শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৮ জানুয়ারী : শিশুদের নিয়ে ৪ দিনের জন্য যোগাসন প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার কালুই গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট শিল্পপতি অসিত চ্যাটার্জি । গত ১৬ জানুয়ারী থেকে গ্রামের পারবারিক “তিনকন্যা পার্ক”-এ এই প্রতিযোগিতার আসর বসেছে । চলবে ১৯ জানুয়ারী পর্যন্ত । রাজ্যের ১৬ জেলা থেকে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২,০০০ জন করে প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন অসিতবাবু । ৬৩-তম ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট যোগাসন প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর ব্যানারে এই প্রতিযোগিতার পরিচালনায় রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট যোগা কালচার এসোসিয়েশন । আর ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন অসিত চ্যাটার্জি স্বয়ং । অর্থাৎ, পুরো প্রতিযোগিতা পরিচালনার খরচ তিনিই বহন করছেন । এই বিষয়ে অসিতবাবু বলেন,’বাচ্ছাদের খাওয়া দাওয়া আর একটা তাঁবুর জন্য খরচ আর কত হবে ? মেরেকেটে ২-৪ লাখ টাকা । আমার তো আর অনান্য শিল্পপতিদের মত পার্টি করে বা নেশা করে টাকা ওড়ানোর নেশা নেই,এটাই আমার নেশা ।’
প্রসঙ্গত,মন্তেশ্বর থানার কালুই গ্রামের বাসিন্দা অসিত চ্যাটার্জির শৈশবের জীবন কেটেছে চরম অভাবের মধ্যে । একমাত্র বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে তাঁর বাবাকে চরম সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল । অসিতবাবুর কথায়,’বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমার মা বলেছিলেন, “বাবা, যদি কোনো দিন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হও তাহলে গরীব অসহায় বাবা-মায়ের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো” । মায়ের এই নির্দেশ আজও আমি মেনে চলি ।’
জানা যায়,গ্রামে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ভাগ্যান্বেষে কলকাতায় চলে যান অসিত চ্যাটার্জি । প্রথমদিকে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন তিনি । দীর্ঘ পরিশ্রমের পর অবশেষে ভাগ্যলক্ষী সদয় হয় তার প্রতি । আজ রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হলেন অসিতবাবু । কিন্তু বিপুল টাকার মালিক হয়েও মাটির টান তিনি ভুলতে পারেননি । প্রসঙ্গত,মন্তেশ্বর থানার কালুই গ্রাম এক অর্থে অজপাড়া গ্রাম । অসিতবাবুর শৈশবের সময়ে গ্রামে পার্ক তো দুরের কথা ঠিমমত খেলার মাঠ পর্যন্ত ছিল না । ছিল না চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা । অসিতবাবু গ্রামের কচিকাঁচাদের খেলাধুলার জন্য বাবা-মায়ের স্মৃতিতে নিজের পৈতৃক খামারবাড়িতে নির্মাণ করেন তিনকন্যা পার্ক । ওই পার্কেই রয়েছে ভবন । সেখানে গ্রামবাসীদের জন্য প্রতিদিন হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপাথির চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে । এছাড়া প্রতিমাসের ১২ তারিখে গ্রামে এসে মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন অসিতবাবু । দুঃস্থ বাবা-মায়ের মেয়ের বিয়ে বা দুঃস্থ ব্রাহ্মণ পিতার সন্তানের উপনয়নের যাবতীয় খরচ তিনি বহন করেন ।
এছাড়া খেলাধুলার প্রতি শৈশব থেকেই ঝোঁক ছিল অসিতবাবুর । আর সেই সূত্রে বর্তমানে তিনি কলকাতার মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের সহ-সভাপতি পদে রয়েছে । খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণের জন্য সমাজ সেবার পাশাপাশি গ্রামে নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলারও আয়োজনও করেন তিনি । এই প্রকার সেবার মানসিকতার জন্য অসিত চ্যাটার্জিকে “মানবরত্ন” উপাধিতে সম্মানিত করা হয় ।।