শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৯ ডিসেম্বর : এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ও প্রান্তিক স্তরের কৃষকরা তিল তিল করে টাকা জমিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের জামনা সমবায় সমিতিতে । কিন্তু বিগত এক দশক ধরে তাঁরা নিজেদের জমানো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না । গ্রাহকদের অভিযোগ, টাকা তুলতে গেলেই বলা হচ্ছে সমবায়ের ভাঁড়ার শূণ্য,তাই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় । কিন্তু কয়েক’শ হতদরিদ্র মানুষের জমানো প্রায় এক কোটি টাকা কোথায় গেল ? স্বভাবতই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জামনা সমবায় সমিতিতে অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠছে । বুধবার ফের একবার টাকা ফেরতের দাবিতে সমবায়ে বিক্ষোভ দেখালেন বেশ কিছু গ্রাহক । বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক বৃদ্ধাকেও সামিল হতে দেখা গেছে । একদিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা আবাস প্লাস যোজনা প্রকল্পে শাসকদলের দূর্নীতি, তার উপর জামনা সমবায় সমিতিতে অর্থ তথরুপ মামলা নিয়ে ফের জলঘোলা হওয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নাজেহাল অবস্থা মন্তেশ্বরের শাসকদলের ।
জানা গেছে,এলাকায় সেভাবে ব্যাঙ্কের শাখা না থাকায় বামফ্রন্টের রাজত্বকালে মন্তেশ্বরের জামনা সমবায় সমিতিতে ব্যাঙ্কের মতই আর্থিক লেনদেনের সুবিধা গড়ে তোলা হয়েছিল । এলাকার ডজন খানেক গ্রামের মানুষ এখানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা জমা রাখতেন । কেউ কেউ মেয়ের বিয়ে বা ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য হাজার হাজার টাকা স্বায়ী আমানতও করেছিলেন । বামফ্রন্টের সময়ে সব কিছু ঠিকঠাক চললেও ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পর জামনা সমবায় সমিতিতে দুরবস্থা শুরু হয় বলে অভিযোগ ।
জামনা সমবায় সমিতির জনৈক গ্রাহক মাধব যশ বলেন,’এলাকার ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাহক এই সমবায়ে সেভিংস ও ফিক্স ডিপোজিট হিসাবে টাকা জমা রেখেছিলেন । সব মিলে এখনো প্রায় এক কোটি টাকা পাওনা আছি আমরা । কিন্তু ২০১১ সাল থেকে সেই টাকা আমরা পাচ্ছি না । আমরা টাকা তুলতে আসছি কিন্তু আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে । বলছে সমবায়ে টাকা নেই,কোথা থেকে দেবো ।’ তিনি বলেন, ‘এখন জানতে পারছি সমবায় চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে যে ধান কিনেছিল আমাদের জমানো টাকা ভেঙে তার দাম চাষিদের মেটানো হয়েছে । এই অবস্থায় আমরা আদপেই আর জমানো টাকা পাবো কিনা তা স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছে না ।’
জানা গেছে,বিভিন্ন খাতে ৫-৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কেউ কেউ ৫০ হাজার বা তার উর্ধে জামনা সমবায় সমিতিতে টাকা জমা রেখেছিলেন । কিন্তু প্রয়োজনের সময় টাকা তুলতে গেলেই তাঁদের টাকা না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় । ইতিপূর্বেও একাধিকবার টাকা ফেরতের দাবিতে সমবায়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন গ্রাহকরা । বুধবার তাঁরা ফের একদফা বিক্ষোভ দেখান । শুধু বিক্ষোভই নয়, সমবায়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে কর্মীদের বেশ কিছুক্ষণ আটকে রাখেন। খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ আসে । তখন পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন আমানতকারীরা । যদিও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে সমবায়ের কর্মীদের মুক্ত করে ।
এই বিষয়ে সমবায়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সুমন ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,’বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে ।’ অন্যদিকে বিক্ষোভকারী নন্নেহার বেগম,মমতাজ বিবিদের অভিযোগ,’সমবায় থেকে প্রতি বারেই টাকা ফেরতের আশ্বাস দিচ্ছে । কিন্তু বিগত ১৩ বছর ধরে আমাদের টাকা ফেরতের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে না ।’ তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,টাকা ফেরত না পেলে ফের বিক্ষোভ দেখাবেন তাঁরা ।।