এইদিন ওয়েবডেস্ক,কানপুর,১৪ ফেব্রুয়ারী : উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাতে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে । প্রশাসনিক কর্তারা জবরদখল উচ্ছেদ অভিযানে গেলে ঝুপড়িতে আগুন লেগে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে মা ও মেয়ের । সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে কানপুর দেহাতের মাইথা তালুকের মাদৌলি গ্রামে । নিহতদের নাম প্রমিলা দীক্ষিত (৪১) এবং তাঁর মেয়ে নিতা (২১) । এদিকে এই ঘটনার পর ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশকে পিছু ধাওয়া করে । প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায় পুলিশবাহিনী । ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতভর টানটান উত্তেজনা ছিল এলাকায় । কানপুরের কমিশনার রাজ শেখর, ডিএম নেহা জৈন, এডিজি অলোক কুমার এবং অন্যান্য আধিকারিকরা গভীর রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন। এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রতিভা শুক্লাও। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর রাত্রি ১ টার দিকে মা ও মেয়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এদিকে এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা । মৃত প্রমীলার স্বামী কৃষ্ণ গোপাল দীক্ষিত বলেন, ‘এসডিএম ও তহসিলদার বুলডোজার নিয়ে এসেছিলেন । সঙ্গে ছিলেন অশোক দীক্ষিত, অনিল দীক্ষিতসহ পুটনিয়াসহ গ্রামের বহু মানুষ । ওই লোকজন আধিকারিকদের আগুন লাগাতে বলেছিল । তাদের কথা শুনে আধিকারিকরা আমাদের ঝুপড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় । আমরা (ছেলে ও আমি) কোনোরকমে কুঁড়েঘর থেকে বের হতে পেরেছি, কিন্তু মা ও মেয়ে ভেতরেই থেকে যায় এবং দগ্ধ হয়ে মারা যায় । অফিসাররা আমাদের পুড়িয়ে পালিয়ে যায়। কেউ কোনোভাবে সাহায্য করেনি ।’নিহতের পরিবার এসডিএম জ্ঞানেশ্বর প্রসাদ, রুরার এসএইচও দীনেশ গৌতম, লেখপাল অশোক সিং সহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে । ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসি দাবি করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। পাশাপাশি পাঁচ বিঘা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং ছেলেকে সরকারি চাকরি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন । সেই সময় নিতা চিৎকার করতে করতে দৌড়ে ঝুপড়িতে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় । তবে পুলিশ সেখানে ছুটে এসে দরজা ভেঙে দেয়। এসময় কুঁড়েঘরে আগুন লেগে যায়। আর ওই আগুনে গুরুতর দগ্ধ হন মা ও মেয়ে । মৃতের ছেলে শিবম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এসডিএম, এসও, লেখপাল সবাই মিলে আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমি আর আমার বাবা বের না হলে আমরাও মরে যেতাম । পুলিশ মন্দির ও মন্দিরের বাইরের কলও ভেঙে দিয়েছে ।
যদিও কানপুর দেহহাটের এসপি মূর্তি বলেন, অবৈধ দখল সরাতে গিয়েছিলেন এসডিএম ও অন্যান্য কর্মীরা। সেই সময় কিছু লোক বিক্ষোভ করে । ওই মহিলা ও তার মেয়েও বিক্ষোভে সামিল হন । দু’জনেই কুঁড়েঘরের ভিতরে ঢুকে অভিযানে বাধা দেয় । কয়েক মিনিট পর কুঁড়েঘরের ভেতর আগুন লেগে যায়। এতে এক মহিলা ও তার মেয়ের মৃত্যু হয়। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই গ্রামে গৌরব দীক্ষিত নামে এক গুন্ডা থাকে । সেইই দিন দশেক আগে পুরো চক্রান্তের সূত্রপাত করে। গ্রামের কিছু মানুষও তার সঙ্গে আছে । প্রশাসন, লেখপাল ও এসও তার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তাদের কথায়,প্রশাসন প্রথমে জেসিবি চালু করে, পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন সবাই ভিতরে ছিল। ছেলে শিবম দীক্ষিত ও বাবা কৃষ্ণ কুমার দীক্ষিত বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে বের হতে পারেননি । গ্রামবাসীদের অভিযোগ যে ডিএম ওই গুন্ডাকে বাঁচাচ্ছেন। পুরো ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ী। কর্মকর্তারা টাকা নিয়েছেন । তাই জোর করে উচ্ছেদ অভিযানে ব্যাপারে অনড় ছিলেন জেলা শাসক ।
অন্যদিকে কানপুরের ডিএম নেহা জৈন বলেছেন যে জবরদখল সরাতে পুলিশসহ একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল । মহিলারা এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা লেকপালকেও ছুরি দিয়ে মারাত্মক আক্রমণ করেন। এরপর মা-মেয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান ।জানা গেছে,নিতার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল ।।