এইদিন আন্তর্জাতিক ডেস্ক,০৯ আগস্ট : গত বছর থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ মঠে বড়সড় যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে । ‘মিসেস গলফ’ (Ms Golf) নামে এক তরুনী কমপক্ষে ৯ জন ভিক্ষুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন । সেই মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও গোপনে তুলে রেখে ব্লাকমেল করে প্রায় ৩৮৫ মিলিয়ন বাট (প্রায় ১১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আদায় করেন । মঠের সম্মান রক্ষার্থে ওই বিপুল অর্থ দেওয়া হয় মঠের কোষাগার থেকেই । এই কেলেঙ্কারির কথা গোটা বিশ্বজুড়ে শোড়গোল ফেলে দেয় । এরপরেই নড়েচড়ে বসে চীনের প্রাচীন ও বিখ্যাত শাওলিন মঠ । কেলেঙ্কারির যাবতীয় কেন্দ্রবিন্দু স্মার্টফোন ব্যবহারে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করে করে মঠ কর্তৃপক্ষ । আর এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ন্যাস ছেড়ে গৃহী হয়ে গেলেন ৩০ জনেরও বেশি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী । তারা ইতিমধ্যে নবনিযুক্ত নিযুক্ত মঠাধ্যক্ষ শি ইয়েইনলকে শাপশাপান্ত করতে করতে মঠ ছেড়ে চলে গেছে বলে জানা গেছে ।
শাওলিন মঠের দুই দশকেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করা শি ইওংক্সিন । কিন্তু শি ইওংক্সিনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় । এরপর ৫৯ বছর বয়সী শি ইয়েইনলকে মঠাধ্যক্ষ করা হয় । শি ইয়েইনলে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই পাঁচটি বড় ধরনের সংস্কারের ঘোষণা করেন । তার মধ্যে রয়েছে — বাণিজ্যিক প্রদর্শন বন্ধ করা, উচ্চ ব্যয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা, মঠের দোকানপাট সরিয়ে ফেলা, সন্ন্যাসীদের চাষাবাদে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং আয়ের বণ্টন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা। তিনি অভিযোগ করেন, মঠের অনেক সন্ন্যাসী আধ্যাত্মিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ধ্যান ও মঠের কাজ যথাযথভাবে করছেন না । ধ্যানকক্ষে খাবার আনা এবং প্রার্থনার সময় পপ গান শোনানো হচ্ছে, যা শাওলিন মঠের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী ।
শি ইয়েইনল নিয়ম করেন,সন্ন্যাসীদের প্রতিদিন ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে সকালের প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করতে হবে, এরপর চাষাবাদ এবং মার্শাল আর্ট অনুশীলন বাধ্যতামূলক। মোবাইল ফোন কেন্দ্রীয় স্টোররুমে রেখে শুধুমাত্র ৩০ মিনিটের স্ক্রিন টাইমের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিনোদনের সব মাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, ‘বটম-টিয়ার এলিমিনেশন সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে কোনো সন্ন্যাসী তিন মাস পরপর মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে তাকে মঠ ছাড়তে হবে।
এদিকে এই কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অনেক সন্ন্যাসী ও কর্মচারী অসন্তুষ্ট হয়ে মঠ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । কেউ কেউ ইতিমধ্যে সন্ন্যাস ত্যাগ করে সংসার বসানোর পরিকল্পনা করছেন বলে খবর ।
উল্লেখ্য,শাওলিন মঠ শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং এর মার্শাল আর্ট ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও বিশ্বব্যাপী খ্যাত। ১৯৮২ সালে জেট লির অভিনীত ‘দ্য শাওলিন টেম্পল’ চলচ্চিত্রসহ অসংখ্য সিনেমা ও টিভি নাটকে এই মঠেত উল্লেখ রয়েছে।।