এইদিন ওয়েবডেস্ক,গুরুগ্রাম,০৪ ডিসেম্বর : হরিয়ানার গ্যাংস্টার সন্দীপ গাদোলির এনকাউন্টার মামলার অভিযুক্ত ২৭ বছরের জনপ্রিয় মডেল দিব্যা পাহুজাকে গত ২ জানুয়ারী গুরুগ্রামের সিটি পয়েন্ট হোটেলে গুলি করে খুন করা হয়েছে । খুনের পর মৃতদেহটি চাদরে মুড়ে হোটেলের লবি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । এখনও পর্যন্ত গুরুগ্রাম পুলিশ এই খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা হল অভিজিৎ সিং (৫৬), হেমরাজ (২৮) এবং ওমপ্রকাশ (২৩) । তবে হত্যার পর হোটেল মালিক কোথায় ও কিভাবে লাশ ফেলে দিয়েছে তা জানা যায়নি । পাহুজার বোনের অভিযোগের ভিত্তিতে গুরুগ্রামের সেক্টর ১৪ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হরিয়ানার গ্যাংস্টার সন্দীপ গাদোলিকে ২০১৬ সালে মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে এনকাউন্টার করে পুলিশ । সেই ঘটনার ৮ আট বছর পরে,গ্যাংস্টার সন্দীপের মডেল বান্ধবী দিব্যা পাহুজাকে রহস্যজনকভাবে গুরুগ্রামের একটি হোটেলে খুন করা হল । এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করা হলেও মডেলের মৃত্যুর রহস্য এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি ।
প্রসঙ্গত,গুরুগ্রামের বলদেব নগরের বাসিন্দা দিব্যা পাহুজা একসময় হরিয়ানার নিহত গ্যাংস্টার সন্দীপ গাদোলির বান্ধবী ছিলেন। সন্দীপ গাদোলি ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী মুম্বাইয়ের আন্ধেরির একটি হোটেলে হরিয়ানা পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হন। কাকতালীয়ভাবে দিব্যাও সন্দীপের সঙ্গে একই হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। এনকাউন্টারের পর মুম্বাই পুলিশ তদন্ত করে দিব্যাকে মামলায় সাক্ষী করে। কিন্তু একই সময়ে দিব্যার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তিনি তার নিজের প্রেমিক অর্থাৎ সন্দীপ গাদোলি সম্পর্কে হরিয়ানা পুলিশকে তথ্য দিয়েছিলেন এবং সম্ভবত এখান থেকেই দিব্যার জীবনের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছিল ।
ধৃত অভিজিৎ সিং গুরুগ্রাম পুলিশকে জানিয়েছেন যে তাঁর কিছু অশ্লীল ছবি দিব্যা পাহুজার দখলে ছিল। এসব ছবি দিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতেন দিব্যা । সে প্রায়ই তার কাছ থেকে টাকা নিত। গত কয়েকদিন ধরে সে আরও টাকা দাবি করছিল। এরপর গত ২ জানুয়ারী অভিজিৎ সিং দিব্যাকে গুরুগ্রামের হোটেল সিটি পয়েন্টে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি তাকে তার ছবি মুছে দিতে বলেন। তার কাছে মোবাইলের পাসওয়ার্ড চাইলে দিব্যা দিতে অস্বীকার করেন । এতে খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অভিজিৎ । এর পর রেগে গিয়ে মডেল দিব্যা পাহুজাকে গুলি করে হত্যা করে সে ।
পুলিশ ধৃতদের জেরায় জানতে পেরেছে, দিব্যার মৃত্যুর পর অভিজিৎ সিং হোটেলের দুই কর্মচারী হেমরাজ ও ওম প্রকাশের সাহায্যে তার দেহ তাদের বিএমডব্লিউ গাড়িতে রাখে। এরপর সে তার দুই সঙ্গীকে ডেকে তার গাড়িটি থাকা লাশটি পাচার করার জন্য দেয় । হত্যার পর অভিজিৎ তার দুই কর্মচারীকে দিব্যার লাশ চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে যেতে বলেন। এর পরে হোটেল কর্মীরা দিব্যার দেহ একটি চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে যায়, যার একটি ভিডিওও প্রকাশিত হয়েছে ।
মডেল দিব্যা পাহুজার বিরুদ্ধে অভিযোগ,তিনি তার গ্যাংস্টার প্রেমিক সন্দীপ গাদোলিকে হানিট্র্যাপে ফাঁদে ফেলেন এবং পুলিশকে এনকাউন্টার করতে সাহায্য করেছিলেন । পাশাপাশি অভিজিতের কিছু অশ্লীল ছবি দিব্যা পাহুজার মোবাইলে ছিল বলে অভিযোগ। দিব্যা পাহুজা এই ছবিগুলি নিয়ে অভিজিতকে ব্ল্যাকমেইল করতেন, দিব্যা প্রায়ই অভিজিৎ সিংয়ের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি করতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠছে । ধৃত অভিজিৎ সিং ওই ছবি মুছে দেওয়ার জন্যি দিব্যা পাহুজাকে হোটেলে ডেকে আনেন । কিন্তু দিব্যা পাহুজা ফোনের পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় তিনি ছবি ডিলিট করতে সক্ষম হননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং ঝগড়ার মাঝেই অভিজিৎ দিব্যাকে গুলি করে হত্যা করে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ । হানিট্র্যাপে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতে গিয়েই দিব্যাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ।।