪ টি ডেক্সটপ ,২ টি হার্ডডিস্ক ,২টি ট্যাব,৭টি মোবাইল ফোন,১০টি চার্জার ,৫টি পেনড্রাইভ,১৫টি সিম স্লট ,১টি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ও ৫টি সিডি পাওয়া গিয়েছে । সেগুলি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে । এইসব ছাড়াও প্রচুর স্ট্যাম্প পেপার ,একশোর বেশী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস রেজিস্টার ও কোম্পানির রেজিস্টার বুক উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশের দাবি ।প্রতারক মা ও ছেলে বারাসাতের যে তিনটি কলসেন্টার খুলেছিল সেগুলি পুলিল শিল করে দিয়েছে ।
তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের কথায় জানা গিয়েছে,
বছর ২৪ বয়সী শুভজিৎ চক্রবর্তী যে খুব উচ্চ শিক্ষিত এমনটা নয়।সে সাধারণ গ্র্যাজুয়েট । তাঁর মা বাবলি দেবীও তেমন শিক্ষিত না হলেও ধুরন্ধর। প্রতারণার স্বার্থ পুরণের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। প্রচুর অর্থ রোজগারের বাসনা পুরণ করতেই মা ও ছেলে মিলে প্রতারণার পথ বেছে নেয় বলে পুলিশ জেনেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ,ভাতার, খণ্ডঘোষ থানা ছাড়াও তমলুক এবং বারুইপুর বকুলতলা থানা ও সুন্দরবন সাইবার থানায় এমন প্রতারণার মামলা নতিভুক্ত রয়েছে বলেও পুলিশ জেনেছে। পুলিশের অনুমান গোটা রাজ্য জুড়েই এই প্রতারকদের জাল বিছানো রয়েছে।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন) সুপ্রভাত চক্রবর্তী সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, মা ও ছেলে মিলে ঝাঁ চকচকে অফিস ও কলসেন্টার খুলেছিল । কম্পিউটার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহারে অতি দক্ষ এমন দু’শোর বেশী ছেলে মেয়েদের তারা ২০-৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতন দিয়ে সেখানে কর্মি রেখেছিল।তারা বহু সিমকার্ড দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করাতো মা ও ছেলে।ফোন করেই তারা মোফাইল ফোনের টাওয়ার বসানোর টোপ দিত । কাউকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারা কর্মীর জন্য কমিশনের ব্যবস্থাও রাখে মা ও ছেলে মূলত গ্রাম গঞ্জের মানুষজনের ফোন নম্বার জোগাড় করে তারা মোফাইল ফোনের টাওয়ার বসানোর টোপ দিত । যাঁকে ফোন করতো তাকে মোটা টাকার প্রলোভনও দেখাতো এই প্রতারকরা । এই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে জামালপুরের বিষ্ণুবাটি গ্রামেব বাসিন্দা গৌতম দাস ৮৫ হাজার টাকা খোয়ান। তা নিয়ে সম্প্রতি তিনি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । তার ভিত্তিতে ভামলা রুজু করে তদন্তে নেমে পুলিশ প্রতারণা কাণ্ডের মূল চক্রী মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে হেপাজতে নেয় । ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে তাদের অফিসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ প্রতারণায় ব্যবহৃত প্রচুর ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম,নথিপত্র ,ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস উদ্ধার করেছে । এসডিপিও আরও জানান ,এই প্রতারণা চক্রের জাল বহু দূর ছড়ানো রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ।এসডিপিও জানিয়েছেন,এই প্রতারণা চক্রের একেবারে শিকড়ে পৌছাতে ও চক্রের বাকিদের নাগাল পেতে
দুই ধৃতকে ফের হেপাজতে নেওয়ার জন্য পুলিশ আদালতে আবেদন জানাবে ।।